‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি’
মেডিভয়েস রিপোর্ট: দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বেসরকারি পোস্টগ্রাজুয়েট প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা। আজ সোমবার (১৭ জুলাই) সকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে এই ঘোষণা দেন তারা।
প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা বলেন, ‘আমাদের দাবি মানতে হবে। ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা কাজে ফিরবো না। পাঁচ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে আমাদের সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে। এটা আমরা প্রত্যাখান করলাম। আমরা আশ্বাস নয়, প্রমাণ চাই।’
বেসরকারি পোস্টগ্রাজুয়েট প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা বলেন, ‘প্রশিক্ষণরত চিকিৎসকরা সম্মিলিতভাবে চিকিৎসাখাতে আমাদের বাস্তবিক সমস্যা এবং প্রতিকূলতার কথা চিন্তা করে কিছু মৌলিক এবং যৌক্তিক দাবি নিয়ে সরব হয়েছি। এর যৌক্তিকতা আপনারা জানেন এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে আপনারা সবাই আমাদেরকে সমর্থন দিয়েছেন, দিয়ে যাচ্ছেন—আমরা এজন্য আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।’
‘কিন্তু এই সমর্থন আমাদের মূল সমাধান নয়। আমরা এর বাস্তবায়ন চাই। আর তাই গত কয়েক দিনে, সময়ের প্রয়োজনে যেসব যৌক্তিক দাবিতে কর্মসূচি পালন করছি, তা আপনারা দেখেছেন এবং আপনারা সব কিছু জানেন। এই বিষয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই’, যোগ করেন তারা।
প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ অবস্থানে আমাদের উপর লাঠিচার্জের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, যা উপর মহলের নির্দেশেই হয়েছে বলে সহজে প্রতীয়মান। কারণ জুনিয়র ডাক্তাররা ন্যায্য অধিকার আদায়ে এভাবে মাঠে নেমেছে, সেখানে সিনিয়ররা এখন পর্যন্ত কোন ধরনের একাত্মতা প্রকাশ করেননি, বরং বিভিন্ন সময় জুনিয়রদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন।’
তারা বলেন, ‘এটা ডাক্তার সমাজের জন্য কত বড় লজ্জার, যেখানে ২০২০ সালেই ৩০ হাজার টাকা ভাতা করা হয়েছে সিন্ডিকেট মিটিংয়ে, সেখানে ২০২৩ সালে এসে ২৫ হাজার টাকা করা। সেটাও করা হয়েছে আমাদের সিনিয়রদের নির্দেশনায়, তারা এই ডাক্তার সমাজের সম্মান বাড়াতে চান না, সব সময় অবদমিত করে রাখতে চান। এইটা আমাদের জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য খুবই লজ্জার এবং হতাশাজনক।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একাত্মতা ঘোষণা
তারা বলেন, ‘আমাদের পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের উপর বর্বোরোচিত আক্রমণের প্রতিবাদে সারাদেশের ইন্টার্ন চিকিৎসকবৃন্দ একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। আমাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আমরা সকল জুনিয়র এক হয়েছি।’
আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে তারা বলেন, ‘দাবি আদায় এবং আমাদের উপর বর্বোরোচিত আক্রমণের উপযুক্ত বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।’
তারা বলেন, ‘আমাদের এখন একটাই কথা, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাই, তা ছাড়া আমাদের কষ্টের কথা কেউ শুনবে না, ওনার কাছে আমরা আমাদের কষ্টের কথা বলতে চাই।’
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে করজোরে অনুরোধ করবো, জাতির পিতার হস্তক্ষেপ ছাড়া বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি, আর আপনার হস্তক্ষেপ ছাড়া বর্তমানে কোনো যৌক্তিক আন্দোলন সফলতার মুখ দেখেনি। আপনার প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা ছিল, এখনো আছে। আমাদের চিকিৎসকদের জন্য আপনি এখনো পর্যন্ত যা করেছেন, তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। কিন্তু আজ আমরা আর না পেরে আপনার কাছে এসেছি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, আপনার কর্মী হিসেবে নয়, সন্তান হিসেবে দাবি নিয়ে এসেছি। আমরা জানি, আপনি আমাদের ফিরিয়ে দেবেন না’, যোগ করেন তারা।
তারা বলেন, ‘চিকিৎসাখাতকে আরও এগিয়ে নেয়ার জন্যে আমাদের দাবি, আমরা চাই, বাংলাদেশের চিকিৎসাখাতকে বিশ্বদরবারে আরও উঁচু অবস্থায় নিয়ে যেতে। আমরা আপনার তারিখ দিন ঘোষণার অপেক্ষায় আছি।’
গত ৮ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত গোল টেবিল বৈঠক ও সংবাদ সম্মেলন করে বেসরকারি পোস্টগ্রাজুয়েট প্রশিক্ষণার্থীরা। এতে ১২ জুনের মধ্যে দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার সময় বেঁধে দেন তাঁরা। অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণার্থীরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন, এ সময়ের মধ্যে দাবি না মানা হলে ১৩ জুন থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে যাবেন তারা।
আলোচনায় পার্শ্ববর্তী দেশে পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্সে অধ্যয়নরত চিকিৎসকদের ভাতা পাওয়ার পরিমাণ তুলে ধরে বক্তারা বলেন, ‘ভারতে ৬৭ হাজার ৬৮৩ টাকা, পাকিস্তানে ৩৮ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয়। আর আমাদের ভাতা ২০ হাজার টাকা, যা অমানবিক।’
অনুষ্ঠানে চিকিৎসকরা বলেন, ‘আমাদের এখন অসুস্থ রোগীদের পাশে থাকার কথা ছিল, কিন্তু নিরুপায় হয়ে মৌলিক অধিকার আদায়ে নামতে হয়েছে, যা দুঃখজনক।’
তবে ১১ জুন বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন্সে (বিসিপিএস) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের বৈঠক হয়। সেখানে তাঁদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে ১৫ জুন সন্তোষজনক আলোচনার আশ্বাসে ১৩ জুন থেকে সারাদেশে কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে ট্রেইনি ডক্টরস এসোসিয়েশন।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো আশ্বাস বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত ৮ জুলাই সকাল ১০ট থেকে রাজধানীর শহীদ মিনার এলাকায় অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা।
এর অংশ হিসেবে পর দিন ৯ জুলাই একই স্থানে তারা শুরু করেন গণঅনশন।
এর পর দিন দাবি-দাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি দিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান তারা। আগে থেকে সময় নির্ধারিত না হওয়ায় সে দিন তাঁর সাক্ষাৎ পাননি বেসরকারি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা।
তবে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহর মধ্যস্ততায় ১০ জুলাই শাহবাগের পূর্ব ঘোষিত অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেন তাঁরা। এর পর থেকে মাঠের কর্মসূচি তিন দিন স্থগিত ছিল।
ভাতা বৃদ্ধি: ফিরে দেখা
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিএসএমএমইউয়ের সিন্ডিকেট সভায় অধ্যয়নরত বেসরকারি রেসিডেন্টদের ভাতা বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার বিষয়ে অনুমোদন দেয় সিন্ডিকেট মেম্বারগণ।
এর পর ওই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে বিএসএমএমইউ রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান মেডিভয়েসকে বলেছিলেন, ‘বেসরকারি রেসিডেন্টদের মাসিক ভাতা ৩০ হাজার টাকা করার বিষয়টি সিন্ডিকেট মিটিংয়ে অনুমোদিত হয়েছে। তবে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটিতে যাবে, সেখানেও পাস হওয়ার একটি বিষয় রয়েছে।’
-
০৪ জুলাই, ২০২৪
-
২০ এপ্রিল, ২০২৪
-
০৯ এপ্রিল, ২০২৪
-
০৭ এপ্রিল, ২০২৪
ভাতা ছাড়া দশ মাস
সহস্রাধিক প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকের বিবর্ণ ঈদ
-
০৪ এপ্রিল, ২০২৪
-
২৮ মার্চ, ২০২৪
ঈদের আগে বকেয়া ভাতা প্রদানের আশ্বাস
প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের কর্মবিরতি স্থগিত
-
২৭ মার্চ, ২০২৪