১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ ১০:১৫ পিএম

চমেকের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা: অধ্যক্ষ

চমেকের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা: অধ্যক্ষ
চমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার মেডিভয়েসকে বলেন, ক্যাম্পাস শান্ত রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেডিভয়েস রিপোর্ট: চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) চার শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিএমইউ) ডিন অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার। তিনি বলেন, ক্যাম্পাস শান্ত রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে পড়াশোনা চালিয়ে যেতেও সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হবে বলে জানান চমেক অধ্যক্ষ।

আজ রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে মেডিভয়েসকে এ তথ্য জানান তিনি।

অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার বলেন, ‘শিক্ষার্থী নিগ্রহের বিষয়টি আমরা হালকাভাবে নেইনি। ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিক্ষকদের সঙ্গে সভা করেছি। অভিযুক্ত ও আহতদের সঙ্গে কথা বলে কমিটির সদস্যরা কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। কমিটির রিপোর্ট পেলে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে দ্রুততার সঙ্গে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনারা দেখতে পাবেন।’

এ সময় দণ্ডের মাত্রা জানতে চাইলে চমেক অধ্যক্ষ বলেন, ‘একাডেমিক কাউন্সিলের সম্মানিত সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তাই বাস্তবায়ন করা হবে। সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করে ক্যাম্পাস শান্ত রাখার ব্যবস্থা করা হবে। দীর্ঘ দিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ রয়েছে, যা সব মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে। এখনো আমরা সফল হবো। এ ব্যাপারে শিক্ষকবৃন্দ আমাকে ব্যাপক সহযোগিতা করছেন। কমিটিতে থাকা জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা পর্যন্ত ওদের সঙ্গে কথা অব্যাহত রেখেছেন। ইনশাল্লাহ আমরা এ পরিস্থিতি উৎরে যাবো।’

স্বজনেরা আহতদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, প্রতিষ্ঠানপ্রধান হিসেবে আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই ওদের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করবো, ইনশাল্লাহ। তবে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের আগে কে দোষী, কেন দোষী—তা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। কিছু তথ্য এখনো গণমাধ্যমের কল্যাণে জানতে পারছি। যারা হামলার শিকার তারা সরাসরি কিছু বলেনি। অন্য দিকে যারা নির্যাতন করেছে, তারা নানা ধরনের অভিযোগ আনছে। সুতরাং তদন্ত কমিটি সব কিছুই দেখবে।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাতে ঘটনা ঘটেছে। পর দিন সাড়ে পাঁচটার দিকে খবর পাই। পরক্ষণেই হল সুপারসহ আমরা সেখানে গিয়েছি। দুইজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ছিল। কিন্তু তখনো তারা (আহত) বলেনি যে, ওদেরকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমাদের জানিয়েছে, তারা বাথরুমে পড়ে গেছে। যেহেতু ওরা আহত ছিল, আমরা তখন তাদের চিকিৎসায় বেশি গুরুত্বারোপ করি। হাসপাতালে ভর্তি করে দুইজনের চিকিৎসা চালানো হচ্ছে। বাকি দুইজনের অভিভাবকের ফোন নম্বর জোগাড় করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করি। তাদের মধ্যে একজন কুমিল্লার। সে দিন রাত দুইটায় সে বাসায় পৌঁছাতে পেরেছে। অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে কুমিল্লায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সে ভালো আছে। অন্য ছেলেটা রাত ৪টার সময় নারায়ণগঞ্জের বাসায় পৌঁছায়। ওর মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। পরের দিন নারায়ণগঞ্জে অবস্থানরত নিটোরের একজনের সঙ্গে কথা বলে ওর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেখানেই চিকিৎসা চলছে। ওর খোঁজ-খবরও রাখা হচ্ছে।’

আইসিইউতে ঢুকে হুমকির অভিযোগ

এদিকে চমেক হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ঢুকে চিকিৎসাধীন দুজন শিক্ষার্থীকে হুমকির অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রি. জেনারেল ডা. মো. শামীম আহসান বলেন, ‘এমন অভিযোগ আমরাও শুনেছি। তাদের নিরাপত্তায় শুধু আনসার সদস্যরা ছিল। অভিযোগ শোনার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশও আনসারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।’

হুমকির ব্যাপারে চমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার বলেন, ‘যে দুটি ছেলে এখানে চিকিৎসাধীন আছে, ওদের চিকিৎসায় ঘটনার রাতেই মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। পরের দিন আমরা ওদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নিতে গিয়েছি। ওরা আমাদের কাছে কখনোই সরাসরি কিছু বলেনি। এখন হুমকির কথা শুনছি, সেটাও গণমাধ্যম থেকে। এ অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে আমরা পুলিশ প্রহরা বাড়িয়েছি। আমি নিজেও আজকে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক ওখানে ছিলাম।’

অভিযোগ অস্বীকার সংশ্লিষ্টদের 

তবে হামলা ও হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতা রিয়াজুল ইসলাম জয়। তিনি বলেন, ‘জখমের দাগগুলো আমরা করিনি। এখানে তো তৃতীয়পক্ষের কোনো ষড়যন্ত্রও হতে পারে।’

তবে ফোন দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হামলায় অভিযুক্ত আরেক ছাত্রলীগকর্মী সাজু দাশ। তিনি বলেন, ‘আমি তাঁর স্বাভাবিক খোঁজ-খবর নিচ্ছিলাম। মূলত আমার চেয়ে তার কথাই বেশি হচ্ছিল। আমি জানতে চেয়েছিলাম, সে কেমন আছে। সে উত্তর দিয়েছে, ভালো আছে। সুতরাং হুমকির অভিযোগ সত্য নয়।’ 

হামলা যেভাবে

গত ৮ ফেব্রুয়ারি মধ্য রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) চার শিক্ষার্থীকে ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে দুই ঘণ্টা ধরে নির্যাতনের অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। চমেকের প্রধান ছাত্রবাসের বিভিন্ন কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

নির্যাতিত শিক্ষার্থীরা হলেন, চমেকের ৬২তম ব্যাচের এম এ রায়হান, মোবাশ্বির হোসেন শুভ্র, জাহিদ হোসাইন ওয়াকিল এবং সাকিব হোসেন। 

মারধরের শিকার এম এ রায়হান মেডিভয়েসকে বলেন ‘আমাকে ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই মারধর শুরু করে। মারার কারণ জানতে চাইলে তারা অকথ্য ভাষায় গালি দিতে থাকে এবং পিটাতে থাকে।'

এ বিষয়ে চমেকের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রলীগ নেতা অভিজিৎ দাশ, রিয়াজুল জয়, জাকির হোসেন সায়াল, মাহিন আহমেদ, ইব্রাহিম সাকিব, শামীম, ইমতিয়াজ, হাবিব, সৌরভ দেবনাথ ও চমনের নেতৃত্বে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। তারা সবাই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী ছাত্রলীগ গ্রুপের নেতা-কর্মী। হামলাকারীদের মধ্যে অভিজিৎ দাশ, রিয়াজুল জয়, জাকির হোসেন সায়াল, মাহিন আহমেদ ও ইব্রাহিম সাকিব মারামারিতে জড়িয়ে কলেজ থেকে বহিষ্কার হয়েছেন। 

অভিযোগের বিষয়ে অভিজিৎ দাশ সাংবাদিকদের বলেন, তাঁদের মারা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

চমেক ছাত্রবাসের ইনচার্জ ডা. মিজানুর রহমান চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি ঢাকায় ছিলাম। দুপুরে শুনেছি আমাদের চারজন ছাত্রকে মেরে ছাত্রবাসে আটকে রাখা হয়েছে। শুরুতে আমি হোস্টেল সুপার ডা. রিজওয়ান রোহানকে খবর নিতে বলি, কিন্তু খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে আমি প্রিন্সিপাল ম্যাডামকে বলি। তিনি পুলিশসহ গিয়ে দুই জনকে উদ্ধার করে আইসিইউতে ভর্তি করেছেন।’

রাতে রুম থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ‘বুধবার দিবাগত রাতে ছাত্রাবাসের বিভিন্ন রুম থেকে তুলে নিয়ে তাদের নির্যাতন করা হয়। হোস্টেল এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ সকাল থেকে বিষয়টি জেনেও উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।’

তবে নিগ্রহের শিকার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পাননি উল্লেখ করে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের মজুমদার মেডিভয়েসকে বলেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে ছাত্রাবাসে নিয়মিত পুলিশের সঙ্গে আরও পুলিশ মোতায়েন করেছি। নির্যাতনকারীদের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা চলছে।’

প্রসঙ্গত, চমেকে ছাত্রলীগের দুটি ধারা সক্রিয়। একটি পক্ষ মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী, অন্যটি সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।

ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২০২১ সালের মার্চে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। দফায় দফায় চলা এ সহিংসতা এক পর্যায়ে রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে।

পরবর্তীতে ওই বছরের ২৯ ও ৩০ অক্টোবর দুই পক্ষের মারামারির পর চমেক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তখন মারামারিতে মহিবুলপন্থী পক্ষের মাহাদি জে আকিব নামের এক ছাত্র গুরুতর আহত হয়। তাঁর মাথার খুলির হাড় ভেঙে যায়।

শান্তি ফেরাতে এর পর থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাতেও শান্ত হয়নি চমেক, বন্ধ হয়নি জিঘাংসা।

এমইউ/এসএস

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
‘ছেলেরা কেন পিছিয়ে, কারণ অনুসন্ধান করুন’

অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের গালমন্দ নয়: প্রধানমন্ত্রী

‘ছেলেরা কেন পিছিয়ে, কারণ অনুসন্ধান করুন’

অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের গালমন্দ নয়: প্রধানমন্ত্রী

  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত