১১ অগাস্ট, ২০২২ ০৪:০১ পিএম

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালকের সম্ভাব্য তালিকায় যারা

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালকের সম্ভাব্য তালিকায় যারা
অধ্যাপক ডা. এ কে এম আমিরুল মোরশেদ খসরু, অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা, অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির। (বাম দিক থেকে)

মো. মনির উদ্দিন: সরকারি চাকরির বয়স শেষ হওয়ায় গত ৭ আগস্ট অবসর গ্রহণ করেছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন।

তাঁর অবসর নিয়ে তেমন আলোচনা না থাকলেও, কে হচ্ছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরবর্তী মহাপরিচালক—তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে বেশ কৌতুহল।

অধ্যাপক এনায়েত হোসেনের অবসর গ্রহণের পর থেকেই সম্ভাব্য নতুন মহাপরিচালক হিসেবে শোনা যাচ্ছে অনেকের নাম।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা মেডিভয়েসকে জানিয়েছেন, মহাপরিচালক পদের জন্য অনেকেই প্রত্যাশী। তবে সরকার যাকে বিবেচনা করবে তিনিই দায়িত্ব পাবেন। 

একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘ডিজি অবসর গ্রহণ করায় নতুন একজন তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন। এ জন্য নিয়ম অনুযায়ী, প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। সেখানে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. এ কে এম আমিরুল মোরশেদ খসরু, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞার নাম রয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে দেবেন, তিনিই মহাপরিচালক হবেন।’

এসব নামের সঙ্গে আরও কয়েকজনের নাম যুক্ত করে আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, ‘সরকার যাকে উপযুক্ত মনে করবে তাকেই দায়িত্ব দেবে।’

এ সূত্রের দাবি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুইজন এডিজি এবং ঢামেক অধ্যক্ষ টিটো মিঞা ছাড়াও মহাপরিচালক পদের জন্য কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন: জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম‌‍) পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়েজীদ খুরশীদ রিয়াজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের (এসএসএমসি) অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নুরুল হুদা লেলিন।

এই দুইজনের দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার কথা তুলে ধরে সূত্রটি জানিয়েছে, দু’জনেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে কাজের জন্য বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন। 

তবে সরকার কাকে প্রধান করে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। মহাপরিচালক হিসেবে এর বাইরেও নতুন কোনো নাম চলে আসতে পারে। সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির বলেন, ‘পদাধিকার বলে আমার নাম ওই প্রস্তাবনায় আছে।’

দীর্ঘদিন ধরে অধিদপ্তরে কাজ করছেন, সে হিসেবে ডিজি হওয়ার বিষয়ে আপনি কতটুকু আশাবাদী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কেমন কাজ করছি, তা বলতে পারবো না। এটা মূল্যায়ন করার মালিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যোগ্য মনে করলে তিনি আমাকে দেবেন, এখানে আমার ব্যক্তিগত কোনো দাবি নেই।’

দায়িত্ব পেলে কোন কোন বিষয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ শুরু করবেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, মেডিকেল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়ন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চিকিৎসকদের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে যাচ্ছে। এতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা, এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অধিভুক্ত না হয়েও শিক্ষার্থী ভর্তি করানো সুস্পষ্ট অপরাধ। দায়িত্ব পেলে বিএমডিসির সহযোগিতায় এসব কলেজের তালিকা সংগ্রহ করে তাদেরকে বাদ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। শর্তগুলো পূরণ না করলে কেন তাদের জিইয়ে রাখবো? মেডিকেল কলেজগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যই হলো, মান যেন বজায় থাকে। পর্যাপ্ত শিক্ষক আছে কিনা, বই আছে কিনা, রোগী আছে কিনা—এসব নিশ্চিত না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আড়াইশ’ শয্যার হাসপাতালে যদি দুইশ’ রোগীও না থাকে, তাহলে ছেলে-মেয়েরা কোথা থেকে শিখবে?

এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের দায়িত্ব রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এক পক্ষ মামলা করলে আরেক পক্ষকে তৎপরতা দেখাতে হবে। আমাদেরকে আদালতে গিয়ে বোঝাতে হবে যে, তারা শর্তগুলো পূরণ করে না বলেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আদালতকে বোঝাতে ব্যর্থ হলে, এর দায় তো আমার। আমাদেরকে ভালো আইনবিদ নিয়োগ দিতে হবে।  এ ছাড়াও অনুমোদনহীন কলেজের নাম উল্লেখ করে আমাদের বিজ্ঞাপন দেওয়া উচিত, যে এখানে শিক্ষার্থী ভর্তি করাবেন না। তা না হলে গ্রামের পয়সাওয়ালা একজন মানুষ তো অনুমোদনহীন কিংবা মানহীন বিষয়টি বুঝবেন না। তিনি তার সন্তান ভর্তি করিয়ে প্রতারিত হবেন। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর এ দায়িত্ব এড়াতে পারে না।’

সম্ভাব্য নতুন স্বাস্থ্য ডিজি হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞার নামও।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা এখনও বলার মতো কিছু না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, কিংবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর—আমাকে যখন যেখানে দায়িত্ব দেবেন, আমি সেটা পালন করতে সদা প্রস্তুত আছি। আমি যেখানে আছি, কিংবা অন্য কোনো খানে, যে পদেই হোক? আমি দায়িত্ব পালনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবো।’

আপনি স্বাস্থ্য শিক্ষার মহাপরিচালক পদে আসীন হলে কোন কোন বিষয়কে অধিকতর গুরুত্ব দেবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী, সচিব, আমাদের অধ্যক্ষগণ এবং মেডিকেল শিক্ষার সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন; তাদের পরামর্শ অনুযায়ী, কাজগুলো এগিয়ে নেবো। আমার বরাবরই লক্ষ্য হলো, এমবিবিএস শিক্ষার মানকে একটি স্ট্যান্ডার্ড অবস্থায় উন্নীত করা। সেই লক্ষ্যে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত নিশ্চিত ও শিক্ষকগণকে প্রশিক্ষিত করা। মানসম্মত সেবার লক্ষ্যে প্রতিটি মেডিকেল কলেজের পাশেই যেন রোগী দেখার পর্যাপ্ত সুযোগ থাকে। অর্থাৎ শিক্ষার পাশাপাশি প্রশিক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা করা।’

অনুমোদনহীন কলেজগুলোর বিষয়ে নিজের ভাবনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের নির্দেশক্রমে উদ্যোগ নেবো, এখানে বিএমডিসির সিদ্ধান্তও আছে। সবার সমন্বয়ে আমরা চাইবো একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে। এ ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, যা হওয়া উচিত আমরা তাই অনুসরণ করবো।’

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত