করোনা সংকট
সাধারণ রোগীদের চিকিৎসায় আলাদা হাসপাতাল নির্ধারণের পরামর্শ
বিল্লাল হোসেন রাজু: দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে জরুরি সেবা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন অনেকেই। আবার যেসব হাসপাতাল করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সেসব হাসপাতাল থেকে সাধারণ রোগী বের করে দেয়ারও অভিযোগ মিলেছে। সেই সঙ্গে করোনার বাইরে অন্য কোন রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। এ কারণে রীতিমতো বিপাকে সাধারণ রোগীরা। প্রশ্ন হলো, তাহলে সাধারণ রোগীরা কোথায় যাবে? কোথায় মিলবে তাদের চিকিৎসা সেবা? অনেকের সরকারি হাসপাতাল ছাড়া বিকল্প নেই। বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের ফেরত আসার নজির অহরহই ঘটছে। করোনা আতঙ্কের কারণে চিকিৎসার অবহেলার অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। এছাড়া অবহেলায় বেশ কয়েকটি রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
করোনার পরিস্থিতিতে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা পাওয়ার জায়গা কিছুটা সংকোচিত হয়ে গেছে। অনেক রোগী চিকিৎসার জন্য পথে পথে ঘুরে মারা যাবেন। তাই এসব সাধারণ রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে জোনভিত্তিক কিছু হাসপাতাল নির্ধারণ করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য মতে, দেশে সরকারি হাসপাতাল রয়েছে ৬৫৪টি এবং এসব হাসপাতালে মোট শয্যার সংখ্যা ৫১ হাজার ৩১৬টি। আর বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে ৫ হাজার ৫৫টি, যেখানে মোট শয্যার সংখ্যা ৯০ হাজার ৫৮৭টি।
বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে অনুমিত জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৬ লাখ। সেই হিসাবে প্রতি ১ হাজার ১৫৯ জন ব্যক্তির জন্য হাসপাতালে একটি শয্যা রয়েছে।
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুরোটাই করোনা হাসপাতাল করা হচ্ছে। বার্ন ইউনিটের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ইউনিট-২ কে এরই মধ্যে করোনার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। খুব শিগগিরই পুরো হাসপাতালটিকে করোনা হাসপাতাল করার ঘোষণা দেওয়া হবে। দেশের মোট চিকিৎসার ৭০ ভাগ চিকিৎসাই হয় এই হাসপাতালে। এছাড়া দেশের উপজেলা সদর হাসপাতাল করোনা রোগীদের সেবা দিচ্ছে। আর অনেক ক্ষেত্রেই জেলা-উপজেলা শহরগুলোর বেশির ভাগ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল করোনা আতঙ্কে সাধারণ রোগীদের সেবা দিচ্ছে না।
কিছুদিন আগে অব্যাহত অভিযোগের মুখে সেবা দেয়া না হলে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকের লাইসেন্স বাতিল করা হবে-এমন সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। সেই প্রেক্ষাপটে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মালিকদের সংগঠন এক বিবৃতি দিয়ে বলেছে, লাইসেন্স বাতিলের হুঁশিয়ারি কোন সমাধান হতে পারে না।
দেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ইউজিসি অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ মেডিভয়েসকে বলেন, হার্টের, কিডনি, লিভার রোগীসহ কত রোগী আগে হাসপাতালের আউটডোর-ইনডোরে রোগী ভর্তি থাকত, এখন তারা কোথায়। আসলে রোগীরা অসহায় এটা যেমন সত্য, রোগীরা ভয়ে হাসপাতালে যায় না এটাও সত্য। আবার ঢাকা বাইরে থাকায় অনেক রোগী ঢাকায় আসতে পারছে না। তাছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও অনেক সময় ভয়ে সেবা দিতে চান না। তারপরেও আমাদের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। সাধারণ রোগীরা চিকিৎসা সেবা পাবে না, ভর্তি হতে পারবে না- এটা ঠিক নয়। করোনা সংকটে সাধারণ রোগীদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। ঢালাওভাবে রোগীদের ফিরিয়ে দেয়া যাবে না। বিনা চিকিৎসায় কারও যেন মৃত্যু না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা না পেয়ে এক চিকিৎসকের বাবাও মারা গেছেন। সেবা না পেয়ে প্রতিটা মৃত্যুই অন্যায়। এ ব্যাপারে চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আরো সচেতন হতে হবে। এদিকে সব রোগীদের যথাযথ সেবা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
অধ্যাপক আবদুল্লাহ বলেন, সাধারণ রোগীদের জন্য কিছু হাসপাতালকে আলাদা করে দেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজেনে সাধারণ রোগীদের জন্য জোন ভিত্তিক হাসপাতাল ভাগ করে দেওয়া উচিত। এতে করে অনেক সাধারণ রোগী চিকিৎসা সেবা পাবে। আমি চিকিৎসক হিসেবে এটাই আমার প্রত্যাশা।
বেসরকারি হাসপাতাল থেকে রোগীরা কতটা সেবা পাচ্ছে এমন প্রশ্নে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল মালিক সমিতির সভাপতি মবিন খান মেডিভয়েসকে বলেন, সেবা দিতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এতে অনেকের মধ্যে কিছুটা ভয় কাজ করছে। তবে এসব যোদ্ধারা সেবা অব্যাহত রেখেছে।
তিনি আরো বলেন, সাধারণ রোগীদের জন্য প্রয়োজনে কিছু হাসপাতাল আদালা করে সেবা দেওয়া যায়। এতে অনেক সাধারণ রোগীরা সেবা পাবে। আমরা চাই একজন রোগীও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। সরকারও বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ নিয়েছে। চলমান করোনা সংকটে আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকেও ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছি।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আমিনুল হাসান মেডিভয়েসকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করি এখন থেকে সেবা পেতে অসুবিধা হবে না। তাছাড়া বেসরকারি এসব সেবা প্রতিষ্ঠান মালিকদের সাথে কয়েক দফা আলোচনা করেছি। তারা যেন করোনাভাইরাস ন্যাশনাল গাইড লাইন অনুসরণ করে এবং সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করে।’
-
১৮ জানুয়ারী, ২০২৪
-
২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩
-
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৩
-
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
-
০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
-
২৮ অগাস্ট, ২০২৩
-
২০ অগাস্ট, ২০২৩
-
১৯ অগাস্ট, ২০২৩
-
০৮ অগাস্ট, ২০২৩
-
০৫ অগাস্ট, ২০২৩