সংস্কার কাজে অস্বাভাবিক খরচ নিয়ে যা বললেন ঢামেকের সাবেক অধ্যক্ষ
মেডিভয়েস রিপোর্ট: ঢাকা মেডিকেল কলেজের শৌচাগারসহ বিভিন্ন সংস্কার কাজে অস্বাভাবিক খরচে নিজের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন কাজ তদারক কমিটির সভাপতি ও ঢামেকের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. শফিকুল আলম চৌধুরী। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মেডিভয়েসকে এ কথা বলেন তিনি।
এটা অনিয়ম হিসেবে চিহ্নিত হলে আপনারা স্বাক্ষরকারী হিসেবে দায়ী হবেন কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুনেন, আমরা কাজের চাহিদা দিলে মন্ত্রণালয় মূল্যায়ন করে। তারা সঠিক মনে করলে অনুমোদন দেয়। অন্যথায় দেয় না। পিডব্লিউডি টেন্ডারসহ কাজ বাস্তবায়ন করে। এখানে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই। কাজেই আমাদের তরফে অনিয়মের বিষয়ে এখানে কোনো প্রশ্ন নেই। অনৈতিক উপায়ে অর্থ নেওয়ার ব্যাপারে আমি মোটেও জড়িত নই।’
জিমনেসিয়ামের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক শফিকুল আলম বলেন, ‘জিমনেসিয়ামের অস্তিত্ব খুঁজে না পাওয়ার বিষয়টি ঠিক নয়। এটা পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। আমরা এর সংস্কার করে রিডিং রুমে পরিণত করেছি।’
রিডিং রুম সরেজমিনে দেখে আমাদের মনে হয়েছে, এখানে বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে। কাজের তুলনায় এর খরচকে আপনি অস্বাভাবিক মনে করেন কিনা? এ ব্যাপার তাঁর উত্তর, ‘এভাবে তো আমি বলতে পারবো না। আপনাকে কাজের পরিমাণ দেখতে হবে। কাজটা সম্পন্ন হয়েছে কিনা, সেটাই আমরা দেখি। টাকা পয়সা কিন্তু আমাদের দেখার ব্যাপার না। ওটা শতভাগ পিডব্লিউডি ও মন্তণালয়ের ব্যাপার।’
এ পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধানদেরও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন অধ্যাপক ডা. শফিকুল আলম। বলেন, ‘ডিপার্টমেন্টের লোক সন্তুষ্ট হয়েই আমাদেরকে বলেছে, এর পর আমরা সই করেছি। কাজ তো তাদের বিভাগেই হয়েছে। তবে খরচের বিষয়ে তারা অবগত কিনা, আমি নিশ্চিত না।’
প্রসঙ্গত, ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতাধীন গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেলের অবকাঠামো উন্নয়নে স্থাপনাগুলোর মেরামত ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে গত বছরের ১৯ জুন ঢামেকের তৎকালীন উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. শফিকুল আলম চৌধুরী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অর্থ বরাদ্দের আবেদন করেন।
পরে নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ও মেডিকেল কলেজ গণপূর্ত বিভাগ একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করে। কাজ তদারকির জন্য ঢামেকের তৎকালীন উপাধ্যক্ষ (পরে অধ্যক্ষ হন) ডা. মো. শফিকুল আলম চৌধুরীকে সভাপতি করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মেডিসিন অনুষদের ডিন ডা. শাহরিয়ার নবীকে সদস্য এবং ইউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রদ্যুত কুমার সাহাকে সদস্য সচিব করা হয়।
তদারক কমিটি গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর গণপূর্ত অধিদপ্তরের অধীনে স্থানীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শেষ হওয়া সংস্কার/মেরামত কাজ সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদান করে। অনুমোদনের একটি কপি মেডিভয়েসের কাছে এসেছে, যেখানে অর্থ ব্যয়ের সঙ্গে কাজের মানের রয়েছে বিশাল পার্থক্য।
তালিকা অনুযায়ী, ঢামেকের ডা. ফজলে রাব্বি হলের ডি-ব্লকে ৮টি কক্ষে চারটা শৌচাগারের টাইলস মেরামতের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭ লাখ টাকা। ডা. আলীম চৌধুরী (নতুন) ছাত্রী হোস্টেলের বাথরুম ও শৌচাগার সংস্কার, টাইলসকরণ ও স্যানিটারি ফিটিংস বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। ডা. মিলন ইন্টার্নি ছাত্রী হোস্টেলের বাথরুম ও শৌচাগারে টাইলস লাগানো ও স্যানিটারি ফিটিংস সংস্কারে খরচ করা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা।
এ ছাড়া ছাত্রী হোস্টেলের ক্যান্টিনের শৌচাগার মেরামতে ১২ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। কাজের অনুমোদনপত্রে সবমিলে সাতটি শৌচাগার মেরামতের নামে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকার খরচ দেখানো হয়।
মেডিকেল কলেজের দক্ষিণ পাশের ভেতরের চত্বরসংলগ্ন অংশের নিচতলা থেকে চতুর্থতলা পর্যন্ত কাঠের জানালার পরিবর্তে থাই অ্যালুমিনিয়ামের জানালা স্থাপনে ১৭ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। একইভাবে টিচার্স লাউঞ্জ সংস্কারে ১২ লাখ টাকা, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের বিভিন্ন কক্ষ সংস্কারসহ আনুষঙ্গিক কাজে ২৪ লাখ টাকা, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভিন্ন কক্ষ সংস্কারসহ আনুষঙ্গিক কাজে ১২ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে।
কলেজের সম্মুখ অংশের সীমানা প্রাচীর সংস্কার ও আধুনিকায়নসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজে ২৫ লাখ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। ডা. ফজলে রাব্বি ছাত্রাবাসের প্রধান ভবনের জিমনেসিয়াম কক্ষের মেরামত ও সংস্কারসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজে ২৫ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। সবমিলে (শৌচাগার মেরামতের খরচের বাইরে) কাজগুলোতে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে।
এমইউ/