২১ জুন, ২০২৩ ০৭:৪৪ পিএম

বাজেট: স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ কতটুকু সন্তোষজনক?

বাজেট: স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ কতটুকু সন্তোষজনক?
স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘এ বছর স্বাস্থখাতে বরাদ্দ যতটুকু বেড়েছে তার পুরোটাই হচ্ছে পরিচলন ব্যয়। উন্নয়ন ব্যয় বরং গত বছরের তুলনায় কমেছে।’

সাহেদুজ্জামান সাকিব:ক্তৃতা-বিবৃতিতে স্বাস্থ্য খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ বাড়ানোর অপরিহার্যতার কথা উল্লেখ থাকলেও এর বাস্তবায়ন নেই ২০২৩-২৪ অর্থবছরের স্বাস্থ্য বাজেটে। গত বছরের তুলনায় এবারের বাজেটে ১ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ বেড়েছে। তবে মোট বাজেটের খাতওয়ারি বরাদ্দের বিপরীতে তা কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের বাজেটে গত বছরের চেয়ে বেশি সেবা পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, বরং তুলনামূলকভাবে ওষুধ সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ মেডিভয়েসকে বলেন, ‘এ বছর স্বাস্থখাতে বরাদ্দ যতটুকু বেড়েছে তার পুরোটাই হচ্ছে পরিচলন ব্যয়। উন্নয়ন ব্যয় বরং গত বছরের তুলনায় কমেছে। এবারে যে ১ হাজার ৮৮৯ কোটি বেড়েছে তার পুরোটাই যাবে মুদ্রাস্ফীতি ও চিকিৎসকদের বেতন-ভাতায়। তার মানে এবারে বরাদ্দ বাড়লেও গত বছরের চেয়ে বেশি সেবা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

এবারের বরাদ্দ যতটুকু বেড়েছে তা মুদ্রাস্ফীতির চেয়েও কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকারি হিসেবে মুদ্রাস্ফীতি ৬ শতাংশ, কিন্ত বাজেট বেড়েছে ৩ শতাংশ। সুতরাং এ টাকা দিয়ে মুদ্রাস্ফীতির চাপ সামলানোই কঠিন হয়ে যাবে। গত বছরে এই টাকা দিয়ে যে পরিমাণ ওষুধ কেনা যেতো এ বছর সে পরিমাণ ওষুধ কেনা সম্ভব হবে না। তার মানে এবারে ওষুধ সরবরাহেও একটা বড় রকমের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।’

বাজেটের উন্নয়ন খাতে বরাদ্দের একটা বড় অংশ অব্যয়িত থাকার কারণ হিসেবে দায়িত্বশীলদের ব্যয়ভীতির কথা উল্লেখ করে ড. আব্দুল হামিদ বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে যারা ব্যবস্থাপক আছেন তাদের বেশিরভাগই চিকিৎসক হওয়ায় এ বিষয়গুলো সম্পর্কে তেমন ধারণা থাকে না। ফলে তারা এসব কাজে খুব একটা স্বস্থিবোধ করে না। তাছাড়া অডিটে বাড়তি বিড়ম্বনায় পড়তে হতে পারে এই আশঙ্কা থেকেও অনেকে ব্যয় করতে চান না। যার কারণে উন্নয়ন বরাদ্দের একটা বড় অংশ অব্যয়ীত থেকে যায়।’

তিনি বলেন, ‘বাজেট কখনো অটোমেটিক্যালি বেড়ে যায় না, বাজেট চাইতে হয়। মাঠ পর্যায়ে শূন্য থাকা পদগুলোতে নিয়োগ ও নতুন পদ সৃষ্টি করে বাজেটের চাহিদা সৃষ্টি করতে হবে। ব্যয় করার খাত সৃষ্টি করতে না পারলে তো বাজেট ফেরত যাবেই। সুতরাং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সবার আগে বাজেটের চাওয়ার যে প্রক্রিয়া সেটা মেইন্টেইন করতে হবে।’

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাবেক সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘গতবছর জাতীয় বাজেট যেভাবে বৃদ্ধি হয়েছিল স্বাস্থ খাতের বরাদ্দও সমানভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু এবারে সেভাবে স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ বাড়েনি। এবারে জাতীয় বাজেট বৃদ্ধি পেয়েছে সাড়ে ১২ শতাংশের মতো, কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে সেভাবে বাড়েনি। জিডিপির হিসেবে ধরলে এবারে বরাদ্দ কমে গেছে।’

মুগদা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বরাদ্দ ব্যয়ের ক্ষেত্রে আমাদেরকে অনেক নিয়ম মেনে চলতে হয়। একখাতের বরাদ্দ থেকে অন্য খাতে ব্যয় করা যায় না। অনেক সময় দেখা যায় যন্ত্র-পাতি কেনার টাকা রয়ে গেছে কিন্তু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা শেষ, কিন্তু টাকা থাকা স্বত্তেও তা অন্য খাতের হওয়ায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্যয় করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে বরাদ্দ ব্যয়ের প্রক্রিয়া আরেকটু সহজ হলে এবং একখাতের বরাদ্দ অন্য খাতে ব্যয়ের সুযোগ দিলে বাজেট ফেরত যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না।’

এর আগে, গত পহেলা জুন জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যা ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, মানসম্মত ও জনবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গিকার। এটি বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে আগামী ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলো।

এসএস

 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক