২৭ জুন, ২০২১ ০৫:১১ পিএম

সরকারি গাড়িতে চিকিৎসকদের আনা-নেওয়ার দাবি 

সরকারি গাড়িতে চিকিৎসকদের আনা-নেওয়ার দাবি 
ছবি: সংগৃহীত

সাখাওয়াত আল হোসাইন: করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে আগামীকাল থেকে সীমিত পরিসরে এবং বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। নতুন লকডাউন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ও লকডাউনের নির্দেশনা পালনে গতবারের চেয়ে পুলিশ আরও কঠোর হবে। বিধিনিষেধ চলাকালে জরুরি প্রয়োজনে চলাচলের জন্য ‘মুভমেন্ট পাস’ চালু থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

লকডাউন চলাকালে বিশেষ কয়েকটি কারণে এবং পুলিশের দেওয়া মুভমেন্ট পাস ছাড়া এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া যাবে না। 

কঠোর লকডাউনে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজের পরিধি বহুগুণে বেড়ে যাবে। এতে হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। তাই চিকিৎসকদের দাবি, বারবার মুভমেন্ট পাস নয়, স্থায়ী মুভমেন্ট পাস বা বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘পুলিশ-প্রশাসনের জন্য যদি সব জায়গায় মুভমেন্ট পাস চালু করা হয়। তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা যাবে না। আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর কোনো মুভমেন্ট পাসের কোনো প্রয়োজন হয় না। তারা যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে যেতে পারে।’

কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য নিরবচ্ছিন্ন যাতায়াত ব্যবস্থা প্রয়োজন এবং হয়রানির বন্ধের লক্ষ্যে যেসব চিকিৎসকের ব্যক্তিগত গাড়ি নেই তাদের জন্য সরকারিভাবে যাতায়াতের ব্যবস্থা করারও মতামত দিয়েছেন তারা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এবং চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন  বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল মেডিভয়েসকে বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে সকল চিকিৎসকের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা বাস্তবে সম্ভব নয়। কিন্তু যেসব জায়গায় লকডাউনের কারণে চিকিৎসকরা কর্মস্থলে যেতে পারবেন না। সেসব জায়গায় চিকিৎসকদের জন্য সরকারিভাবে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক চিকিৎসকের ব্যক্তিগত গাড়ি নাই। ওই চিকিৎসক রাস্থায় বের হওয়ার পর যাতায়াতের বাহন না পায়, তাহলে সে কর্মস্থলে যাবে কিভাবে? সরকারের বিভিন্ন পুলের গাড়ি আছে। সেই গাড়ি দিয়ে তাদের (চিকিৎসকদের) বহন করা উচিত। কারণ এই সময়ে সরকারি-বেসরকারি সকল অফিস-আদালত বন্ধ। সুতরাং এই গাড়িগুলোতো কঠোর লকডাউনে পরে থাকবে। অতএব এ গাড়িগুলো দিয়ে সকল চিকিৎসকের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা উচিত। তাহলে আর চিকিৎকদের মুভমেন্ট পাসের বিড়ম্ভনা থাকবে না। কিন্তু এই পাস দেখাতে গিয়ে যদি আবারও তারা বিড়ম্ভনা শিকার হন। এগুলো সংশ্লিষ্টদের বিভ্রান্ত করবে এবং সরকারকে বিব্রত করবে। এতে চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’

ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘করোনা একটা রোগ, এ রোগের আশ্রয়স্থল হলো চিকিৎসক। আর সাথে যে কাজগুলো হচ্ছে সেগুলো হলো সেকেন্ডারি। সুতরাং চিকিৎসকদের চলাচল যদি নির্বিঘ্নে যাতায়াতের ব্যবস্থা না করা যায় এবং সহজ করা না যায় তাহলে লকডাউন দেওয়ার মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে।’

চিকিৎসকের বারবার মুভমেন্ট পাস নেওয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই উল্লেখ করে প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মেডিভয়েসকে বলেন, ‘মুভমেন্ট পাস দেওয়া হলে চিকিৎকদের জন্য চলাফেরা করতে খুবই কষ্ট হবে। এবারের লকডাউন হলো শাটডাউন। শুনছি, এবার অফিস-আদালত সব বন্ধ থাকবে। আর মুভমেন্ট পাস ছাড়া বাহিরে যেতে দেওয়া হবে না।’

মুভমেন্ট পাসের নামে চিকিৎসক হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি চিকিৎসক। আমার বাহিরে যাওয়ার প্রয়োজন নাই, কিন্তু যে চিকিৎসক হাসপাতালে কাজ করে তাদেরকে তো হাসপাতালে যেতে হবে। হাসপাতাল থেকে তাদেরকে পাস দেওয়া উচিত, যা দেখলে পুলিশ কোনো বাধা দেবে না। বারবার মুভমেন্ট পাস নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

কঠোর লকডাউনে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকদের যাতায়াতের সুব্যবস্থা করা উচিত মনে করেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন। 

তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকরা যখন দায়িত্ব পালন করতে যাবেন, তাঁর গাড়িতে যদি কোনো চিহ্ন থাকে তাহলে মুভমেন্ট পাস দেওয়ার দরকার হয় না। চিকিৎসকরা তাঁদের প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র দেখালেই যথেষ্ট। এখন যারা প্রাইভেট চিকিৎসক বা চেম্বার করেন তাদের বেলায় প্রচুর সমস্যা হবে। তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাদেরকে স্থায়ী পাসের ব্যবস্থা করতে হবে।’

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : মুভমেন্ট পাস
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক