১২ জুলাই, ২০২০ ০৯:৩১ পিএম

করোনায় বিএসএমএমইউর স্পেশালাইজড হাসপাতালের নির্মাণকাজ অব্যাহত 

করোনায় বিএসএমএমইউর স্পেশালাইজড হাসপাতালের নির্মাণকাজ অব্যাহত 
নির্মাণাধীন হাসপাতাল পরিদর্শন করছেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া (সর্ববামে)

মেডিভয়েস রিপোর্ট: করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধীন দেশের প্রথম ১০০০ শয্যাবিশিষ্ট সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের নির্মাণকাজ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এগিয়ে চলেছে। 

কাজের অগ্রগতি দেখতে আজ রোববার (১২ জুলাই) সকালে বিশেষায়িত এই নির্মাণাধীন এ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। 

দক্ষিণ কোরিয়া, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগ ও অর্থায়নে এই হাসপাতালের অগ্রগতির বিষয়ে অবহিত করেন সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক এন্ড লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. জুলফিকার রহমান খান।

এ সময় সংশ্লিষ্ট কোরিয়ান প্রতিনিধি, প্রকৌশলী শ্রীকান্ত রায় উপস্থিত ছিলেন। বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের নির্মাণকাজ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিএসএমএমইউর উত্তর দিকে ১২ বিঘা জমির উপর এই হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণের উন্নত ও আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবার চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। এই বাস্তবতায় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ যথার্থ ও অত্যন্ত সময়োপযোগী। 

বাংলাদেশের জনসাধারণের বিপুল সমর্থন নিয়ে ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অব এক্সিলেন্সে পরিণত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসর সম্প্রসারণের জন্য ২০১২ সালে বর্তমান হাসপাতালের উত্তর পার্শ্বের ৩.৮ একর (প্রায় ১২ বিঘা) জমির বন্দোবস্ত করে দেন। দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের সহযোগিতায় এই ৩.৮ একর জমির উপর নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। 

জনগণের জন্য বিশেষায়িত সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ১৩৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বিএসএমএমইউর অধীনে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদিত হয়। এ হাসপাতাল নির্মাণে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার ইডিসিএফ’র অর্থায়নে ১০৪৭ কোটি টাকা ঋণ সহযোগিতা প্রদানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার মজুমদার জানিয়েছেন, প্রকল্পের আওতায় ১ম ফেইজে ২টি বেজমেন্টসহ ১১তলা হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে পরবর্তী ২তলা ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হবে। ১৩তলা হাসপাতাল ভবনটিতে থাকবে ১০০০ শয্যা। দেশের প্রথম সেন্টার বেইজড চিকিৎসা সেবা চালু হবে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটিতে। বাংলাদেশে এ ধরণের হাসপাতাল এই প্রথম। বর্তমানে সিঙ্গাপুর ও কোরিয়াসহ বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত দেশে সেন্টার বেইজড চিকিৎসা সেবা পদ্ধতি চালু আছে।

হাসপাতালে যেসব সেবাকেন্দ্র থাকবে 

নব নির্মিত হাসপাতাল ভবনের প্রথম ফেইজে যেসব সেবাকেন্দ্র থাকবে সেগুলো হলো: 

১. স্পেশালাইজড অটিজম সেন্টারসহ ম্যাটারনাল এন্ড চাইল্ড হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২. ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল কেয়ার সেন্টার, ৩. হেপাটোবিলিয়ারি ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সেন্টার, ৪. কার্ডিও ও সেরিব্রো ভাসকুলার সেন্টার, ৫. কিডনি সেন্টার। 

এছাড়া দ্বিতীয় ফেইজে থাকবে: 

১. রেসপিরেটরি মেডিসিন সেন্টার, ২. জেনারেল সার্জারি সেন্টার, ৩.  অফথালমোলজি/ডেন্টিস্ট্রি/ডার্মাটোলজি সেন্টার, ২. ফিজিক্যাল মেডিসিন/রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ইত্যাদি। 

সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল হবে একটি রোগী বান্ধব সুবজ হাসপাতাল। এতে থাকবে সানকেন গার্ডেন, রুফটপ গার্ডেন ও অন্যান্য পরিবশেবান্ধব সুযোগ-সুবিধা। সুপরিসর এই হাসপাতালে বর্হিবিভাগ ও ইনফো ডেস্ক থাকবে। হসপিটাল ইনফরমেশন সেন্টার চালু করার মাধ্যমে রোগী ও হাসপাতাল পরিচালনা হবে সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে।  

জনসাধারণ এখানে সাশ্রয়ীমূল্যে (Affordable Price) আন্তর্জাতিক মানের (State of Art) চিকিৎসাসেবা পাবেন। এর পাশাপাশি ভিভিআইপি ও ভিআইপি কেবিনও থাকবে হাসপাতালটিতে। এই হাসপাতালে কিডনি ও লিভার ট্রান্সপ্লান্টের সুবিধা থাকবে। 

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি স্বাস্থ্য সেবার এক নতুন দিগন্ত উম্মোচন করবে। বিশেষ করে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি উন্নত গবেষণা ও প্রশিক্ষণের দিগন্ত প্রসারিত হবে। সর্বাধুনিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ৮০ জন চিকিৎসক, ৩০ নার্স ও ১০ জন কর্মকর্তাকে কোরিয়ায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এখানে প্রতিদিন বহির্বিভাগে সেবা গ্রহণ করবে ২০০০-৪০০০ রোগী। আন্তঃবিভাগে প্রতিবছর প্রায় ২২০০০ রোগী চিকিৎসাসেবা পাবেন। 

সাশ্রয় হবে দেশের ৪শ’ কোটি টাকা

প্রতিবছর দেশের বাইরে চলে যাওয়া ৩০০-৪০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠিত সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটির মাধ্যমে ‘বিদেশ নয়, দেশেই সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা’ দেওয়া সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে বাংলার আপামর জনসাধারণ যাতে দেশেই সুলভে সর্বোচ্চ মাত্রার স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারেন সে লক্ষ্যেই ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত