০৭ এপ্রিল, ২০২৪ ০৫:২৮ পিএম
ভাতা ছাড়া দশ মাস

সহস্রাধিক প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকের বিবর্ণ ঈদ

সহস্রাধিক প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকের বিবর্ণ ঈদ
প্রতীকী ছবি

মেডিভয়েস রিপোর্ট: গত দশ মাস ধরে ভাতা পাচ্ছেন না বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন্সের (বিসিপিএস) প্রায় সাতশ’ এফসিপিএস প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক। চার মাস ভাতা নেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে অধ্যয়নরত রেসিডেন্ট ও নন-রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের।

সকল পেশার মানুষ যখন বেতন, বোনাস ও উৎসব ভাতায় ঈদ ও পহেলা বৈশাখের আনন্দে মেতে উঠার অপেক্ষায়, তখন ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঈদের দায়িত্ব পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন উচ্চতর কোর্সে অধ্যয়নরত এসব চিকিৎসক।    

জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত সহস্রাধিক রেসিডেন্ট, নন-রেসিডেন্ট ও এফসিপিএস প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক রয়েছেন, যারা কোনো ভাতা পাননি। এর মধ্যে এফসিপিএস যেসব প্রশিক্ষণার্থী ভাতা পাননি, তাদের এ বঞ্চনা গড়ালো দশ মাসে। আর অকস্মাৎ ঘোষণায় ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে অধ্যয়নরত রেসিডেন্ট ও নন-রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের ভাতা বন্ধ আছে গত চার মাস ধরে।

এ ছাড়া বিএসএমএমইউ অধিভুক্ত সরকারি ইনস্টিটিউটগুলোতে অধ্যয়নরত রেসিডেন্ট ও নন-রেসিডেন্ট চিকিৎসকরা বিগত ছয় মাসের বর্ধিত ভাতা পাচ্ছেন না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছিলেন, ঈদের আগে তাঁরা বর্ধিত ভাতা পাবেন। কিন্তু তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

ভাতা আদায়ে আন্দোলনের এক পর্যায়ে এফসিপিএসের ১৩শ’ প্রশিক্ষণার্থীকে ২৫ হাজার টাকা ধরে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়েছিল। সূত্রে জানা গেছে, তাদেরকে বিসিপিএস থেকে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে, ভাতা ২০ হাজারই আছে। ২৫ হাজার এখনো করেনি সরকার। এটা চূড়ান্ত করে কোনো প্রজ্ঞাপন আসেনি। সুতরাং তাদেরকে দেওয়া বাড়তি ৩০ হাজার টাকা পরবর্তী স্লটের সঙ্গে কেটে নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. জাবির হোসেন আজ রোববার (৭ এপ্রিল) দুপুরে মেডিভয়েসকে বলেন, অনেকে কোনো ভাতা পাননি। কেউ বর্ধিত ভাতা পাননি। কিন্তু ঈদের রোস্টারে ডিউটি করতে হচ্ছে তাদের। কোনো টাকাই পাননি এমন এফসিপিএস প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকের সংখ্যা সাতশ’।

ডা. জাবির হোসেন আরও জানান, ১১টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে রেসিডেন্ট ও নন-রেসিডেন্ট কোর্সের অধ্যয়নরতদের ভাতা বন্ধ হয়ে আছে। তাদের ভাতা চালু করার কোনো খবর নেই। নতুন করে তাদের ভাতা চালুর যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, তারও কোনো অগ্রগতি নেই।

পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সাত সদস্যের মধ্যে তিনজন এখনো ভাতা পাননি বলেও জানান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।

পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রশিক্ষণার্থী এক চিকিৎসক বলেন, ‘অবশেষে আমরা কিছু সংখ্যক রেসিডেন্ট, নন-রেসিডেন্ট ভাতা ছাড়াই ঈদ করবো। এ বিষয়ে আমাদের স্যার, ম্যাডামদের কিছুই করার নেই। আমাদের বিগত বছরের বকেয়া পরিশোধ তো দূর, সম্পূর্ণ ভাতাই বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের জায়গায় আপনাদের ছেলে-মেয়ে থাকলে কি করতেন? যেখানে প্রতিটা পেশার মানুষ ঈদে বোনাস পায়, সেখানে আমাদের ন্যায্য ভাতাই আপনারা বন্ধ করে দিলেন, কেমন করে নিজ প্রফেশনের জুনিয়রদের সাথে এসব করেন! আবার ঠিকই ঈদে ডিউটি করা লাগবে, এটা কেমন নিয়ম!’

চিকিৎসক হওয়া ভুল, কোর্সে ঢোকা আরেক ভুল

‘আমরা কেমন আছি, আর কীভাবেইবা ঈদ করবো, এইটা নিয়ে ভাবার অনেক সময় ছিল। কিন্তু আপনাদের জন্য আমরা খুব নগণ্য। তাই ভাবার প্রয়োজন বোধ করেননি। খুব আশাহত হই, এই প্রফেশনে আসাটা একটা ভুল, আর কোর্সে ঢোকা আরেক ভুল’—যোগ করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক চিকিৎসকের খেদোক্তি—‘আর কাকে ভরসা করবো? যাকেই ভরসা করি, বিশ্বাস করি, সেই তো বিশ্বাস ভঙ্গ করে। এই যে আমাদেরকে এইভাবে কষ্ট দিচ্ছেন! এই জুনিয়র চিকিৎসকদের হাত দিয়েই তো জীবনের শেষ চিকিৎসাটুকু পাবেন। এরা যদি ভালো বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠতে না পারে, তাহলে এর দায় কার?’

বিসিপিএস কর্তৃপক্ষকে পাওয়া যায়নি

এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন্স (বিসিপিএস) কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে বিসিপিএস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা ও সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামালকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।

বিএসএমএমইউর বক্তব্য

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান আজ রোববার (৭ এপ্রিল) বিকেলে মেডিভয়েসকে বলেন, ‘বিএসএমএমইউর পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) গৌর কুমার মিত্র বিষয়টি নিয়ে লেগে আছেন। পরশু ও গতকাল মন্ত্রণালয়ে গিয়েছেন। নতুন ভিসি স্যার দায়িত্ব গ্রহণের পর ভাতা বিষয়ে আমার কাছে জানতে চেয়েছেন। সুতরাং এটি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। ওরা নিঃসন্দেহে পাবে।’

ঈদের আগে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তা সঠিক বলতে পারবো না। পরিচালকের (অর্থ ও হিসাব) সঙ্গে কথা বলুন। তিনি যথাযথ তথ্য দিতে পারবেন। ঈদের আগে মাত্র দুটি কর্ম দিবস আছে। আগামীকাল আর পরশু ...।’ 

অগ্রগতি জানতে গৌর কুমার মিত্রকে বারবার চেষ্টা করেও ফোনে পাওয়া যায়নি। 

এএনএম/

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত