দাগবিহীন থাইরয়েড সার্জারি: বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ইতিহাস সৃষ্টি ডা. মাহবুবের
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দাগবিহীন এন্ডোসকপি থাইরয়েড সার্জারি সম্পন্ন হয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইতিহাস গড়া এ অস্ত্রোপচার হয়। সফল এই সার্জারিতে নেতৃত্ব দেন আবাসিক সার্জন ডা. মাহবুব আলম। এর মাধ্যমে নাক-কান-গলা বিভাগের চিকিৎসায় নতুন যুগের সূচনা হলো।
দেশে এই অস্ত্রোপচারের সম্ভাবনাসহ নানা দিক নিয়ে মেডিভয়েসের সঙ্গে আলাপ হয় বিদেশে প্রশিক্ষণ নেওয়া এ চিকিৎসকের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাখাওয়াত আল হোসাইন।
মেডিভয়েস: দেশে প্রথম দাগবিহীন এন্ডোসকপি থাইরয়েড সার্জারি করলেন, আপনার অনুভূতি জানতে চাই?
ডা. মাহবুব আলম: আমি খুবই অবিভূত। এই বিষয়টা নিয়ে অনেক দিন ধরে কাজ করছিলাম। হিউম্যান বডি এবং ডেড বডির ওপর কাজ করেছি। দেশে কীভাবে কাজটা শুরু করা যায়, এটা দীর্ঘ দিন ধরে ভাবছিলাম। দেশে আমার হাত ধরে প্রথম দাগবিহীন থাইরয়েড সার্জারি হলো, এটা চমৎকার একটা অনুভূতি। এটা অনেক দূর এগিয়ে নিতে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। জুনিয়র যারা আছে, তারা অনেকেই এটা নিয়ে কাজ করবে।
মেডিভয়েস: জটিল অস্ত্রোপচারের অনুপ্রেরণা কোথায় পেলেন, প্রশিক্ষণের গল্পটা শুনতে চাই?
ডা. মাহবুব আলম: আমার রোগীরাই হলো, সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। অনেক রোগী এসে বলেন, স্যার গলা কেটে অপারেশন করবো, এর দাগ তো থেকে যায়। এটা ভাবতে গেলে খারাপ লাগে, এর বিকল্প কিছু করা যায় না? তখন ভাবলাম, এ নিয়ে কিছু করতে পারি কিনা! সিঙ্গাপুর, আমেরিকা ও থাইল্যান্ডে দাগবিহীন সার্জারি হয়। তারা ঠোঁটের নিচ দিয়ে ফুটো করে। আমিও শেখার জন্য খুব আগ্রহ প্রকাশ করলাম। অনেক অধ্যাপকের সঙ্গেও আলাপ করলাম, কিভাবে কী করা যায়? বাংলাদেশে কেউ করে কিনা। এ বিষয়ে খোঁজ নিলাম, কিন্তু কোনো ইতিহাস পেলাম না। সেই সঙ্গে তারা বললেন, এটা শিখতে হলে তোমাকে কোরিয়া কিংবা চীন থেকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। মনে মনে ভাবলাম, এটা আমার পক্ষে সম্ভব। এরপর কিছু দিন আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রশিক্ষণে গিয়েছিলাম। সেখানে দুটি সেন্টারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে কাজ করি। সেখান থেকে শিখে আসার পর আমি মৃতদেহের উপর চেষ্টা চালাই। এরপর সার্জারিটা হিউম্যান বডিতে প্রয়োগ করি।
মেডিভয়েস: নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো, এর ফলে রোগীরা কতটুকু উপকৃত হবেন?
ডা. মাহবুব আলম: রোগীরা অবশ্যই উপকৃত হবেন। থায়রয়েডের স্বাভাবিক সার্জারির পর আপনি যখন দেখবেন, আপনার গলার সামনে কাটা দাগ, তখন একটু হলেও অস্বস্তি বোধ করবেন। ঘাড়টা একটু লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন বা কিছু দিয়ে ঢেকে রাখতে চাইবেন। আপনার মনের মধ্যে একটা খুঁতখুঁতে ভাব থাকবে যে, আমার এই জায়গাটা কাটা। দাগবিহীন এই সার্জারি ফলে রোগী এবং তাঁর স্বজন খুশি থাকবেন।
মেডিভয়েস: বাংলাদেশে এই চিকিৎসার সম্ভাবনা কেমন, প্রতিবন্ধকতা দেখছেন কিসে?
ডা. মাহবুব আলম: বাংলাদেশে এই চিকিৎসার সম্ভাবনা অনেক। কারণ নতুন একটা পদ্ধতি, যা এর আগে কখনও বাংলাদেশে প্রয়োগ হয়নি। আমাদের ইএনটি সার্জনরা এটাকে খুব ভালোভাবে নিয়েছেন এবং এটা ভালো একটা সার্জারি। তবে এর কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, এই সার্জারির বেশ কিছু যন্ত্রপাতি বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। আমি অবশ্য অনেকগুলো যন্ত্রপাতি দক্ষিণ কোরিয়া থেকে নিয়ে এসেছি। দেশে এই সার্জারির প্রচলন বেড়ে গেলে পরবর্তী অর্ডার দিয়ে আরও আনা যাবে।
মেডিভয়েস: এই সার্জারি নিয়মিত করার পরিকল্পনা আছে কিনা, মাসে কতটি করা সম্ভব?
ডা. মাহবুব আলম: এটি হলো, একটি রুটিন অস্ত্রোপচার। কোরিয়ায় দেখেছি, তারা দৈনিক তিন বা চারটা করে করেন। সেখানে প্রতিদিনই এসব অপারেশন করতে হয়, বিশেষ আলাদা কিছু নয়। প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর হলে টনসিল বা নাকের অপারেশনের মতোই বাংলাদেশেই নিয়মিত এটা করা সম্ভব। রোগী থাকলে প্রতিদিন একজন চিকিৎসক দুই বা তিনটা অস্ত্রোপচার করতে পারবেন।
মেডিভয়েস: সার্জারি করা রোগীটির সার্বিক পরিস্থিতি জানাবেন।
ডা. মাহবুব আলম: রোগী বর্তমানে খুবই ভালো এবং সুস্থ আছেন। অন্যান্য অপারেশনের মতো সার্জারির পর কিছুটা ব্যথা ছিল, এ ছাড়া অন্য কোনো সমস্যা হয়নি। অপারেশনের পর দিন থেকেই রোগী হাঁটাহাঁটি করছেন এবং খাওয়া-দাওয়া করতে পারছেন।
মেডিভয়েস: দেশে এর চিকিৎসা ব্যয় কেমন? খরচ কমিয়ে আনতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
ডা. মাহবুব আলম: আমি মনে করি এই চিকিৎসায় ব্যয় বেশি নয়। কেটে যে অপারেশনগুলো করি, তার চেয়ে সামান্য কিছু বেশি ব্যয় হচ্ছে। আর অস্ত্রোপচারের সংখ্যা বাড়াতে ব্যয় কমানোর জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ কিছু যন্ত্রপাতি রয়েছে, সেগুলো সরকার থেকে সরবারাহ করা হলে আমরা সহজেই এই সার্জারিগুলো করতে পারবো। রোগীরাও সরকারিভাবে চিকিৎসা নিতে পারবে, এতে খরচও কমে আসবে।
এমইউ
-
২৪ মার্চ, ২০২৪
-
২৪ মার্চ, ২০২৪
-
৩১ অগাস্ট, ২০২৩
-
২৬ জুলাই, ২০২৩
-
০৭ মার্চ, ২০২৩
-
২৯ অক্টোবর, ২০২২
-
০১ সেপ্টেম্বর, ২০২২
-
১৬ জুন, ২০২০