নিজস্ব জনবলে কয় বেলা চলতে সক্ষম ঢাকা মেডিকেল?
মুন্নাফ রশিদ: হাত-পায়ে শিকড় গজানো 'বৃক্ষমানব' আবুল বাজনদারের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে সবার। বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে শেষ পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছিল ঢামেক হাসপাতালে। সেখানে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা হয় বাজনদারকে।
শিশু সুরাইয়ার কথাও কারোরই ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ হয়েছিল সুরাইয়া। ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই মাগুরার দোয়ারপাড় এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে উন্মত্ত দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা নাজমা পারভীন। ওইদিন রাতেই স্থানীয় হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার হয়, জন্ম নেয় গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়া।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় গুলিবিদ্ধ শিশুটিকে স্থানীয় চিকিৎসকরা পাঠিয়ে দেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে শিশু সুরাইয়া।
চিকিৎসায় সাফল্যের এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে সাধারণ মানুষের পরম ভরসাস্থল ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের। দেশের সব বিভাগ, জেলা ও উপজেলা থেকে শুরু করে রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোও রোগীদের ঢামেক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। ঢাকা মেডিকেল সাধারণত কাউকে ফিরিয়ে দেয় না। শয্যা না হোক, ফ্লোরে হলেও ঠাঁই হয়।
জটিল ও দূরারোগ্য নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত বিভিন্ন রোগী প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তাই ছুটে আসেন এ হাসপাতালে। দিন-রাত চবি্বশ ঘণ্টা চিকিৎসা সেবায় ব্যস্ত সময় পার করেন প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসক-নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
৪০০০ রোগীর বিপরীতে শয্যা ২৫০০
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল-১ এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল-২ ও বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট মিলে প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে প্রায় দুই হাজার ৬০০ শয্যা রয়েছে। যদিও এখানে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার রোগী ভর্তি থাকেন। জরুরি বিভাগ এবং বহির্বিভাগ মিলে আরও সহস্রাধিক মানুষ এ হাসপাতালে প্রতিদিন চিকিৎসা নেন।
ঢামেক হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে ৯১ হাজার ২০০ জন রোগী এ হাসপাতালে ভর্তি হন। মাসে ভর্তি হন গড়ে প্রায় আট হাজার রোগী। একই সময়ে জরুরি বিভাগে ৩ লাখ ও বহির্বিভাগে ৬ লাখ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। অর্থাৎ গত বছর প্রায় ১০ লাখ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন, প্রতিদিনের হিসাবে যা দাঁড়ায় দুই হাজার ৭০০ জন।
লকডাউনে কমেছে রোগীর সংখ্যা
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সেবা নেওয়ার এ সংখ্যা আরও বেশি থাকে। মহামারি করোনার বিস্তার রোধে সরকারের দেওয়া অঘোষিত লকডাউনের কারণে গেল বছর সেবা নেওয়া রোগীর সংখ্যা অনেক কমেছে। সাধারণ অন্যান্য বছরগুলোতে এ সংখ্যা গড়ে ১২ থেকে ১৩ লাখ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ঢামেক হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের ৩০টি বিভাগ ও ৮০টি ইউনিটের আওতায় চিকিৎসক রয়েছেন ৬৫০ জন। এছাড়া নার্স দুই হাজার ৪৫০ জন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মিলে জনবল সংখ্যা এক হাজার ৫০০ জন।
চিকিৎসক সংকট নৈমিত্তিক ঘটনা
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দেশের সর্ববৃহৎ এ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে সবসময় ৩০ থেকে ৪০ জন চিকিৎসকের পদ ফাঁকা থাকে। এছাড়া রোগীর আনুপাতিক হারে যত চিকিৎসক প্রয়োজন তার চেয়ে অনেক কম চিকিৎসক রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। অর্থাৎ চিকিৎসক সংকট এখানে প্রতিনিয়তই দৃশ্যমান।
তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে চিকিৎসকের পদ ফাঁকা রয়েছে ৩৭টি, সিনিয়র স্টাফ নার্সের পদ ফাঁকা রয়েছে ২৫০টি।
এ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল তার ছাত্র, ইন্টার্ন চিকিৎসক আর অনানারী চিকিৎসক ব্যতীত নিজস্ব জনবল দিয়ে কয় বেলা চলতে সক্ষম? এমন প্রশ্নে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক মেডিভয়েসকে বলেন, এটি একটি জটিল বিষয়। খুবই সাধারণভাবে যদি বলা হয়, তাহলে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে রোগীর যে চাপ তা কিন্তু স্বীকৃত পদ্ধতিতে নয়।
তিনি আরও বলেন, ঢামেকে সরকারি স্বীকৃত শয্যা সংখ্যা হচ্ছে দুই হাজার ৬০০টি। কিন্তু এখানে রোগী ভর্তি থাকে চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার পর্যন্ত। জনগণের চাহিদাকে এখানে আমরা কোনোভাবে বাদ দিতে পারবো না। যেহেতু সরকারি হিসাব অনুযায়ী, শয্যা সংখ্যা দুই হাজার ৬০০টি, সেহেতু অন্যান্য সকল হিসাব-নিকাশ শয্যা সংখ্যা অনুযায়ীই হয়ে থাকে। সে হিসাবে এখানে পর্যাপ্ত জনবল রয়েছে। সুতরাং এ বিষয়ে কাউকে দোষারোপ করার কোনো সুযোগ নাই। আমাদের পর্যাপ্ত নার্স রয়েছে। এছাড়া ট্রেইনি, অনারারি, পোস্টেড ও সংযুক্তি ডাক্তারসহ অন্যান্য ডাক্তার মিলিয়ে রয়েছে পর্যাপ্ত চিকিৎসকও।
জাতীয় পর্যায়ে যে সমস্যাগুলো রয়েছে ঢাকা মেডিকেলও সেসব সমস্যার বাইরে নয় জানিয়ে পরিচালক বলেন, অ্যানেস্থেশিওলোজিস্ট সংকট শুধু বাংলাদেশেই না, বরং সারা বিশ্বেই বিদ্যমান। সুতরাং এই ধরনের জায়গাগুলোতে আমাদের চাহিদা রয়েছে।
ঢামেক থেকে রোগী রেফার্ডের সুযোগ নেই
ঢাকা মেডিকেল থেকে আর কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাসপাতাল থেকে এখানে রোগী রেফার্ড করা হয়। শুধু তাই নয়, ঢাকার বিভিন্ন বড় বড় হাসপাতাল তাদের রোগী ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করে দেয়। ফলে এখান থেকে আর কোথাও রেফার্ড করার সুযোগ নেই। সুতরাং এটিও আমাদের ধরে রাখতে হবে। এর জন্য যা যা করা দরকার তাই করা হচ্ছে।
এ সকল বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার ঢাকা মেডিকেলকে পাঁচ হাজার শয্যায় উন্নীত করে উপমহাদেশের আধুনিক ও বৃহৎ হাসপাতালে রূপান্তর করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, যে প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। এটি বাস্তাবায়ন হলে ধারণক্ষমতা আর জনবল নিয়ে আর কোনও সমস্যা হবে না বলে মনে করেন তিনি।
এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীসহ অন্যান্য সেবাকর্মীদের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত, আইনগত কারণসহ ভিন্ন কারণে এই খাতে কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে জানান ঢামেক পরিচালক। বলেন, যদিও সব ধরনের সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন সময়ে অস্থায়ী কিছু জনবল দেওয়া হয়। এর পাশাপশি বিভন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ঢাকা মেডিকেলে এখানে বিভিন্ন ধরনের টেকনোলোজিস্টরা ট্রেনিংয়ের জন্য আসে। তাদের মাধ্যমে আমরা সাহায্য পেয়ে থাকি। সব মিলিয়ে ঢাকা মেডিকেল এভাবেই সবার মন জয় করে সর্বোচ্চ সেবা অব্যহত রেখেছে।
-
০১ মার্চ, ২০২৪
-
০৮ জানুয়ারী, ২০২৪
-
০৩ নভেম্বর, ২০২৩
-
৩০ অক্টোবর, ২০২৩
-
২৩ অক্টোবর, ২০২৩
-
০৯ মার্চ, ২০২৩
গুলিস্তানে বিস্ফোরণ
আহতদের চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন: ঢামেক পরিচালক
-
০৭ মার্চ, ২০২৩
-
১৮ ডিসেম্বর, ২০২২
-
১২ ডিসেম্বর, ২০২২
-
০৮ নভেম্বর, ২০২২