২৩ অক্টোবর, ২০২০ ০৮:১৪ পিএম

অধিক করোনা ঝুঁকিতে ডায়াবেটিস রোগীরা 

অধিক করোনা ঝুঁকিতে ডায়াবেটিস রোগীরা 

মেডিভয়েস রিপোর্ট: দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে একজন ডায়াবেটিস রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে করোনা পরবর্তী প্রতিক্রিয়া সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া সুস্থ হওয়ার পরেও শতকরা ৭৫ ভাগ রোগী ডায়াবেটিসজনিত দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। এই অবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীরা অধিক করোনা ঝুঁকিতে রয়েছেন।

আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা এলসেভিয়ার-এর জার্নালে প্রকাশিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও বিআইটিআইডি’র ‘ডায়াবেটিস অ্যান্ড মেটাবলিক সিনড্রোম: ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অ্যান্ড রিভিউস’ শীর্ষক যৌথ গবেষণা প্রবন্ধে এ দাবি করা হয়েছে।  

এতে বলা হয়, পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত প্রতি পাঁচ জনে একজন ডায়াবেটিস রোগী। তাঁদের মধ্যে পুরুষ এবং ৩১ থেকে ৫০ বছরের ডায়াবেটিস রোগীরা সবচেয়ে বেশি শারীরিক জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছেন। করোনা পরবর্তী প্রতিক্রিয়া সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে আক্রান্তদের মধ্যে। সুস্থ হয়ে ওঠার পর তাদের মধ্যে শতকরা ৭৫ ভাগ ডায়াবেটিসজনিত কোনও না কোনও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় ভুগছেন।

করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পরে অনেকে নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন দাবি করে বলা হয়, চট্টগ্রামে শতকরা এক ভাগ করোনা রোগী সুস্থ হয়ে ওঠার পর নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে এইচবিএওয়ানসি টেস্টের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা হয়েছে। করোনাত্তর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য অন্যান্য দেশেও পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ইতালি ও সিঙ্গাপুরে অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে দাবি করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য করোনায় আক্রান্ত ৪০ ভাগ ডায়াবেটিস রোগীর ইনসুলিনের মাত্রা তিনগুণ করতে হয়েছে। করোনা আক্রান্ত ডায়াবেটিস রোগীদের ৯০ ভাগেরই জ্বর, ৬০ ভাগের কফ ও কাশি এবং ৪৫ ভাগের শারীরিক ব্যথা হয়েছে। ৬০ ভাগের বেশি রোগীর ফেরিটিন ও ডি ডাইমারের পরিমাণ অধিক পাওয়া গেছে। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের মধ্যে উপসর্গবিহীন হওয়ার সংখ্যা কম। মাত্র ৪ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর কোনও উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা যায়নি। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নন এমন করোনা রোগীদের মধ্যে বেশি উপসর্গহীন হওয়ার মাত্রা বেশি দেখা গেছে। 

এ বিষয়ে গবেষকরা বলেন, আন্তর্জাতিকভাবেও ডায়াবেটিসকে করোনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের  প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ২০ ভাগ, যুক্তরাষ্ট্রে ১১ ভাগ এবং চীনে ১০ ভাগ করোনা রোগীর ডায়াবেটিস আছে। চট্টগ্রামে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে করোনার তীব্রতা, উপসর্গ এবং পরবর্তী অবস্থা নিয়ে  এই গবেষণাটি করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার চার সপ্তাহ পর রোগীদের মধ্যে পরিচালনা করা হয়। পৃথিবীতে প্রতি ১০ জনে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় এক কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। চট্টগ্রামে প্রায় সে সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। পৃথিবীতে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ অষ্টম। এ অবস্থায় ডায়াবেটিসের তীব্রতার কারণে করোনার সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক, প্রতিক্রিয়া, সুস্থ হতে জটিলতা ও চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা জরুরি বলেও মনে করেন গবেষকরা।

এছাড়াও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গবেষণায় তুরস্ক ও অন্যান্য দেশে করোনা প্রতিরোধে বিসিজি টিকার কার্যকারিতা দাবি করলেও বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে তার নিদর্শন পাওয়া যায়নি এবং করোনা আক্রান্ত ডায়াবেটিস রোগীদের ৮৭ ভাগেরই বিসিজি এবং প্রয়োজনীয় সব টিকা দেওয়া আছে বলেও দাবি করেছেন গবেষকরা। 

করোনা আক্রান্ত ডায়াবেটিস রোগীদের বিশেষ সুরক্ষা ও সতর্কতা প্রয়োজন এবং মহামারী পরবর্তী সময়ে নিয়মিত চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকা দরকার বলে মত দিয়েছেন তাঁরা।

চট্টগ্রামের ডিজিজ বায়োলজি অ্যান্ড মলিকুলার এপিডেমিওলজি রিসার্চ গ্রুপের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী ও ডা. আবদুর রব মাসুম, বিআইটিআইডি-এর ল্যাবপ্রধান ও অণুজীব বিজ্ঞানী ডা. শাকিল আহমেদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুব হাসান গবেষণায় অংশগ্রহণ করেছেন। এতে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে নেতৃত্ব দেন গবেষণা শিক্ষার্থী আসমা সালাউদ্দিন ও সাখাওয়াত হোসেন মিয়াজি।

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক