০৯ অগাস্ট, ২০২৩ ০৪:৪১ পিএম

অগ্রজদের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ৪১তম বিসিএসে স্বাস্থ্যে প্রথম ডা. শাহাদাত

অগ্রজদের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ৪১তম বিসিএসে স্বাস্থ্যে প্রথম ডা. শাহাদাত
ডা. মো. শাহাদাত হোসাইন সরকার। ছবি: মেডিভয়েস

বিসিএস একটি দীর্ঘসূত্রতার বিষয়, তাই প্রথমেই এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ভালো। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পর অন্যান্য কাজে ভালোভাবে মনোযোগ দেওয়া যায় বলে জানিয়েছেন ৪১তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে প্রথম স্থান অর্জনকারী ডা. মো. শাহাদাত হোসাইন সরকার।

তার মতে, এমবিবিএসসের পর উচ্চতর কোর্সের পরীক্ষাগুলো বছরে একবার বা দুইবার দেওয়া যায়, এখানে বয়সের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। কিন্তু বিসিএস নির্দিষ্ট বয়সের পর আর দেওয়া সম্ভব নয়। তাই তিনি বিসিএসকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

ডা. শাহাদাত হোসাইন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী। মেডিকেলে পড়াশোনার সময়ে স্বপ্ন দেখেন বিসিএস ক্যাডার হবেন, সেই স্বপ্ন লালন করে ৪১তম বিসিএসে সাফল্যের চূড়ায় এসেছেন তিনি। গত ৮ আগস্ট বিকেলে কুমিল্লার মেধাবী এ সন্তানের সঙ্গে কথা হয় মেডিভয়েস প্রতিবেদকের। আলাপচারিতায় উঠে আসে চিকিৎসা পেশা ঘিরে তাঁর পরিকল্পনাসহ ঈর্ষণীয় সাফল্যের নেপথ্য কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: সাখাওয়াত হোসাইন ও ক্যামেরায় ছিলেন ওমর ফারুক ফাহিম।

মেডিভয়েস: ফলাফলের পর আপনার অনুভূতি কেমন?

ডা. শাহাদাত হোসাইন: আলহামদুলিল্লাহ। এটি একটি খুশির খবর। প্রথমেই আমার রোল নাম্বার দেখতে পেয়ে মা-বাবাকে জানালাম। তারা অনেক খুশি, আমার শিক্ষকরাও অনেক খুশি হয়েছেন। তাদের মুখে হাসি দেখে আমিও খুশি। মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা। সবার দোয়া ও পরিশ্রমের ফলে আল্লাহ আমাকে এ ফলাফল দিয়েছেন। প্রথম হবো, কখনও ভাবিনি। তবে ইচ্ছা ছিল স্বাস্থ্য ক্যাডারে ভালো ফলাফল করবো।

মেডিভয়েস: কোন অনুপ্রেরণায় এ পর্যন্ত আসা?

ডা. শাহাদাত হোসাইন: ছোটবেলা থেকেই মা-বাবা স্বপ্ন দেখাতো চিকিৎসক হওয়ার জন্য। আমার জীবনে মা-বাবার অবদান অনেক বেশি। তাদের অনুপ্রেরণাতে মেডিকেলে আসা। এ ছাড়া  স্কুল, কলেজ এবং মেডিকেলের সম্মানিত শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা ছিল। সিনিয়রদের বিসিএসের প্রস্তুতি এবং সাফল্য দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। সেই সঙ্গে বন্ধুদের সাথে বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে অনুপ্রাণিত হয়েছি।

মেডিভয়েস: এমবিবিএসের পর উচ্চতর কোর্স, নাকি বিসিএস?

ডা. শাহাদাত হোসাইন: এক্ষেত্রে প্রত্যেকের আলাদা আলাদা চিন্তা থাকে। কেউ বিদেশ যেতে পছন্দ করে, কেউ দেশে থাকতে পছন্দ করে। আমাদের শিক্ষকদের পরামর্শ ছিলো, সরকারি মেডিকেলে চাকরি করতে চাইলে বিসিএস দেওয়া লাগবে। বিসিএস একটা বয়সসীমার পর আর দেওয়া যায় না এবং উচ্চতর কোর্সের পরীক্ষা পরবর্তী সময়েও দেওয়া যায়। আর বিসিএস একটি দীর্ঘসূত্রিতা, তা আগেই শেষ করতে পারলে ভালো। পরে অন্যান্য কাজে ভালোভাবে মনোযোগ দেওয়া যায়। আর উচ্চতর কোর্সের পরীক্ষাগুলো বছরে একবার বা দুইবার দেওয়া যায়, এখানে বয়সের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। তাই সম্মানিত শিক্ষকদের মতামত অনুযায়ী আমি বিসিএসকে প্রাধান্য দিয়েছি।

মেডিভয়েস: এমবিবিএসের পর চিকিৎসকদের বিসিএস ক্যাডার হতে চ্যালেঞ্জ কী কী?

ডা. শাহাদাত হোসাইন: এমবিবিএস শেষে একটা বিসিএসের জন্য চার-পাঁচ বছর অতিবাহিত করা এবং এসময় পারিবারিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা পাওয়া সবার জন্য সহজ নয়। তা ছাড়া পারিপার্শ্বিক অনেক চাপ থাকে। যেমন-পড়াশোনা, অর্থনৈতিক ও উচ্চতর ডিগ্রির চাপ। সেইসঙ্গে এতো দিন ধৈর্য ধরে পরিশ্রম করাও অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকে একাডেমিক পড়াকে কম গুরুত্ব দিয়ে বিসিএসের পড়াশোনাটা বেশি গুরুত্ব দেয়, কিন্তু মেডিকেলের কোনো পড়াকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। পুরো সময়টাতেই মনোযোগ দিতে হয় পড়াশোনার দিকে। এজন্য মেডিকেল শিক্ষার্থীরা বিসিএসের প্রস্তুতি আগে থেকে নিতে পারে না, এটি বড় একটা প্রতিবন্ধকতা।

মেডিভয়েস: যেসব চিকিৎসকরা চাকরির পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে চায়, তাদের জন্য করণীয় কী?

ডা. শাহাদাত হোসাইন: যারা চাকরির পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে চায়, তাদের জন্য আমার পরামর্শ হলো পড়াশোনা নিয়মিত চালিয়ে যাওয়া। আর এখানে দীর্ঘ মেয়াদী একটা সময় নিতে হয়। জেনারেল বিসিএস শেষ হতে অনেক বছর সময় লাগে, আর স্পেশাল বিসিএস এক বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। জেনারেল বিসিএসে প্রিলি, ভাইভা, রিটেন সবমিলিয়ে দুই, তিন বা চার বছরের মতো একটা সময় লাগে। রুটিন করে প্রতিদিন কিছু না কিছু পড়তে হবে। যেমন-টার্গেট করে এক সপ্তাহে আমি এটা শেষ করবো, অন্য সপ্তাহে আরেকটা। এতে চাকরিজীবীদের জন্য সহজ হবে বলে মনে করি।

মেডিভয়েস: বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি ও কৌশল সম্পর্কে জানতে চাই।

ডা. শাহাদাত হোসাইন: শিক্ষাজীবন থেকে আমি বিসিএসের স্বপ্ন দেখতাম, তখন আমি পড়াশোনার পাশাপাশি জাতীয় পত্রিকা পড়তাম। টেলিভিশনের নিউজ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন খবর রাখতাম। এর সাথে কাজী নজরুল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র, বঙ্গিমচন্দ্রসহ বিভিন্ন বিখ্যাত সাহিত্যিকদের লেখা গল্প এবং উপন্যাস পড়তাম। আর আমি ব্যক্তিগতভাবে গণিত টিউশনি করাতাম, যেটা আমার বিসিএস প্রস্তুতি নিতে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে। আর টিউশনির অনেক উপকারিতা আছে, এতে অভিজ্ঞতা অর্জন হয়। আর মাধ্যমিকের বাংলা, ইংরেজি ইত্যাদি টিউশনি করালে বিসিএসের প্রস্তুতিতে অনেকটা এগিয়ে থাকা যায়।

মেডিভয়েস: অন্য ক্যাডারে না গিয়ে স্বাস্থ্য ক্যাডার কেনো পছন্দ করলেন?

ডা. শাহাদাত হোসাইন: দেশকে সেবা দেওয়ার তীব্র ইচ্ছা ও আকাঙক্ষা নিয়ে মেডিকেলে এসেছি, সেই ইচ্ছাতেই আমি একনিষ্ঠ থাকতে চেয়েছি। সেই অনুযায়ী স্বাস্থ্য ক্যাডারকেই প্রথমে পছন্দ করেছি। অনেকে পুলিশ কিংবা প্রশাসনে যেতে চান, এটা যার যার ব্যক্তিগত পছন্দ, আমি স্বাস্থ্য বাদ দিয়ে অন্য কোনো কর্মক্ষেত্রে যেতে চাই না এবং আপাতত ইচ্ছাও নেই।

ছোটবেলা যখন গ্রামে থাকতাম, তখন দেখতাম বাংলাদেশের গ্রামে সবসময় চিকিৎসক পাওয়া যায় না। উপজেলা পর্যায়ে যেতে যেতে রোগীদের অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আর বাংলাদেশে জনসংখ্যা অনুপাতে চিকিৎসক সংখ্যা অনেক কম। তখন থেকেই মানুষকে সেবা দেওয়ার ইচ্ছা জাগ্রত হয়। আর চিকিৎসকরা মানুষের সরাসরি সেবা করতে পারেন। আর অন্যক্ষেত্রে এটা সবসময় সম্ভব হয়ে ওঠে না, এজন্য আমি চিকিৎসা পেশাকে বেছে নিয়েছি এবং মানুষকে কাছে থেকে সেবা দিতে পারবো।

মেডিভয়েস: আপনার শিক্ষা জীবন নিয়ে বলুন। জন্ম ও বেড়ে উঠা?

ডা. শাহাদাত হোসাইন: গোমতী নদীর তীরে অবস্থিত কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার বারুর গ্রামে আমার জন্ম। সেখানেই প্রাথমিকভাবে আমার বেড়ে ওঠা। পরবর্তীতে কুমিল্লার মুরাদনগরে আমার পড়াশোনা শুরু হয়। কুমিল্লার ইবনে তাইমিয়্যা স্কুল থেকে এসএসসি, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি। এরপর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ৫২তম ব্যাচে ভর্তি হয়ে এমবিবিএস পাস করি। আর বিসিএসের প্রস্তুতির পাশাপাশি রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরোসার্জারিতে পিজিটির ছয় মাসের একটি কোর্স সম্পন্ন করেছি।

মেডিভয়েস: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাই।

ডা. শাহাদাত হোসাইন: ভবিষ্যতে নিউরো সার্জারিতে ক্যারিয়ার করার ইচ্ছা আছে। আমি যখন ইন্টার্ন করেছি, তখন নিউরো সার্জারি বিষয়টা অনেক ভালো লাগতো। আমার স্বপ্ন একজন ভালো এবং অভিজ্ঞ নিউরো সার্জন হওয়ার ইচ্ছা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব নতুন নতুন টেকনিক আবিষ্কার হচ্ছে এবং অপারেশন প্রক্রিয়া সহজ হচ্ছে, সেসব বিষয়গুলো রপ্ত করা। সেইসঙ্গে মানুষের সেবা করা।

মেডিভয়েস: আপনাকে যেখানে দায়িত্ব দেওয়া হবে, সেখানে কাজ করতে ইচ্ছুক কিনা?

ডা. শাহাদাত হোসাইন: আমাকে যেখানে দায়িত্ব দেওয়া হবে, সেখানেই দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত। কারণ বিসিএস আবেদন ফরমে একটি শর্ত থাকে, আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং যেকোনো প্রান্তে দায়িত্ব দেওয়া হলে পালন করতে হবে। সৎ এবং নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করবো।

এসএএইচ/এএইচ/

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : ৪১তম বিসিএস
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক