১৮ এপ্রিল, ২০২৫ ০৮:২৫ পিএম

‘শুধু পড়াশোনা নয়, সহপাঠীদের সঙ্গে আনন্দঘন সময়ও কাটানো জরুরি’

‘শুধু পড়াশোনা নয়, সহপাঠীদের সঙ্গে আনন্দঘন সময়ও কাটানো জরুরি’
ছবি: মেডিভয়েস

মেডিভয়েস রিপোর্ট: মেডিকেল শিক্ষার্থীদের শুধু পড়ালেখায় নয়, জীবনের ভারসাম্য রক্ষায়ও মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত গাইনোকোলজিস্ট ও স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. সায়েবা আখতার। তিনি বলেন, ‘সব সময় শুধু পড়া-পড়া-পড়ার কথা চিন্তা করবে না। কিছুটা সময় নিজেকে উপভোগ করো বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে কথা বলো।’

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে রেটিনা মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কোচিংয়ের আয়োজনে ‘রেটিনা গ্র্যান্ড সেলিব্রেশন’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘অনেক সময় পড়ার চাপ এত বেশি থাকে যে আমরা অস্থির হয়ে যাই। কিন্তু আমি তোমাদের বলবো, সবসময় একটা বিশ্রামের সময় খুঁজে বের করার চেষ্টা করো। সবসময় শুধু পড়া-পড়া-পড়ার কথা চিন্তা করবে না। কিছুটা সময় নিজেকে উপভোগ করো বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে কথা বলো, গল্প করো।’

অধ্যাপক সায়েবা আখতার জানান, মেডিকেল শিক্ষার প্রথম দুই বছর হচ্ছে একজন চিকিৎসকের ভিত্তি নির্মাণের সময়। ‘মেডিকেল কলেজের পড়াশোনা প্রথম দুই বছর অনেকটা একটি ভবনের ভিত্তি গড়ার মতো। এই ভিত্তি যত মজবুত হবে, পরবর্তী ধাপগুলো তত সহজ হবে। তাই শুরুতেই এই দুইটি বছরকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে’—বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকেরই একটি শরীর আছে। মেডিকেল সায়েন্স মানে নিজেকে জানা, আমার শরীরের ভেতর কী চলছে, সেটা বোঝাই এই শিক্ষার মূল ভিত্তি।’

এই দুটি বছর শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করলে ক্লিনিক্যাল জ্ঞান আয়ত্ত করা এবং ভবিষ্যতে পোস্টগ্র্যাজুয়েশন করা অনেক সহজ হয়ে যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মুখস্থ নয় বুঝে শেখো

ডা. সায়েবা আখতার শিক্ষার্থীদের মনে করিয়ে দেন যে, ডাক্তারি শুধুমাত্র একটি পেশা নয়, এটি মানুষের জীবন নিয়ে কাজ করার একটি গুরুদায়িত্ব। ‘আমার একটি সঠিক সিদ্ধান্ত একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে, আবার একটি ভুল সিদ্ধান্ত জীবন কেড়ে নিতে পারে,’ বলেন তিনি।

তাই দায়িত্ববান চিকিৎসক হতে হলে শুধু মুখস্থ না করে, প্রতিটি বিষয় 'কেন' এবং 'কীভাবে' হচ্ছে—সেই প্রশ্ন করে করে বুঝে শেখার আহ্বান জানান তিনি।

‘তুমি যখন জানতে চাও কেন এটা হচ্ছে, তখন তুমি বুঝতে পারবে যে মেডিকেল সায়েন্স কতটা অগ্রসর হয়ে গেছে। আর এই অগ্রগতির চাবিকাঠি তোমাদের হাতেই,’ বলেন অধ্যাপক সায়েবা।

ডা. সায়েবা আখতার বলেন, ‘আমরা উন্নত দেশের বাসিন্দা নই। আমাদের সমাধান উন্নত দেশের মতো হতে পারে না। আমাদের নিজের সমস্যার জন্য আমাদের উপযোগী সমাধান আমরাই বের করব।’

কাজের পেছনে দৌড়াও

ডাক্তারি পেশা নিয়ে ভুল ধারণা দূর করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকে ভাবে, ডাক্তারি করলে বড়লোক হওয়া যাবে। কিন্তু আমি বলি, যদি শুধু টাকার পেছনে দৌড়াও, টাকা তোমাকে ফেলে পালাবে। তুমি যদি তোমার কাজের পেছনে দৌড়াও, টাকা তোমার পেছনে আসবে।’

গাইনোকোলজিস্ট হওয়ার গল্প

এ সময় ব্যক্তিগত জীবনের একটি ঘটনা তুলে ধরেন অধ্যাপক সায়েবা। বলেন, তিনি শুরুতে গাইনোকোলজিস্ট হতে চাননি, মেডিসিনে ক্যারিয়ার গড়ার কথা ভেবেছিলেন। এক বান্ধবীর কথায় চ্যালেঞ্জ নিয়ে গাইনি বিষয়ে এগিয়ে যান তিনি।

‘আমি তখন মেডিসিনের পার্ট ওয়ানের ফরম পূরণ করেছিলাম। কিন্তু বান্ধবী বলেছিল, গাইনি তো অনেক কষ্টের বিষয়, তুই পারবি না। আমি সেই কথায় চ্যালেঞ্জ নিই, ফরম ছিঁড়ে গাইনিতে ভর্তি হই। পরে আমি দেখি, কত মায়েরা শুধু সন্তান জন্ম দেওয়ার পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যাচ্ছে। তখন চিন্তা করি, কীভাবে এই সমস্যার সহজ সমাধান করা যায়।’

সেখান থেকেই তিনি উদ্ভাবন করেন স্বল্পমূল্যে একটি ক্যাথেটার ও কনডম ব্যবহার করে জীবনরক্ষাকারী একটি সহজ প্রযুক্তি, যা আজ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তোমরা হবে ভবিষ্যতের নক্ষত্র

অধ্যাপক ডা. সায়েবা আখতার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমরাই হবে ভবিষ্যতের নক্ষত্র। শুধু দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা পাওয়াই নয়, মেডিকেল সায়েন্সেও বাংলাদেশ একদিন নিজের মতো করে দাঁড়াবে—এমন স্বপ্নই আমরা দেখছি তোমাদের মাধ্যমে।’

শেষে তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য শুভকামনা জানিয়ে বলেন, ‘তোমাদের জন্য অনেক দোয়া রইল। এমনভাবে নিজেকে গড়ো, যেন আমরা তোমাদের ওপর গর্ব করতে পারি, সারাদেশ গর্ব করতে পারে।’

টিআই/ এমইউ 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত