বর্ধিত ভাতা চান বেসরকারি মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা

মেডিভয়েস রিপোর্ট: প্রজ্ঞাপনের আলোকে ৫ হাজার টাকা হারে বর্ধিত ভাতা চান বেসরকারি মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তারা বলেন, ২০১৬ সালে ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকার করার সিদ্ধান্ত সমানভাবে বাস্তবায়ন করেছিল বেসরকারি মেডিকেল কর্তৃপক্ষও। কিন্তু এবার বর্ধিত ভাতা দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন তারা।
তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোনো নির্দেশনা নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটাই বাস্তবায়ন করবেন তারা।
আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন জানালেন, বর্ধিতা ভাতা বিষয়ে বেসরকারি মেডিকেলের ক্ষেত্রে পূর্বের অবস্থা জেনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
‘প্রজ্ঞাপনের আবেদন সকল ইন্টার্নের জন্যই প্রযোজ্য’
ভাতা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন সকল ইন্টার্ন চিকিৎসকের জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য বলে মনে করেন রাজধানীর ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ইন্টার্ন চিকিৎসক মেডিভয়েসকে বলেন, ‘এ বছর ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বেতন পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, এটা শুধু সরকারি মেডিকেল কলেজেই কার্যকর হচ্ছে। আমরা বেসরকারি মেডিকেলের কোনো ইন্টার্ন এটা পাবো না। অনেক বেসরকারি কলেজ থেকে এমনটিই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা যেহেতু ভর্তির সময় এককালীন এই টাকাটা দিয়েই ভর্তি হই, সেহেতু আমরা ১৫ হাজার করেই পাবো। অর্থাৎ বাড়তি টাকাটা আমাদের বেলায় বাড়ানো হবে না। এটাই বেসরকারি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য।’
‘অথচ প্রজ্ঞাপনে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কথাই বলা হয়েছে। আমরা তো তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। তাহলে আমাদের বেলায় কেন কার্যকর হবে না’—যোগ করেন এই চিকিৎসক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজের এক ইন্টার্ন চিকিৎসক মেডিভয়েসকে বলেন, ‘আমাদের দায়িত্বের বেলায় সময়দানে কোনো উদাসীনতা প্রদর্শন করি না। সরকারিতে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ডিউটি চলে। সপ্তাহে ২/৩ ইভিনিং এবং ১/২ দিন নাইট থাকে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে আনোয়ার খান মেডিকেলের কথা যদি বলি, এখানে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সপ্তাহে ডিউটি করতে হয়। কারও নাইট থাকলে এটা অতিরিক্ত হিসাবে করতে হয়। এতো ইফোর্ট দেওয়ার পরও বলা হচ্ছে, ১৫ হাজার করেই ভাতা প্রাপ্ত হবো আমরা। এটা কোন বিচারে, কোন যুক্তিতে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? বর্ধিত ভাতা পেলে এতো পরিশ্রমের বিষয়েও আমাদের কোনো কথা থাকতো না। কিন্তু আমাদের কর্তৃপক্ষ তা পুরোপুরি এড়িয়ে যাচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৬ সালে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার করার সময়ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে বর্ধিত ভাতাটা কার্যকর হয়েছিল। আমাদের সিনিয়র ভাইয়েরা ১৫ হাজার টাকা করেই ভাতা পেয়েছেন। তাহলে এবার প্রজ্ঞাপনের আলোকে আমরা কেন বর্ধিত ভাতা পাবো না?’
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় বেসরকারি মালিকপক্ষ
জানতে চাইলে আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজের সেক্রেটারি এবিএম কায়কোবাদ মেডিভয়েসকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত বিষয় চিন্তা করবে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এ নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই বাস্তবায়ন হবে।’
২০১৬ সালে কয়েকটি ব্যাচকে বর্ধিত ভাতা দেওয়া হয়েছিল। সেটা এবারও অনুসরণ করবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আলাদা করে নির্দেশনা দিয়েছিল। সুতরাং এখনো যে সিদ্ধান্ত দেবে, আমরা তাই অনুসরণ করবো।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মালিকপক্ষের মধ্যে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা এলে হয়তো বা মালিকপক্ষ আলোচনা করবে।
যা বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন আজ শনিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় মেডিভয়েসকে বলেন, ‘আমি বেসরকারি সম্বন্ধে কিছুই জানি না। সরকারিটাই মূলত করেছি। বেসরকারিটা জেনে একটা ব্যবস্থা নেবো। আগে এটা নিয়ে আলাপ করে নিশ্চিত হই। নিশ্চিত হতে পারলে নোটিস দিয়ে দেবো।’
স্বাস্থ্য প্রশাসকরা যা মনে করেন
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান মেডিভয়েসকে বলেন, ‘সরকারিতে বাড়ানো হলে বেসরকারিতে বাড়ানো উচিত। একই বিদ্যা, একই শিক্ষা, একই কোর্স। তাহলে অবশ্যই বাড়াতে হবে। ২০১৬ সালেও বেশ কিছু মেডিকেল বর্ধিত হারে ভাতা প্রদান করে। সুতরাং এবারও দেওয়া উচিত। আমার মনে হয়, সেটা করা হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. হারুন-অর-রশিদ মেডিভয়েসকে বলেন, ‘আমি যতদূর জানি, একেক বেসরকারি মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা একেক রকম। বেসরকারি মেডিকেল কলেজে বর্ধিত ভাতা নিয়ে আপাতত কোনো আলোচনার কথা আমার জানা নেই। তাদের ব্যাপারে পরবর্তীতে কী সিদ্ধান্ত আসে, সেজন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, বেসরকারিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের যে ভাতা প্রদান করা হয়, তা ভর্তির সময়ই কর্তৃপক্ষ নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে ওই টাকাই তাকে ফেরত দেওয়া হয়। শিক্ষার পাশাপাশি এগুলো যেহেতু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মতোই। সুতরাং এক্ষেত্রে তারা একটু হিসাবি হবেন, এটাই স্বাভাবিক।
তবে বেসরকারি মেডিকেলে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বর্ধিত ভাতা সংক্রান্ত বিষয়টি বিবেচনার দাবি রাখে বলে মনে করেন এই স্বাস্থ্য প্রশাসক। বলেন, ইন্টার্নশিপের সময় তারা সেবার অংশ হয়ে যান, যা হাসপাতালের লাভের কারণ। এই পরিপ্রেক্ষিতে মানবিক চিন্তা করে হলেও তাদেরকে এ বর্ধিত ভাতা দেওয়া উচিত। এটা কম কিংবা বেশি, যাই হোক।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা ২০ হাজার টাকা
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দীর্ঘ দিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ এপ্রিল তাদের ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে ২০ হাজার করে সরকার। বর্ধিত এ ভাতা চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে কার্যকর হবে এবং এ তারিখের পূর্বের বকেয়া ভাতা নির্ধারিত হারে প্রাপ্য হবেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের বাজেট ১-শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব সুশীল কুমার পাল স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠিতে এ কথা জানানো হয়, ‘উপরি-উক্ত বিষয় ও সূত্রের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ১২৭০১০১-১১১০৫১২-স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ-সচিবালয় অংশে ৩৯১১১১১- সাধারণ থোক বরাদ্দ খাতে বরাদ্দকৃত ৯৬,২১,০১,০০০/- টাকার অব্যয়িত অর্থ হতে ভর্তিকৃত ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা বিবেচনায় সর্বশেষ ইন্টার্ণ চিকিৎসকের সংখ্যা ৪৭০০ জন মাসিক ভাতা ৫,০০০/- টাকা বৃদ্ধি করে ২০,০০০/-টাকায় উন্নীতকরণের ফলে অতিরিক্ত ৩১,৮০,০০,০০০/- (একত্রিশ কোটি আশি লক্ষ) টাকা ১২৭০২০১১১০৫১৪- প্রধান কার্যালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুকূলে নিম্নবর্ণিত শর্তে নিদের্শক্রমে বরাদ্দ প্রদান করা হলো।’
শর্তাবলী হলো—
১. এ অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে যাবতীয় আর্থিক বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে;
২. এ অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কোন অনিয়ম উদ্ঘাটিত হলে সংশ্লিষ্ট বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন;
৩. এ অর্থ ইন্টার্ণ চিকিৎসকদের ভাতা পরিশোধ ব্যতীত অন্য কোন কাজে ব্যয় করা যাবে না;
৪. এ অর্থ চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সংশ্লিষ্ট খাতে প্রতিফলন করতে হবে;
৫. এ বিষয়ে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় কর্তৃক সকল আনুষ্ঠানিকতা প্রতিপালনপূর্বক সরকারি আদেশ (জি,ও) জারি করে ০৪ (চার) কপি পৃষ্ঠাংকনের জন্য অর্থ বিভাগে প্রেরণ করতে হবে;
৬. প্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়ে ভাতা পরিশোধ করতে হবে; এবং
৭. ০১/০৪/২০১৪ খ্রিঃ তারিখ থেকে এ বর্ধিত হার কার্যকর হবে এবং এ তারিখের পূর্বের বকেয়া ভাতা ইতোপূর্বে নির্ধারিত হারে প্রাপ্য হবেন।
এএনএম/
-
২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
-
২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
-
২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
-
২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন
বিএসএমএমইউতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের সমাবেশ
-
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
-
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
-
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
-
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪
-
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
প্রাইভেট পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের হুঁশিয়ারি
২১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভাতা বৃদ্ধি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ না হলে কর্মবিরতির ঘোষণা