‘ডেঙ্গু রোগীকে প্লাটিলেট দেওয়ার বিষয়টি নির্ধারণ করবেন চিকিৎসক’

মেডিভয়েস রিপোর্ট: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সাধারণ মানুষের ধারণা প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নামলে রক্ত দেয়া লাগে। এজন্য প্লাটিলেট কমলে তারা চিকিৎসককে রক্ত দেবার জন্য পীড়াপীড়ি করেন। ১০ হাজারের নিচে প্লাটিলেট নামলে রক্ত দিতে হবে কি-না, সেটি চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন।
আজ রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের এ-ব্লক মিলনায়তনে ‘ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট ডিলেমা’ শীর্ষক মাসিক সেন্ট্রাল সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
বিএসএমএমইউ ভিসি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাপ্তবয়স্ক ৭০০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৩ জন মারা গেছেন। শিশু বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ২০০ জন ডেঙ্গু রোগী, যারা সবাই সুস্থ হয়েছেন। আমাদের সেবার মান আগের থেকে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, যার প্রশংসা দেশের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা করছেন।’
তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করাই উত্তম। ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ডেঙ্গুর মশা এডিস নিধনে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, এনজিও কর্মী এবং রাজনৈতিক কর্মীদের সম্পৃক্ত করতে হবে। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বর্তমান সময়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপর গুরুত্ব দিয়ে কর্মসূচি পালন করা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা শুধু যে মেডিসিনি বিভাগের চিকিৎসকরা করবে এমন নয়, বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের এতে সম্পৃক্ত হতে হবে। সাধারণ মানুষ ধারণা করেন প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নামলে রক্ত দেয়া লাগে। এজন্য প্লাটিলেট কমলে তারা চিকিৎসককে রক্ত দেবার জন্য পীড়াপীড়ি করেন। ১০ হাজারের নিচে প্লাটিলেট নামলে রক্ত দিতে হবে কিনা, সেটি চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন। চিকিৎসকদের প্রতি অনুরোধ, কোন অবস্থায় চিকিৎসা প্রটোকল ভাঙা যাবে না। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টে যথাযথ সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে। কারণ ওভার ফ্লুইড এবং ফ্লুইডের অভাব রোগীর জন্য ক্ষতিকর। এমন কি রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।’
সেমিনারে বিএসএমএমইউর ভাইরোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেসা ‘ডাইনামেকিস অব ডেঙ্গু ভাইরাস ইন বাংলাদেশ এন্ড ডেঙ্গু ভ্যাকসিন আপডেটস’, শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. মাহবুব মোতানাব্বি ‘ক্লনিক্যাল প্রেসেন্টেশন এন্ড ম্যানেজমেন্ট অব ডেঙ্গু: প্যাডেয়াট্রিক অ্যাসপেক্ট’ ও ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফজলে রাব্বী চৌধুরী ‘ম্যানেজমেন্ট অব ডেঙ্গু ইনফেকশন: টিফস এন্ড ট্যাকটিস’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ মতামত প্রদান করেন।
সেমিনারে বলা হয়, ডেঙ্গু জ্বরের গুরুত্বপূর্ণ সময় যখন রোগীর জ্বর ছেড়ে যায়। জ্বর ছেড়ে যাবার পরবর্তী ৪৮-৭২ ঘণ্ট ডেঙ্গু রোগীর ক্রিটিক্যাল সময়। এটি ডেঙ্গু জ্বরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এ সময় রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। ডেঙ্গু জ্বরের বিপজ্জনক উপসর্গ হলো- অনবরত বমি হওয়া, রক্তক্ষরণ হওয়া, তীব্র দুর্বলতা অনুভব করা, তীব্র পেট ব্যথা, ফুসফুসো পানি জমা, তীব্র শ্বাসকষ্ট হওয়া। গর্ববতী মা, ক্যান্সার রোগী, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে দ্রুত ভর্তি করতে হবে।
ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নামলেও রত্ত পরিসঞ্চালনের কোনো প্রয়োজন নেই, সঞ্চালন করলে রক্ত (হোল ব্লাড) সঞ্চালন করাই শ্রেয়, প্লাটিলেট নয়। ডেঙ্গু জ্বরের রোগীর রক্তচাপ কমে গেলে, তা রেফার করা ঠিক নয়। ডেঙ্গু শক ৪-৬ ঘণ্টার মধ্যে ম্যানেজ করতে হয়। রক্তচাপ কমের রোগীকে রেফার করলে পথেই রোগী খারাপ হতে পারে। সুতরাং ডেঙ্গু শকের রোগীকে রেফার না করে ওই হাসপাতালেই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে আলাদা করে ডাব, পেপে পাতা, পেপে জুস, ড্রাগন ফল বেদানা ইত্যাদি খাওয়ার কোন প্রয়োজন নাই।
ডেঙ্গু রোগী ব্যবস্থাপনায় অনেক বেশী পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন নেই, সিবিসি টেস্টই যথেষ্ট। সিবিসি টেস্টের মধ্যে ডব্লিবিসি নিপ কাউন্ট এবং হেমাটোক্রিট কাউন্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের প্রতি বেশি যত্মশীল হতে হয়। কারণ শিশুদের শরীরে কোন সমস্যা দেখা দিলে তা স্পষ্ট করে বলতে পারে না। ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের বাইরে থেকে স্বাভাবিক মনে হলেও যেকোন সময় শিশুরা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে চলে যেতে পারে। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের যথাযথ মনিটরিং করতে হবে, যাতে কোন সমস্যা হলে দ্রুত ব্যবস্থাপনা করা যায়। ডেঙ্গু ভ্যাকসিন তিন ধরনের আছে। এটি ভ্রমণকারীদের জন্য অনুমোদিত। জনসাধারণের জন্য ভ্যাকসিন ব্যবহারের পূর্বে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, নার্সিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক, শিশু অনুষেদর ডিন অধ্যাপক ডা. রনজিৎ রঞ্জন রায়, মেডিকেল টেকোনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. দেবতোষ পাল, সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ্ সবুজ, মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাতিমা জোহরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সেন্ট্রাল সাব কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রেসপিরিটোরি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সম্প্রীতি ইসলাম। সেমিনারে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, কনসালটেন্ট, চিকিৎসক ও রেসিডেন্টগণ উপস্থিত ছিলেন।
-
২ ঘন্টা আগে
-
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
ডেঙ্গু রোগীর জীবন রক্ষায় এফেরেসিস প্লাটিলেট গুরুত্বপূর্ণ
বিএসএমএমইউতে বিশ্ব এফেরিসিস সচেতনতা দিবস পালিত
-
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
-
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
-
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
-
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
-
১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
-
১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩