ডা. কামারুজ্জামান নাবিল

ডা. কামারুজ্জামান নাবিল

শিক্ষানবিশ চিকিৎসক, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা;
এমবিবিএস, ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইরান


২৯ জুন, ২০২৪ ০৪:৫৫ পিএম

পড়াশোনার কারণে আত্মহত্যা: দায় কী শুধুই শিক্ষার্থীর?

পড়াশোনার কারণে আত্মহত্যা: দায় কী শুধুই শিক্ষার্থীর?
আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগেরই ক্ষেত্রে তাদের অ্যাকাডেমিক স্টাডি গ্যাপ এবং পিছিয়ে পরার বিষয়টি সামনে আসে। প্রতীকী ছবি

মাঝে মাঝেই আমাদের চারপাশ থেকে অনেক মেধাবী মুখ নিয়মিত হারিয়ে যাচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর পথে পা বাড়িয়ে। যখন এমন মৃত্যুর খবরগুলো আসে, তখন ফেসবুকজুড়ে তাদের মৃত্যুর পেছনের কারণ খুঁজতে থাকি।

বেশিরভাগেরই ক্ষেত্রে তাদের অ্যাকাডেমিক স্টাডি গ্যাপ এবং পিছিয়ে পরার বিষয়টি সামনে আসে৷ হয়ত এখান থেকেই ডিপ্রেশনের শুরু; সাথে ব্যক্তিগত কিছু বিষয়ও থাকতে পারে। যা-ই হোক, এরপর আমাদের মাঝ থেকে তাদের হারিয়ে যাওয়া।

মূল কথায় আসা যাক—আমি তখন ইরানের ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের থার্ড ইয়ারে পড়ি। একটা কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে গিয়েছি। একজন কর্মকর্তা আমাকে ডাক দিয়ে বললেন, আপনাদের ডরমেটরিতে এই নামের কোন ছাত্র আছে কিনা? বললাম, আমার পাশের রুমেই থাকে। তিনি বললেন, তাকে যেন বলি, দ্রুত ওনার সাথে দেখা করতে।

ডরমেটরিতে ফিরে এসে তাকে বললে সে দেখা করে। ক’দিন পরে কৌতূহলবশত তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম কি কারণে দেখা করতে বলেছিল। সে জানালো, গত টার্মে তার পরীক্ষার গড় মার্ক ৬০ পার্সেন্টের নিচে চলে আসছে। সেজন্য কাউন্সেলিং এর জন্য ডেকেছিল তাকে।

পরে এ বিষয়টি নিয়ে জানতে গিয়ে জানলাম, ইরানের প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা একটা বিভাগ থাকে; যাদের কাজ হচ্ছে, হঠাৎ করে কোন শিক্ষার্থীর ফলাফল যদি খারাপ হয় তাদেরকে কাউন্সেলিং করা। প্রতি টার্মে যাদের ফলাফল এমন হয়, তাদের নামগুলো অ্যাকাডেমিক ভবন থেকে এই বিভাগে পাঠিয়ে দিলে তারা কল দিয়ে শিক্ষার্থীদের দেখা করতে বলে।

নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে দেখা করতে না গেলে অনেক সময় শিক্ষার্থীদের একরকম বাধ্য করা হয় তাদের সাথে দেখা করতে। এ জন্য মাঝে মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট এবং খাবারের কার্ড বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের সাথে দেখা করে।

এমন কোনো শিক্ষার্থী সেখানে গেলে একজন শিক্ষকের সাথে তাদের কন্টাক্ট করিয়ে দেওয়া হয়। এরপর কাউন্সেলিংয়ের জন্য কিছু ক্লাস ওই শিক্ষকের সাথে আলাদাভাবে করতে হয়। এখানে মূলত শিক্ষার্থী তার ফলাফল কেন খারাপ হচ্ছে তা জানালে সেভাবে তাকে পরামর্শ দেওয়া হয়।

এর মাঝে সারাদিনের সময় কিভাবে কাটে, মানসিক সমস্যা থাকলে সে বিষয়ে কী করা যেতে পারে, পারিবারিক কোনো সমস্যা যদি থাকে সে বিষয়ে জানানো, গড় মার্ক বাড়াতে কিভাবে রুটিন করে পড়াশোনা করা যেতে পারে—ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা ও পরামর্শ দেওয়া হয়। এভাবে এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহ পরপর ক্লাসগুলোতে অংশ নিয়ে আপডেট জেনে আবারো নতুন পরামর্শ দেওয়া হয়।

এমন কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা আমাদের ইরানের মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছিল। আমি দেশে ফিরে আসার পরে বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে এমন কোন বিভাগ আছে কিনা বা এমনভাবে কাউন্সেলিং করতে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া আছে কিনা সে বিষয়ে জানতে গিয়ে জানলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন বিভাগ আছে এবং কাউন্সেলিংয়ের জন্য দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তিও আছেন। যদিও উনাদের কার্যক্রমের কার্যকারিতা নিয়ে জানতে পারিনি।

মূলত আমার কাছে মনে হয়, কারো যদি কোন কারণে একবার পড়াশোনায় গ্যাপ পড়ে যায়, তখন শিক্ষার্থীদের এমন সব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এজন্য সব মেডিকেল কলেজগুলোতে কার্যকরী কাউন্সেলিং সিস্টেম থাকা অনেক জরুরি মনে করি।

এটাও মনে হয়, কোন শিক্ষার্থীর এমন অবস্থার শুরুতেই যদি এভাবে কাউন্সেলিং করা যায়, তবে এমন কারণে আমাদের মাঝ থেকে মেধাবী মুখ ঝড়ে যাবার সংখ্যাটা অনেকটাই কমে আসবে।

এনএআর/

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : মেডিকেল শিক্ষা
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এমবিবিএস গ্র্যাজুয়েটদের আবেদন

বিসিএস পরীক্ষা: সবার বয়স বাড়লেও সুখবর নেই চিকিৎসকদের

ইটনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে

আউটডোরে ৪৫০-৫০০ রোগী দেখেন ২ চিকিৎসক

  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত