ডা. সাদেকুল ইসলাম তালুকদার
সাবেক প্রধান,
প্যাথলজি বিভাগ,
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ
এবং
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, কিশোরগঞ্জ
সিনিয়র কনসালটেন্ট এন্ড চিফ
হাসপাতাল ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি,
কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ময়মনসিংহ।
১১ নভেম্বর, ২০২৩ ১০:৩৩ এএম
ডা. দীপকের যে কারণে দেশে ফেরা হলো না
ডা. দীপক কুমার ধর ছিল আমার এমবিবিএস কোর্সের সহপাঠী বন্ধু। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ১৭ নম্বর ব্যাচের ফার্স্ট বয়। ১৯৮৬ সনে ইন সার্ভিস প্রশিক্ষণ শেষ করে কিছুদিন বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করে মনবসু স্কলারশিপ নিয়ে জাপান চলে যায়। সার্জারি বিষয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে ওখানেই সার্ভিস দিতে থাকে। বউ ও দুই বাচ্চা নিয়ে স্থায়ীভাবে জাপানে বসবাস করে। জাপানে প্রথম লিভার প্রতিস্থাপন অপারেশনের সার্জন টিমের সে একজন সদস্য ছিল।
বাংলাদেশে বেড়াতে এসে ময়মনসিংহে আমার সাথে দেখা করে ডা. দীপক। আমি ডিজিটাল ডিভাইস পেলে খুশি হই সে জানতো। তাই আমার জন্য একটা ডিজিটাল ক্যামেরা গিফট হিসেবে নিয়ে আসে। আমি খুশি হই।
তাকে নিয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) ময়মনসিংহ শাখার পিকনিকে যাই। আমাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের কয়েকজন ব্যাচমেট সেদিন এতে অংশ নেয়।
মজার বিষয় হলো, সারাদিন আমাদের সাথে থেকে আবেগে পড়ে যায় দীপক। সে একান্তে বলে ‘সাদেক, দোস্ত, আমাকে বাংলাদেশে কোনো একটা ভালো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করে দাও। আমি এদেশেই থাকতে চাই, তোমাদের সাথে। তোমরা কতো সুখে আছো!’
এভাবে অনেক কথা আমার কাছে শেয়ার করে। আমি প্রথমে ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। পরে পাঠাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। সেখানে কয়েকবার সে যোগাযোগ করে। পরে কি হয়েছিল আমি জানতাম না। সে ফিরে যায় জাপানে।
কয়েক বছর পর আবার ময়মনসিংহে বেড়াতে আসে। তার আগমনে ময়মনসিংহে একটা হোটেলে পার্টি দেই। আমি একসময় একান্তে তার সাথে কথা বলি। জিজ্ঞেস করি, ‘তুমি দেশে ফিরলে না কেন।’ দেশের প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করার তিক্ত কিছু অভিজ্ঞতা বর্ননা করলো। যে কারণে তার দেশে ফেরার ইচ্ছা চিরতরে মিটে গেল।
দীপক জানায়, বিএসএমএমইউতে যোগাযোগ করার জন্য কয়েকবার তাকে ঢাকায় যেতে হয়। শেষবার মহাখালী বাস টার্মিনালে বাস থেকে নেমে একটা সিএনজি অটোরিকশায় করে পিজিতে যাচ্ছিল। তখন মলম পার্টির খপ্পরে পড়ে সে। মলম পার্টির সদস্যরা দীপকের চোখে মরিচের গুড়া ঘষে মলম লাগিয়ে সর্বস্বান্ত করে কিছুক্ষণ উল্টাপাল্টা ঘুড়িয়ে রাস্তায় ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেয়।
এমন হৃদয় বিদারক ঘটনার পর কেউ কি এই সোনার দেশে ফিরে আসে?
দীপক বলে, ‘আমি জাপানে স্থায়ী হবো না। আমি চাই না, আমার সন্তানেরা জাপানি পরিবেশে বড় হোক। আমি ইংল্যান্ডে চলে যাবো।’ তারপর সে ইংল্যান্ডে চলে জমায়। কিন্তু চাকরি করে সৌদি আরবে।
একবার দেশে বেড়াতে এসে হার্ট অ্যাটাক করে। বেঁচে যায়। কিন্তু মস্তিষ্কে অক্সিজেন কম পড়ে ব্রেইনের ক্ষতি হয়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে অবশিষ্ট স্মৃতিটুকু হারায় সে। কিন্তু তার অনেকদিন আগের স্মৃতি মস্তিষ্কে আছে। টেলিফোনে তার সাথে কথা হয়েছে। লন্ডনে থাকে। আমার স্মৃতি তার মনে আছে। বলে তালুকদার, সাদেইক্কা, নাকের বাঁশি। আমি নাক দিয়ে বাঁশি বাজাতে পারি। তাই বললো নাকের বাঁশি।
দীপকের কথা এবার ক্ষান্ত দিলাম। আরেকটা কথা বলি। আমাদের এলাকার ছোট ভাই, সখিপুরের গর্ব তথা বাংলাদেশের সাহিত্য জগতের সম্পদ, সাংবাদিক, ডেইলি স্টারের বার্তা সম্পাদক, অর্ধ শতাধিক উপন্যাসের লেখক প্রিয়মুখ শাহ আলম সাজু গত কয়েকদিন আগে সিএনজি অটোরিকশায় একই রকম মলম পার্টির খপ্পরে পড়ে। তবে কিছুর বিনিময়ে জানে বেঁচে এসেছে। ফেইসবুকে দুঃখ করে লিখেছে।
আরেকটা নিউজ দেখলাম রাজধানীতে কাইজ্যা পার্টির ভয়াবহতার কথা। পুলিশ ভাইয়েরা এখন অন্য বড় বড় কাইজ্যা নিয়ে মহাব্যস্ত। মলম পার্টি ও কাইজ্যা পার্টি নিয়েও ভাবতে হবে।
বেশি পয়সা কামিয়ে হয়তো কানাডা গিয়ে বাড়ি বানালে সন্তান নিরাপদে আশ্রয় পাবে। কিন্তু কয়জনই বা তা পারবে?