১০ মে, ২০২৫ ০৫:৩৭ পিএম

চিকিৎসা ব্যয় কমাতে চিকিৎসকদের ভূমিকা রাখতে হবে: বিএমইউ ভিসি

চিকিৎসা ব্যয় কমাতে চিকিৎসকদের ভূমিকা রাখতে হবে: বিএমইউ ভিসি
ছবি: সংগৃহীত

মেডিভয়েস রিপোর্ট: রোগীর চিকিৎসা ব্যয় কমাতে চিকিৎসকদের ভূমিকা রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। আজ শনিবার (১০ মে) বিএমইউর শহীদ ডা. মিল্টন হলে বিশ্ব লুপাস দিবস উপলক্ষে রিউমাটোলজি বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক শাহিনুল আলম বলেন, রোগীর ব্যক্তি পর্যায়ে স্বাস্থ্যখাতের মোট ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে প্রায় ৭৩ শতাংশে পৌঁছেছে। অথচ ২০৩০ সালের মধ্যে চিকিৎসা ব্যয়  প্রায় ৭০ শতাংশ বহন করবে সরকার এবং ৩০ শতাংশ ব্যয় রোগী বহন করবে—এমন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু রোগীর নিজস্ব ব্যয় কমার পরিবর্তে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অবস্থায় চিকিৎসার জন্য রোগীর নিজস্ব ব্যয় কমিয়ে আনা এখন সময়েরই দাবি।

তিনি বলেন, রোগীরা চিকিৎসার জন্য বেশিরভাগ অর্থ ব্যয় করেন ওষুধ ক্রয়ে। গাইডলাইন অনুসরণ ও প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা চালু করতে পারলে রোগীর ব্যক্তি পর্যায়ে এই ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব। চিকিৎসকরা রোগীদের প্রেসক্রিপশনে এমন ওষুধ লিখবেন, যা রোগীর জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয় ও সুলভমূল্যে পাওয়া যায়। আনরেজিস্টার্ড ওষুধ বা প্রোডাক্ট কোনোভাবেই প্রেসক্রিপশনে লেখা যাবে না।

বিএমইউর রিউমাটোলজি বিভাগের চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশনে রোগীর জন্য অতি প্রয়োজনীয় এবং স্বল্পমূল্যের ওষুধ লিখে থাকেন জানিয়ে তিনি বলেন, এটি হতে পারে সকল চিকিৎসকের জন্য দৃষ্টান্ত। এতে চিকিৎসার খরচ কমে আসবে। রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় কমাতে চিকিৎসকদের ভূমিকা রাখতে হবে।

ভিসি আরও বলেন, রিউমাটোলজি বিভাগে রয়েছে আন্তর্জাতিকমানের ফ্যাকাল্টি ও গবেষক। তারা চিকিৎসার জন্য গাইডলাইন তৈরি করেছেন। প্রকাশনায়ও তারা এগিয়ে রয়েছেন। এই বিভাগ চিকিৎসা শিক্ষা, গবেষণা ও সেবাসহ অনেক ক্ষেত্রেই রোল মডেল।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসিডেন্টদের বহির্বিভাগের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমে অধিকতর সম্পৃক্ত হওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন অধ্যাপক শাহিনুল আলম। এছাড়া সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে রিউমাটোলজি বিভাগের রোগী দেখার কার্যক্রম শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসকদের আহ্বান জানান তিনি।

বিএমইউর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ তার বক্তব্যে রোগীদের সুবিধার্থে রিউমাটোলজি বিভাগে টেলিমেডিসিন সেবা চালুর উপর গুরুত্বারোপ করেন।

সেমিনারের পূর্বে রিউমাটোলজি এবং শিশু বিভাগের উদ্যোগে ‘লুপাস কর দৃশ্যমান’ প্রতিপাদ্যে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়। পরবর্তীতে সি ব্লকে আরেকটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে বলা হয়, লুপাস হলো বিশ্বের অন্যতম রহস্যময় এক রোগ, যা মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি সাধন করতে পারে। এটি সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই। এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিই রোগীদের সঠিক সহায়তা করতে পারে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। লুপাস একটি গ্রিক শব্দ যার অর্থ নেকড়ে। যেহেতু এই রোগের আক্রমণ অনেকটা নেকড়ের আক্রমণের মতো আকস্মিক, তাই একে লুপাস বলা হয়। আজ পর্যন্ত এই রোগের সঠিক কোনও কারণ সম্পূর্ণ জানা যায়নি।

বিশ্বে ৫০ লাখ লুপাস আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। এ রোগ প্রতি এক লাখে ২০ থেকে ১৫০ জনের হতে পারে। শতকরা ৯০ ভাগ লুপাস রোগী কম বয়সী নারী। ছেলেদের এই রোগের প্রকোপ মেয়েদের চেয়ে অনেক কম। লুপাসের সাধারণ উপসর্গগুলো হলো—চুল পড়া, মাথা ব্যথা, নাক ও গালের ওপর প্রজাপতির পাখার মত লাল চাকা, চরম ক্লান্তি বা অবসাদ, জ্বর, মুখে বা নাকে ঘা, গিরায় ব্যথা বা ফোলা, অস্বাভাবিক রক্ত জমাট, রক্তশূন্যতা, বুকের বা গভীর নিশ্বাসের সময় ব্যাথা, রোদ বা আলোয় শরীরের চামড়ায় প্রভাব বা জ্বালাপোড়া, আঙ্গুল সাদা বা নীলাভ হয়ে যাওয়া এবং হাত, পা ও চোখের চারপাশে ফোলা ইত্যাদি। এই রোগ হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। মানুষের বিভিন্ন অঙ্গ আক্রান্ত হয়। এমনকি ব্রেন, হার্ট, কিডনি, চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

অনুষ্ঠানে বিএমইউর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. শামীম আহমেদ, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, রিউমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক  ডা. মো. আবু শাহীন, অধ্যাপক ডা. মিনহাজ রহিম চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, শিশু বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মানিক কুমার তালুকদার, অধ্যাপক ডা. মো. ইমনুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এমআই/এনএআর/

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত