অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান

অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান

বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ


১৭ মে, ২০২৩ ০৪:২১ পিএম

হঠাৎ উচ্চ রক্তচাপ হলে করণীয়

হঠাৎ উচ্চ রক্তচাপ হলে করণীয়
প্রত্যেক মানুষের নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। যেমন-হাঁটাহাঁটি করা, সাঁতার কাটা, সাইক্লিং করা, জগিং করা, এই ধরনের ব্যায়ামকে আমরা বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। ভার উত্তোলন উচ্চ রক্তচাপের সহায়ক কোনো ব্যায়াম নয়।

অনেক কারণেই হঠাৎ রক্তচাপ বাড়তে পারে। মানুষের পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে চাপ বাড়ছে, ঘুম কম হচ্ছে, রাত জাগার অভ্যাস বাড়ছে, সব কিছু মিলে প্রেশার বাড়তেই পারে। তবে দেখতে হবে কতটুকু বাড়ছে। কেউ যদি আগে থেকে ওষুধ না খেয়ে থাকেন, হঠাৎ করে প্রেশার বেড়ে যায় এবং প্রথম দিকে যদি অল্প বাড়ে, তাহলে জীবন-যাপনের পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আর যদি হঠাৎ করে একেবারে বেশি বেড়ে যায়, তখন চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপ কী

মানুষের শরীরেই স্বাভাবিক রক্তচাপ থাকে। তবে সিস্টোলিক ব্লাড প্রেশার ১৪০ মি.মি মার্কারির উপরে এবং ডায়াস্টলিক ব্লাড প্রেশার ৯০ মি.মি মার্কারি বেশি হলে, সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ বলে। বিভিন্ন গাইড লাইনে এ মাত্রা কিছুটা কম বেশি আছে, কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশে গাইড লাইন প্রোটোকল এবং বিশ্বের অধিকাংশ গাইড লাইনে এই মাত্রাকে উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে ধরা হয়েছে। উপরে ১২০ আর নিচে ৮০’র মধ্যে প্রেশার রাখতে পারলে ভালো।

কারণ

উচ্চ রক্তচাপের বেশ কিছু কারণ আছে। এর মধ্যে প্রাইমারি বা এসেন্সিয়াল হাইপার টেনশন একটি। তবে এ প্রাইমারি উচ্চ রক্তচাপ কি কারণে হয়, তা পুরোপুরি জানা যায় না। হয়ত বাবা-মায়ের উচ্চ রক্তচাপ আছে সন্তানেরও হতে পারে, কায়িক পরিশ্রমে ও খাদ্যাভ্যাস ঠিক না থাকলে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পেয়ে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। এ ছাড়া আরেকটি কারণ হলো- ছোট বেলা অনেকের উচ্চ রক্তচাপ হয়। বিশেষ করে সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন। হয়ত কারো কিডনি সমস্যা আছে, হরমোন জনিত সমস্যা আছে, শরীরের বিশেষ জায়গার রক্তনালি শুকিয়ে সরু হয়ে গেছে। ফলে রক্তচাপ বাড়ে।

কিছু রক্তচাপ আছে গর্ভধারণের সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন- হয়ত আগে ছিলো না, কিন্তু গর্ভাবস্থায় ২০ থেকে ২২ সপ্তাহে কারো কারো বেড়ে যায়। আর কিছু আছে ওষুধের সাথে সম্পর্কিত। যেমন-অ্যাজমা, হাপানি, ও বাত ব্যাথা আছে এমন রোগীদের দীর্ঘ মেয়াদে ওষুধ সেবনের কারণে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।

লক্ষণ

অনেকের ধারণা শুধু ঘাড় ও মাথা ব্যাথা হলেই উচ্চ রক্তচাপ হয়, কিন্তু আমরা ঘাড় বা মাথা ব্যাথার রোগী মাঝে মাঝে পাই। বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, চোখে সমস্যা হচ্ছে, মাথা ঘুরছে, বুক ধরফর করছে, অস্থির লাগছে ও ঘুম আসছে না। যত মানুষের উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে তার তিন ভাগের এক ভাগের কোনো উপসর্গ থাকে না। অর্থাৎ কোনো উপসর্গ ছাড়াই উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। রোগী হঠাৎ করে অন্য কোনো কারণে চিকিৎসকের কাছে গেছেন, তখন তার উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়েছে। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা আসে একেবারে জটিলতা নিয়ে, যা আগে কখনও জানত না।

ঝুঁকিতে কারা

এখনও যাদের উচ্চ রক্তচাপ হয়নি, কিন্তু ভিতরে ভিতরে বাড়ছে তারা ঝুঁকিতে রয়েছে। অনেকের রক্তচাপ সকাল-বিকাল বেড়ে যায় আবার কমে যায়, কিন্তু নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছেন না, গুরুত্ব দিচ্ছেন না, অনেকে ওষুধ খাচ্ছেন কিন্তু নিয়ন্ত্রণে থাকছে না এরা ঝুঁকিতে আছেন। আবার কারো অনেক বেশি উচ্চ রক্তচাপ, তবে তারা ওষুধ খাচ্ছেন না। মাঝে মাঝে ওষুধ খায় আবার একটু কমলে বাদ দিয়ে দিচ্ছেন, এরা সবাই ঝুঁকিতে। পরিবারের কারো হৃদরোগের সাথে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি থাকলে, তাদের স্ক্রিনিং টেস্ট করতে হবে। প্রত্যেকের উচিত উচ্চ রক্তচাপ মেপে দেখা।

এবারের বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং দীর্ঘজীবী হোন’। সঠিকভাবে বলার কারণ হচ্ছে, সঠিকভাবে ব্লাড প্রেশার মাপা হয় না। প্রথমত কিছু ভুল হয় যন্ত্রপাতি বা চিকিৎসকের কারণে। কিছু ভুল হয় রোগীর কারণে। যেমন- তিন ধরণের যন্ত্র দিয়ে প্রেশার মাপা হয়। এক. এনোরেট, এটির চার রকমের কার্প সাইজ থাকে। যার হাতের বাহু মোটা, তার জন্য এক রকম, মধ্যম মানের এক রকম আর শিশুদের জন্য এক রকম। মানুষ অনুযায়ী কার্প সাইজ নির্ধারণ করে প্রেশার মাপতে হবে, না হলে কম বেশি হবে। আরেকটি আছে অটোমেটেড ব্লাড প্রেশার মেশিন। এটিতেও দেখা যাচ্ছে ভালো রিডিং দিচ্ছে, কিন্তু দেখা যায় হঠাৎ করে ভুল হতে পারে। তৃতীয় হলো মার্কারিং মেশিন, এটা অনেক আগে ছিল, এখন আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে এটা বাদ দিয়েছে। কারণ এই মেশিনে পরিবেশ দূষণ করে, কিন্তু আমাদের দেশে এখনও কোথাও কোথাও পাওয়া যায়। এর মধ্যে এনোরেট মেশিন যেটা আছে, সেটার কাটা দেখবেন শূন্য বরাবর না থেকে আশেপাশে থাকে। এতে সঠিক মাপটা পাওয়া যাচ্ছে না। আরও বিষয় আছে, রিলাক্স মুডে মাপতে হবে, বাইরের জামেলার মধ্যে মাপা যাবে না। রোগীরা চেম্বারে এসে সঙ্গে সঙ্গে বলে স্যার আমার প্রেশার মাপেন। ওই সময়ই মাপলে হবে না। স্বাভাবিক পরিবেশে মাপতে হবে।

এ ছাড়া কারো যদি উচ্চ রক্ত চাপ ধরা পড়ে, তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। নিজের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওষুধ বন্ধ করবেন না। আমাদের দেশে অনেকে নিয়ন্ত্রণে আসলে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তারা বুঝতে পারছেন না যে, ওষুধ খাওয়ার জন্য নিয়ন্ত্রণে আসছে, ওষুধ বন্ধ করলে তার আবার রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।

চিকিৎসা

প্রাইমারি উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসা করালে স্বাভাবিক হয়ে যায়। ব্লাড প্রেশার ১৪০/৯০ থাকলে ওষুধ খেতে হবে, এমন নয়। কারো সিস্টোলিক ১৪৫ আর ডায়াস্টলিক ৯৫ হলে অনেক সময় নন ফার্মাকোলজিকাল কিছু ব্যবস্থা দেওয়া হয়। যেমন- রোগীকে বিশ্রামের জন্য বলা হয়, ঘুমাতে বলা হয়, দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার জন্য বলা হয়। এভাবে আস্তে আস্তে কমে গেলে আর ওষুধ লাগবে না।

যদি দেখা যায়, রোগীর ১৪০/৯০ এর উপরে প্রেশার, তাহলেও আমরা ওষুধ শুরু করি না। আরও বেশি হলে ওষুধ প্রয়োজন হয়। উপসর্গ দেখা দিলে অথবা কারো যদি দেখা যায়, সিস্টোলিক ১৬০ আর ডায়াস্টলিক ১০০ তখন ওষুধ শুরু করতেই হবে। অথবা প্রথমবার মেপেই দেখা যায় রোগীর সিস্টোলিক ১৮০ আর ডায়াস্টলিক ১২০ তখন আর শর্ত বের করতে পারবেন না। একজন চিকিৎসকই ঠিক করবে কখন ওষুধ দিবে, কখন দিবে না।

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ফার্মেসি থেকে ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খেলে যাদের হার্ট বা কিডনিতে সমস্যা আছে, তারা রোগটিকে স্মার্টলি ম্যানেজ করতে পারে না। খুবই দুঃখজনক! দেশে কিডনি রোগী বাড়ছে। তবে এ রোগের চিকিৎসায় তেমন কোনো ওষুধ নেই। যদি উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং ব্যাথা নাশক ওষুধ কম খেলে কিডনি সমস্যা হবে না। স্ট্রোক ও হার্টের বেলায়ও উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে এসব রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। এই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে সিঙ্গাপুর যেতে হবে না, জীবনের শেষ সময় আইসিইউ খুঁজতে হবে না।

কতদিন যাবৎ ওষুধ খেতে হবে

এটি নির্ভর করবে রোগীর প্রোফাইলের উপর। তার রক্ত চাপ আছে কি, নেই। ওষুধ খাওয়ার পর যদি সিস্টোলিক ১২০ এর নিচে থাকে আর ডায়াস্টলিক ৮০ নিচে থাকলে ভালো। কিন্তু এই সময় ওষুধ বন্ধ করা যাবে না। তবে কোনো কারণে যদি রোগীর ডায়রিয়া হয়েছে বা শরীর থেকে লবণ পানি বের হয়ে গেছে, শূন্যতা দেখা দিয়েছে বা প্রেশার হঠাৎ করে বেশি কমে গেছে, তখন ওষুধ বন্ধ করতে হবে। যদি কখনও আবার রক্তচাপ বাড়ে, তখন আমরা রোগী দেখে ওষুধ দিয়ে থাকি। অর্থাৎ রোগীর প্রোফাইল বলে দিবে কার জন্য কোন ওষুধটি এবং কখন ওষুধ শুরু করব কখন বন্ধ করব। এর মানে এই না যে, সারা জীবন ওষুধ খেতে হবে, সেটা দরকার নেই।

জীবন-যাপন পদ্ধতি পরিবর্তনের মাধ্যমে রোগীদেরকে সুস্থ রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকি। অনেক সময় খুব বেশি খারাপ অবস্থায় এসেছে, আমরা দুই তিনটা ওষুধ দিয়েছি। দেখা যায়, আস্তে আস্তে ওষুধ খেতে খেতে উচ্চ রক্তচাপ কমে গেছে, নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করছেন। এতে ওষুধ কমতে কমতে তিনটা থেকে একটিতে চলে আসে। সুতরাং ওষুধ বন্ধ করা নির্ভর করবে রোগীর প্রোফাইলের উপর।

খাদ্যাভ্যাস

সব রোগের জন্যই পরিমিত খাবার ও ক্যালরি হিসেব করতে হবে। একজন মানুষের দৈনিক ২ হাজার ২০০ ক্যালরি প্রয়োজন। ক্যালরি বেশি খেলে শরীরের উদ্বৃত্ত জমা হবে। এতে শরীরের ওজন বাড়বে। শর্করা ও চর্বি জাতীয় খাদ্য পরিমিত খেতে হবে। যদিও উচ্চ রক্তচাপের জন্য গাইড লাইন অনুযায়ী এবং টেক্সট বুকে ড্যাস টাইডে (ডায়েটরি এপ্রোস্ট টু স্টপ হাইপার টেনশন) উচ্চ রক্তচাপের জন্য লবণকে চিহিৃত করা হয়েছে। লবণ উচ্চ রক্তচাপের একটি অন্যতম কারণ। তাই রান্নায় যতটুকু প্রযোজন, এর বাহিরে লবণ খেতে নিষেধ করা হয়েছে।

সুস্থ থাকতে শাক সবজি ও কাচা ফলমূল বেশি বেশি খেতে হবে। যতটা সম্ভব আমরা ক্যালরি ঠিক রাখবো। আশযুক্ত খাবার বেশি প্রাধান্য দিব এবং লবণ একেবারেই বাদ দিতে হবে।

হঠাৎ উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে গেলে করণীয়

অনেক কারণেই হঠাৎ রক্তচাপ বাড়তে পারে। মানুষের পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে চাপ বাড়ছে, ঘুম কম হচ্ছে, রাত জাগার অভ্যাস বাড়ছে, সব কিছু মিলে প্রেশার বাড়তেই পারে। তবে দেখতে হবে কতটুকু বাড়ছে। কেউ যদি আগে থেকে ওষুধ না খেয়ে থাকেন, হঠাৎ করে প্রেশার বেড়ে যায় এবং প্রথম দিকে যদি অল্প বাড়ে, তাহলে জীবন-যাপনের পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আর যদি হঠাৎ করে একেবারে বেশি বেড়ে যায়, তখন চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেতে হবে।

আমরা অনেক সময় মুখে খাওয়ার ওষুধ দেই। অথবা চাপ মুক্ত রাখতে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়। কিন্তু  ১৮০/১১০ প্রেশার থাকলে একটি ওষুধ দিয়ে আস্তে আস্তে প্রেশার কমোনো শুরু করে দেই। অনেক সময় দেখা যায়, এতো বেশি যে ২৫০/১৩০ এতে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি থাকে। অনেক সময় আমরা শিরা পথে ওষুধ দিয়ে প্রেশার কমাই। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের সাধারণত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় না, কিন্তু কখনও কখনও দেখা যায় প্রেশার এতোটাই বেশি থাকে, রোগীদের শিরা পথে ওষুধ দিয়ে জরুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি আমরা।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যায়ামের গুরুত্ব

প্রত্যেক মানুষের নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। যেমন-হাঁটাহাঁটি করা, সাঁতার কাটা, সাইক্লিং করা, জগিং করা, এই ধরনের ব্যায়ামকে আমরা বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। ভার উত্তোলন উচ্চ রক্তচাপের সহায়ক কোনো ব্যায়াম নয়। সেটি অন্যান্য কাজে দিতে পারে। ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে সকাল-বিকাল কোনো বিষয় নেই। ব্যায়াম যেকোনো সময়ই করতে পারেন। সূর্যের আলোতে ব্যায়াম করলে ঘেমে যেতে পারেন, এতে শরীর থেকে লবণ বের হয়ে যেতে পারে। তাই চাইলে সন্ধ্যার পরেও হাঁটতে পারেন। আবার গাইড লাইনে বলা হয়েছে সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট অর্থাৎ ৭ দিনে ৫দিন কেউ যদি ৩০ মিনিট করেও হাটে। তাহলে অবশ্যই তার এটি সহায়ক হবে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ঘরোয়া উপায়

সব কিছুরই ঘরোয়া পদ্ধতি আছে। কারণ সব সময় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া যায় না। মানুষ যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন প্রেশার বাড়বে কমবে এটাই স্বাভাবিক। কখনও স্থির থাকবে না। সারা জীবনই এর সাথে যুদ্ধ করতে হবে। কিন্তু বার বার করে ওষুধ পরিবর্তন করবেন না। বার বার চিকিৎসক দেখানো দরকার নেই। শরীরের নিজস্ব একটা ম্যাকানিজম আছে। যেটি সৃষ্টি কর্তা আমাদের শরীরে মধ্যে দিয়ে দিছেন। সেটিকে আমাদের অবশ্যই স্যালুট দিতে হবে এবং মানতে হবে। যদি কারো ঘুম ঠিকভাবে না হওয়ার কারণে প্রেশার বাড়ে, আমরা তাকে লাইফস্টাইলে ঘুমের পরিবর্তন আনতে বলি। ধর্মীয় অনুশাসন এ ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

অন্য রোগের জন্য ওষুধ খেয়ে থাকলে ওষুধ বাদ দেওয়ার বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ করতে পারেন। আশেপাশের কারো সাথে মনোমালিন্য হলে, সেটি ভুলে যেতে হবে, ঘরে কারো সাথে সম্পর্কের অবনতি হলে স্থির করতে হবে। এই সবকিছু ঘরোয়া পরিবেশের মধ্যেই পড়ে। তারপরেও যদি কারো প্রেশার বেড়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেতে হবে। তখন একা একা বাহাদুরি করা যাবে না। একা একা ওষুধ খাওয়া বাদ দিলে স্ট্রোক হতে পারে।

নিয়ন্ত্রণে করণীয়

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতে হবে। নিয়ন্ত্রণ না থাকলে মাথা থেকে পা পর্যন্ত স্ট্রোক হতে পারে, চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে, হাত-পা প্যারালাইসিস হতে পারে, কিডনি ও হার্টে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া আরও নানা রকমের সমস্যা হতে পারে। তাই উচ্চ রক্তচাপের জন্য সঠিক মাত্রার সঠিক ওষুধ খেতে হবে। কারো যদি অ্যাজমা থাকে, তাকে বিটাব্লক ওষুধ দেওয়া যাবে না, কিডনি সমস্যা থাকলে তাকে এমন ওষুধ দিতে হবে যাতে তার কিডনির সমস্যা না হয়। রক্তে চর্বি থাকলে, তাকে এমন ওষুধ দিতে হবে, যাতে রক্তে কোলেস্টেরল না বাড়ে।

নিম্ন রক্তচাপ রোগীর খাদ্য তালিকা

পাঠ্য বইয়ে লো প্রেশার বলে কোনো শব্দ নেই। আমাদের দেশে মানুষের হয়ত প্রেশার কমে গেলে, ঘাড় ব্যাথা করলে বলে লো প্রেশার। আবার অনেকে চিকিৎসকের কাছে এসে বলেন লো প্রেশার, কিন্তু তার প্রেশার মেপে দেখা যায় ৯০/৬০। কিন্তু এই প্রেশার তার শরীরে মানিয়ে গেছে। এটি তার জন্য লো প্রেশার নয়, এতে কোনো ক্ষতির কারণ নেই।

লো প্রেশার বাড়ানোর কোনো ওষুধ নেই। ঘরোয়া পদ্ধতিতে খাদ্যাভ্যাসের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়। আবার অনেকে লো প্রেশার মনে করে কয়েকদিন পর পর খাবার স্যালাইন, ডিম খাচ্ছেন। এটিও ঠিক না। লো প্রেশার তখন গুরুত্ব দিতে হবে, যখন একজন মানুষের প্রেশার ছিলো ১৮০/ ১১০ অথবা ২০০/১২০ এখান থেকে হঠাৎ করে যদি লো হয়ে যায় তখন আমরা বলব লো প্রেশার। যেটার জন্য অবশ্যই চিকিৎসা করতে হবে। তখন আমরা বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে লো প্রেশার থেকে বাড়ানো চেষ্টা করি। কিন্তু একজন মানুষের উপসর্গ নেই, সব সময় স্বাভাবিক চলাফেরা করছে এটি কোনো লো প্রেশার নয়। তার জন্য নতুন কিছুই করার নেই। তার শরীর এতে এডজাস্ট হয়ে গেছে। এ জন্য কোনো ওষুধের প্রয়োজন নেই।

টিআই/এএইচ

 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : উচ্চ রক্তচাপ
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত