বন্যার্তদের পাশে চিকিৎসকরা: ত্রাণ বিতরণ ও বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা

সালাহউদ্দীন কাদের: বিগত ১০০ বছরের ইতিহাসকে হার মানিয়েছে এ বারের সিলেটে বন্যা। বন্যার এ রকম ভয়াবহতা সিলেটবাসী এর আগে কখনো দেখেনি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা। এ ছাড়াও সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট জকিগঞ্জ, সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমাসহ সবকটি এলাকা প্লাবিত হয়। দুর্বিষহ হয়ে পড়ে এসব অঞ্চলের মানুষের জীবনযাপন। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ফলে ভোগান্তির আরও বেড়ে যায়। এক উপজেলার সঙ্গে অন্য উপজেলার জন্য যোগাযোগের সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। বানভাসিরা আশ্রয় নিয়েছিলেন বিভিন্ন বাঁধ, আশ্রয় কেন্দ্র, স্কুল ও মসজিদ-মাদ্রাসায়। বিশুদ্ধ পানির সংকটের পাশাপাশি তাদের খাদ্যসংকটও দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় মারা গেছে ১২৭ জন। অসুস্থ হয়ে পড়ে প্রায় ১ লাখ ২৩ হাজার ৩০২ জনের মতো।
সংকট মোকাবিলায় বন্যার্তদের সহযোগিতায় সাধারণ মানুষ, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পাশাপাশি এগিয়ে আসে চিকিৎসকদের সংগঠনগুলো। তারা ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি চালিয়েছেন বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবাও।
৬ হাজার প্যাকেট খাদ্য বিতরণ বিডিএফ’র
বন্যাদুর্গত এলাকায় নিজেদের কার্যক্রম তুলে ধরে চিকিৎসকদের অন্যতম সংগঠন বাংলাদেশ ডক্টর ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) যুগ্ম মহাসচিব ডা. জুয়েল আলিম মেডিভয়েসকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে চার হাজার প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী নিয়ে গিয়েছিলাম। আমরা একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে এসব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছি। এ ছাড়াও সিলেটে যে সব চিকৎসক আছেন, তারা সংগঠনের পক্ষ থেকে আরও দুই হাজার প্যাকেট ত্রাণ বন্যার্তদের মাঝে পৈাঁছে দিয়েছেন।
পানিবন্দি হয়েও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান
বিডিএফ যুগ্ম মহাসচিব জানান, অনেক চিকিৎসক দুর্গত এলাকায় পানিবন্দি হয়ে গিয়েছিলেন। উল্লেখ করার বিষয় হলো, তাঁরা সেখানে থেকেই বন্যার্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদান চালিয়ে যান। সবার কাজকর্ম বন্ধ থাকলেও নৈতিকতার জায়গা থেকে চিকিৎসকরা স্বাস্থ্যসেবা চালিয়ে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, বন্যার পানি ইতোমধ্যে নেমে গেছে। তাই আমরা চিকিৎসা সেবা আরও বেগবান করেছি। প্রায় প্রতিদিনই প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থানীয় চিকিৎসকদের মাধ্যমে সেবা প্রাদান করে যাচ্ছে।
এফডিএসআর’র সাড়ে ৩ লাখ টাকার ত্রাণ
চিকিৎসকদের আরেক সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিটিলিস’র (এফডিএসআর) মহাসচিব ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন মেডিভয়েসকে বলেন, তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে মূলত ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৬০০ পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, তেল, শুকনো খাবার, খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছিল। এ ত্রাণের পরিমাণ ছিল প্রায় তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা।
এ ছাড়া চিকিৎসা সাহায্যের জন্য দুটি হেল্থ ক্যাম্প করা হয়েছিল। প্রতি ক্যাম্পে সাতজন করে চিকিৎসক ছিলেন।
সংগঠনটির কাজ এখনো অব্যাহত আছে জানিয়ে এ পেশাজীবী নেতা বলেন, সিলেটে খুবই অসহায় তিনটি গ্রামের ১৫টি পরিবারকে বাছাই করা হয়েছে। তাদেরকে ঘর করে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এ জন্য প্রায় তিন লাখ টাকা বাজেট ধরা করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো বরাদ্দ বাড়ানো হবে।
অন্যান্য সংগঠনের তৎপরতা
ন্যাশনাল ডক্টর’স ফোরামের (এনডিএফ) সেক্রেটারি ডা. সাজিদ আব্দুল খালেক মেডিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা বন্যার্তদের সহযোগিতা করার জন্য কাজ দুইভাগে ভাগ করে নিয়েছিলাম। প্রথমত, বন্যা যখন ব্যাপকভাবে শুরু হয়, তখন ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চালিয়েছিলাম। বিশেষ করে প্রায় লক্ষাধিক টাকার শুকনো খাবার, খাদ্যদ্রব্য এবং মিনারেল ওয়াটার বিতরণ করা হয়েছিল।
দ্বিতীয়ত, আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে যারা অসুস্থ হয়েছিল তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। ঢাকা থেকে মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছিল। পাশাপাশি স্থানীয় চিকিৎসকদের সহযোগিতা নেওয়া হয়।
‘এ ছাড়া বন্যার পানি যখন নামতে শুরু করে, তখন চিকিৎসা সেবা আরও জোড়ালোভাবে শুরু করি। প্রতিদিন তিনটি মেডিকেল ক্যাম্প কাজ করেছিল। সেখানে ৭০০ থেকে ৭৫০ রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে এবং বিনামূল্যে তাদের ওষুধসহ নানা চিকিৎসা সামগ্রী প্রদান করা হয়। এ ছাড়াও প্রয়োজন অনুযায়ী রোগীদের প্যারাসিটামল, অ্যান্টি আলসারেন্ট, অ্যান্টিবায়টিক, অ্যান্টি ফাঙ্গাল, আয়রন ও ক্যালসিয়ামসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু ওষুধ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়’, যোগ করেন তিনি।
ডা. সাজিদ আব্দুল খালেক আরও বলেন, ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেশি চিকিৎসা আসতো। এখনো দেখা যাচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রয়েছে।
এ ছাড়াও ইন্টার্ন ডক্টরস ফোরাম-বারডেমের উদ্যোগে সিলেটে বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চালানো হয়। তারা মোট ১৯৯টি পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে। প্রতিটি পরিবারকে ৫ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি আলু, ১ লিটার সয়াবিন তেল, মুড়ি, গুড়, সরিষার তেল, বিস্কুট, খাবার স্যালাইন, মোমবাতিসহ জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করেন। যাদের ত্রাণ দেওয়া সম্ভব হয়নি, তাদেরকেও খালি হতে ফেরত না পাঠিয়ে এই পরিবারগুলোর মাঝে ১৪ হাজার ৬০০ টাকার আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়। ত্রাণ কার্যক্রম শেষে স্থানীয় স্কুলের বারান্দা এবং একটি শ্রেণীকক্ষে হেলথ ক্যাম্প পরিচালনা করে সংগঠনটি।
প্রসঙ্গত, বন্যার শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৭৪০ জন। আর মৃত্যু হয়েছে একজনের। আর.টি.আইয়ে (চোখের রোগ) আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ১৯৮ জন। তবে এতে কারও মৃত্যু হয়নি। বন্যার সময়ে বজ্রপাতে আক্রান্ত ১৬ ও মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। সাপে কেটেছে ৩২ জনকে। তাদের মধ্যে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। আর পানিতে ডুবে আক্রান্ত ৭৭ এবং মৃত্যু হয়েছে ১০০ জনের। চর্মরোগে আক্রান্ত দুই হাজার ৮১৫ এবং চোখের প্রদাহজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৯৭ জন।
-
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
-
২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
-
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
-
২৮ অগাস্ট, ২০২২
-
২০ জুলাই, ২০২২
-
১৭ জুলাই, ২০২২
-
১৫ জুলাই, ২০২২
-
১৪ জুলাই, ২০২২
