জাতীয় পর্যায়ে আরও বেশি অবদান রাখার অঙ্গীকার ঢামেক নতুন অধ্যক্ষের
মুন্নাফ রশিদ: দেশের চিকিৎসাবিদ্যায় সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা মেডিকেল কলেজের নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা। দীর্ঘ প্রায় ২৮ বছরের কর্মজীবনের ১২ বছরের বেশি সময় পার করেছেন ঢাকা মেডিকেলে। এই বিদ্যাপিঠেই হয়েছেন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর থেকে প্রফেসর।
মাঝখানে স্বল্প সময়ের জন্য রাজধানীর মুগদা মেডিকেলের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর প্রতিষ্ঠানটিতে এবার ফিরছেন বড় দায়িত্ব নিয়ে। মেডিকেলের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপিঠে তার কর্মপরিকল্পনা, চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে মেডিভয়েসের সাথে কথা হয় এ মেডিসিন বিশেষজ্ঞের।
মেডিভয়েসকে তিনি বলেন, ‘আমার প্রাথমিক পরিকল্পনা থাকবে শিক্ষার্থীদের ঘিরে। শিক্ষার পরিবেশটাকে আরও সমৃদ্ধ করে এবং শিক্ষার মানকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করে কিভাবে জাতীয় পর্যায়ে আরও বেশি অবদান রাখা যায় সেটিই হবে আমার প্রাথমিক লক্ষ্য।
১৯৯০ সালে এমবিবিএস পরীক্ষায় প্রথম হওয়া অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা বর্তমানে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়নস এন্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) একজন নির্বাচিত কাউন্সিলর। এছাড়া বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্স কাউন্সিলের (বিএমআরসি) ট্রেজারার এবং বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক।
ঢামেকের অধ্যক্ষ হিসেবে অনুভূতি
অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা বলেন, করোনার এই দুঃসময়ে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে মুগদা মেডিকেল কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছি। অধ্যক্ষ হওয়ার অনুভূতি আগেই শেষ হয়েছে। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ যেহেতু দেশের সর্বোচ্চ মেডিকেল বিদ্যাপিঠ এবং দেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা রয়েছে এখানে। সুতরাং তাদেরকে শিক্ষাদানের মাধ্যমে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করবো।
ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করা নিজের সবচেয়ে পছন্দের কাজ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি সবসয় শিক্ষার্থীদের সাথে থাকতে পাছন্দ করি।’
ঢমেকের নতুন এ অধ্যক্ষ বলেন, ঢাকা মেডিকেল আমার পুরাতন কর্মস্থল। এখানে আবার ফিরে এসেছি এবং বড় দায়িত্ব নিয়ে। মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে এবং মতামত দেয়ার ক্ষেত্রে এ অবস্থান থেকে যেহেতু সুযোগ থাকবে সেহেতু আমি সেটাকে আরও দৃঢ় করতে পারবো। সেই দিক থেকে আমি মনে করি নিজেকে আরও দায়িত্ববান হিসেবে তৈরি করতে পারবো। জাতীয় পর্যায়ে আরও বেশি অবদান রাখতে পারবো।
পরিকল্পনা
অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা বলেন, ঢাকা মেডিকেল সবসময় শিক্ষার্থীবান্ধব একটি প্রতিষ্ঠান। যেখানে শিক্ষার পরিবেশ সর্বদা বিরাজমান। এখানে আন্ডারগ্রাজুয়েট, এমবিবিএস এবং পোস্ট গ্রাজুয়েট পড়াশোনা আছে। পাশাপাশি রোগী দেখার বিষয়টিও আছে।
সুতরাং আমার প্রাথামিক পরিকল্পনা শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধাগুলো বৃদ্ধি করা। এখানে যা আছে সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে তা উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় এবং শিক্ষার মানকে কিভাবে আন্তর্জাতিক মানে উন্নিত করা যায় সেটি আমার প্রাথমিক পরিকল্পনায় রয়েছে। এছাড়া শিক্ষার পরিবেশটাকে আরও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্য থাকবে আমার।
করোনা মোকাবিলায় উদ্যোগ
করোনার শুরু থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে টিম ভিত্তিক কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞার। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ে অর্থাৎ ন্যাশনাল গাইড লাইন তৈরির কমিটিতেও কাজ করেছেন তিনি। পাশাপাশি অধ্যক্ষ হিসেবে মুগদা মেডিকেলে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।
ডা. টিটো মিঞা বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ একটি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল। করোনার এই সংকট মোকাবিলায় শুরু থেকেই এখানে যারা ফ্রন্টলাইনে কাজ করছেন তাদেরকে আরও উজ্জীবিত রেখে কিভাবে স্বচ্ছ সেবা দেওয়া যায়, সম্মিলিতভাবে সেই উদ্যোগটিই প্রথমে নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, যেহেতু ঢাকা মেডিকেলের শিক্ষক থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই অন্যান্য মেডিকেলের তুলনায় অনেক বেশি অভিজ্ঞ। সেহেতু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বয়ে আশা করছি সমস্যাগুলো আরও দ্রুত সমাধান করা যাবে।
করোনা মহামারী রোধে স্বাস্থ্যখাতে যখন যেটা প্রয়োজন তখন সেটা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে ডা. টিটো মিঞা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্যখাতের জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সুতরাং সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আমরা অবশ্যই তা সমাধান করতে পারবো।
পড়াশোনায় হাতে খড়ি
জন্ম স্থান সুনামগঞ্জ থেকে ১৯৮১ সালে এসএসসি পাস করে উচ্চ মাধ্যমিকে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন তিনি। এরপর ১৯৮৩ সলে এইচএসসি পাসের পর সে বছরই ভর্তি পরীক্ষায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে উত্তীর্ণ হন তিনি। পরে তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজেই ভর্তি হন।
১৯৯০ সালে এমবিবিএস পরীক্ষায় গোল্ড মেডেল পেয়ে ডা. টিটো মিঞা সারাদেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তখন দেশে মূলত চারটি মেডিকেল কলেজ ছিল। ঢাকা মেডিকল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ এবং বরিশাল মেডিকেল কলেজ।
এরপর ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়নস এন্ড সার্জনস (বিসিপিএস) থেকে ইন্টার্নাল মেডিসিনে মেডিসিন স্পেশালিস্ট হিসেবে এফসিপিএস পাস করেন ডা. টিটো মিঞা।
কর্মজীবন
১৯৯৩ সালে ১১তম বিসিএসের মাধ্যমে চাকরি জীবন শুরু ডা. টিটো মিঞার। প্রথমেই তিনি নিজের উপজেলা ধরমপাশায় এক বছর কাজ করেন। অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্টার এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার হিসেবে এক বছর কাজ করেছেন ডা. টিটো মিঞা।
পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ২০০৮ সালে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে যুক্ত হন তিনি। এরপর এখানেই কেটে গেছে কর্মজীবনের ১২ বছর। ঢাকা মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর এবং অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হওয়ার ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে প্রফেসর হন তিনি। ২০১৬ সালে ঢাকা মেডিকেলেই প্রফেসর কনফার্ম করেন ডা. টিটো মিঞা।
২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগেই প্রফেসর হিসেবে কর্মরত ছিলেন ডা. টিটো মিঞা। এরপর মে মাসের ২৩ তারিখ অধ্যক্ষ হিসেবে মুগদা মেডিকেল কলেজে যুক্ত হন এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। সেখান থেকে সর্বশেষ ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা।
পারিবারিক জীবন
অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞার সহধর্মীনি ডা. ইফফাত আরা সামসাদও একজন চিকিৎসক। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের পেডিয়াট্রিক বিভাগের প্রফেসর হিসেবে কর্মরত আছেন।
সফল এই চিকিৎসক দম্পত্তির ঘরে রয়েছে চারটি সন্তান। চারজনই মেয়ে। বড় মেয়ে কুমিল্লা মেডিকেলে চতুর্থ বর্ষে ফাইনাল পরীক্ষার্থী। পরের জন বুয়েটে আর্কিটেকচারে দ্বিতীয় বর্ষে। তৃতীয় মেয়ে এ-লেভেলে এবং ছোট মেয়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ছে।
অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা তার বাবা-মাসহ ছেলে মেয়েদের নিয়ে ঢাকাতেই বসবাস করছেন।
-
০১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
-
০৯ নভেম্বর, ২০২৩
-
১৬ অক্টোবর, ২০২৩
-
২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
-
৩১ অগাস্ট, ২০২৩
-
২২ জুন, ২০২৩
-
০২ জুন, ২০২৩
-
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩