০৯ মে, ২০২৫ ০৩:১৫ পিএম

বিশ্বের শীর্ষ ১০০ স্বাস্থ্য প্রভাবকের তালিকায় ডা. তাহমিদ আহমেদ

বিশ্বের শীর্ষ ১০০ স্বাস্থ্য প্রভাবকের তালিকায় ডা. তাহমিদ আহমেদ
ছবি: সংগৃহীত

মেডিভয়েস রিপোর্ট: টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বস্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় উঠে এসেছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ। মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং সীমিত সম্পদের কার্যকর ও প্রমাণভিত্তিক স্বাস্থ্য সমাধানে অগ্রণী ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালের ‘টাইম১০০ হেলথ’ তালিকায় ডা. তাহমিদকে অন্তর্ভুক্ত করেছে ম্যাগাজিনটি।

বৃহস্পতিবার (৮ মে) এক বিজ্ঞপ্তিতে আইসিডিডিআর,বি এই তথ্য জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিশ্বস্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ জন ব্যক্তিকে স্বীকৃতি জানাতে টাইম ম্যাগাজিন তাদের বার্ষিক ‘টাইম১০০ হেলথ ২০২৫’ তালিকায় আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ-কে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই স্বীকৃতি ডা. তাহমিদের মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং সীমিত সম্পদে কার্যকর ও প্রমাণভিত্তিক স্বাস্থ্য সমাধান তৈরিতে অগ্রণী অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ। তার নেতৃত্বে আইসিডিডিআর,বি আধুনিক গবেষণা ও জীবনরক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে।’

এতে আরও জানানো হয়, ডা. তাহমিদ আগামী ১৩ মে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য ‘টাইম১০০ ইমপ্যাক্ট ডিনার: দ্য লিডারস শেইপিং দ্য ফিউচার অব হেলথ’ অনুষ্ঠানে অন্যান্য সম্মানিতদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করবেন। সেখানে তিনি একটি অনুপ্রেরণাদায়ক সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেবেন, যা টাইমের একটি ঐতিহ্য—বিশ্ব স্বাস্থ্যখাতে ভবিষ্যতের পথনির্দেশক কণ্ঠগুলোর উপর আলোকপাত করবে। তার বক্তব্য টাইমের সম্পাদকীয় ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হবে।

আইসিডিডিআর,বির ভাষ্য, ডা. তাহমিদ আহমেদের এই স্বীকৃতি শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত কৃতিত্বের স্বীকৃতি নয়, বরং এটি বাংলাদেশের তরুণ বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস—যারা অধ্যবসায়, নিষ্ঠা ও গভীর আন্তরিকতার মাধ্যমে বৈশ্বিক মঞ্চে স্থান করে নিতে পারেন।

এ প্রসঙ্গে ডা. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘টাইমের ২০২৫ সালের হেলথ১০০ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া অনেক সম্মানের বিষয়। এই স্বীকৃতি শুধু আমার নয়—এটি আইসিডিডিআর,বির প্রতিভাবান বিজ্ঞানী, কর্মী, আমাদের বৈশ্বিক অংশীদার এবং যেসব সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমরা কাজ করি, তাদের সকলের। টাইমের এই আলোকপাতের জন্য আমি কৃতজ্ঞ, যা অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই এবং জীবনমান উন্নয়নকারী বিজ্ঞানে বিনিয়োগের গুরুত্বকে তুলে ধরবে—যুদ্ধ, সংঘাত বা বিভাজনে নয়, বরং সমতা, স্বাস্থ্য এবং মানব মর্যাদায়।’

উল্লেখ্য, ডা. তাহমিদ আহমেদ গত তিন দশক ধরে শিশুদের অপুষ্টি, শিশু যক্ষ্মা এবং ডায়রিয়াজনিত রোগের ব্যবস্থাপনা সহজ ও কার্যকর করার লক্ষ্যে কাজ করে আসছেন। তিনি বাংলাদেশ পরিবেশজনিত অন্ত্রের অকার্যকারিতা বা বাংলাদেশ এনভাইরনমেন্টাল এনটেরিক ডিসফাংশন (বিড) নামক একটি গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই গবেষণার লক্ষ্য পরিবেশজনিত অন্ত্রের অসংগতির অ-আক্রমণাত্মক বায়োমার্কার খুঁজে বের করা—যা শিশুদের বামনত্ব বা শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে বাধার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইসে অবস্থিত ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ড. জেফ্রি গর্ডনের সঙ্গে যৌথভাবে মাইক্রোবায়োটা ডিরেকটেড কমপ্লিমেন্টারি ফুড (এমডিএসএফ) উদ্ভাবন করেন—যা শিশুদের অপুষ্টি কমাতে সাহায্য করার জন্য নতুনভাবে প্রস্তুতকৃত একটি খাবারের পদ্ধতি। এই আবিষ্কারটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্সে ২০১৯ সালের অন্যতম উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বর্তমানে এই গবেষণা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় অব্যাহত রয়েছে।

ডা. আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি’স হাই স্কুল এবং নটরডেম কলেজে। এরপর তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ঢাকা শিশু হাসপাতালে আবাসিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন এবং পরে জাপানের সুকুবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। আইসিডিডিআ,বিতে তিনি গত ৩০ বছর ধরে কাজ করে আসছেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পুষ্টি নির্দেশনা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ পরামর্শক দলের সদস্য হিসেবে শিশুদের তীব্র অপুষ্টি ব্যবস্থাপনার বৈশ্বিক নির্দেশনা সংশোধন করেন। এছাড়া তিনি বিশ্বব্যাপী কলেরা কেস কন্ট্রোল টাস্ক ফোর্সকে (জিটিএফসিসি) শিশুদের কলেরা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

এ ছাড়া ড. আহমেদ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি এজেন্সির (আইএইএ) গবেষণা, নীতিমালা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে পুষ্টি বিষয়ক কার্যক্রমে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন।

তিনি ৪০০টির বেশি গবেষণাপত্র ও বইয়ের অধ্যায় আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ করেছেন। তিনি ৫৪টি কমনওয়েলথ দেশের শিশু হজম ও পুষ্টিবিদ্যার পেশাজীবীদের একটি সংস্থা কমনওয়েলথ অ্যাসোসিয়েশন অব পেডিয়াট্রিক গ্যাস্ট্রোএনটারোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশনের (সিএপিজিএএন) সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি. গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথে জনস্বাস্থ্য পুষ্টির অধ্যাপক এবং ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব গ্লোবাল হেলথে অ্যাফিলিয়েটেড অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (বিআইডিএস) সাম্মানিক সিনিয়র ফেলো পদে নিযুক্ত হয়েছেন।

২০০৩ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স তাকে ড. সুলতান আহমেদ চৌধুরী স্বর্ণপদক প্রদান করে। ২০১৮ সালে তিনি ইসলামি ব্যাংক ডেভেলপমেন্ট ট্রান্সফরমারস রোডশো অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন। 

এনএআর/

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : আইসিডিডিআর’বি
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক