১০ এপ্রিল, ২০২৩ ০৯:২০ পিএম
বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা

পরীক্ষার আগের রাতে সব রিভিশন দেওয়ার চিন্তা ভুল

পরীক্ষার আগের রাতে সব রিভিশন দেওয়ার চিন্তা ভুল
আসাদুজ্জামান নূর। ছবি: মেডিভয়েস

আগামী ৫ মে অনুষ্ঠিত হবে বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা। এমবিবিএসের পর চিকিৎসক হওয়ার এটিই দ্বিতীয় সুযোগ। এই পরীক্ষায় আসন মাত্র ৫৪৫টি। ফলে তুলনামূলক প্রতিযোগীর সংখ্যা বেশি। কেন্দ্রে এক ঘণ্টার মেধার যুদ্ধের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে ভর্তিচ্ছুদের স্বপ্ন ছোঁয়ার গল্প। ভর্তি পরীক্ষায় একটি ভুলের কারণে ভেঙে যায় অনেকের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন।

তুমুল প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষায় সময়ের যথাযথ ব্যবহার ও শেষ সময়ে পরীক্ষার প্রস্তুতিসহ নানা কৌশল নিয়ে মেডিভয়েসের সঙ্গে কথা বলেছেন ২০২০-২১ সেশনের ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় ষষ্ঠ আসাদুজ্জামান নূর। এ সময়ে ভর্তিচ্ছুদের করণীয় ও বর্জনীয় নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি দিয়েছেন বিভিন্ন মূল্যবান পরামর্শ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: সাখাওয়াত হোসাইন, ক্যামেরায় ছিলেন আহমেদ শাফিন

মেডিভয়েস: শেষ পর্যায়ে ডেন্টালে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কোন কোন বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে?

আসাদুজ্জামান নূর: যারা ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষা দিবে, তারা ইতিমধ্যে এমবিবিএসে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে এসেছে। ভর্তি পরীক্ষার অভিজ্ঞতা তারা নিয়ে ফেলেছে। তারপরও যেহেতু মেডিকেলে চান্স হয়নি, সুতরাং তাদের ডাক্তার হওয়ার শেষ অপশন ও দ্বিতীয় সুযোগ হলো বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা। এমবিবিএসে যেসব কারণে চান্স হয়নি, সে কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। পরে তা সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে। আর এখন বিডিএস ভর্তি পরীক্ষার খুব অল্প সময় বাকি। এই সময়ে শিক্ষার্থীরা ইচ্ছা করলেই খুব বেশি পড়ে ফেলতে পারবে, এমনও না। আগে যেগুলো পড়ে এসেছে, সেগুলোই বারবার রিভিশন দেওয়া উচিত, যাতে পরীক্ষার হলে আত্মবিশ্বাসের সাথে দাগানো যায়। এজন্য একটাই মন্ত্র বারবার রিভিশন দেওয়া।

মেডিভয়েস: এই সময়ে আপনার প্রস্তুতি এবং রুটিন কেমন ছিল, জানতে চাই। 

আসাদুজ্জামান নূর: ভর্তিচ্ছুদের পড়াশোনার যেহেতু অনেক চাপ, তাই রাত জেগে পড়াশোনা করার চেষ্টা করে। এর ফলে রাত জাগার একটা বদ অভ্যাস তৈরি হয়ে যায়। আমারও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। যদি রাত তিনটা-চারটা পর্যন্ত পড়ি, পর দিন সকাল ১০টায় পরীক্ষা। দেখা যাবে, ঘুম থেকে উঠতে উঠতে সকাল নয়টা-দশটা পার হয়ে গেছে। আর আমি যদি ছয়টা বা সাতটার দিকেও ঘুম থেকে উঠি, কিন্তু ঘুমটা কাভার হলো না। পরীক্ষার হলে আমার মাথা ঘুরতে থাকবে। ভালো একটা ইনপুট দেওয়া যাবে না।

প্রথমেই ঘুম নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। এজন্য পরীক্ষার আগে রাত নয়টা থেকে দশটার মধ্যে ঘুমিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আর ভোরে ঘুম থেকে উঠে গেছি। আর আমরা জানি, ভোরে পড়াশোনা করলে তা মাথায় থাকে এবং এই অভ্যাসটা খুবই উপকারী। এ ছাড়া পরীক্ষা হলে সবাই চিন্তিত থাকে। কাউকে জিজ্ঞেস করলে বলবে আমি পরীক্ষার নার্ভাস হয়ে গেছিলাম। আমি এই নার্ভাসনেসটা কাটানোর চেষ্টা করেছি। এটা করেছি, আমরা পরীক্ষার হলে গিয়েও তো পরীক্ষা দিবো। আর হলে গিয়ে পরীক্ষা দিতে যে প্রেসারটা আসে, সেটা যেন না আসে, এজন্য বাসায় আমি প্রচুর পরীক্ষা দিতাম। পরীক্ষার হলে ঠিক যেভাবে পরীক্ষা হতো, ঠিক সেভাবে পরীক্ষা দিতাম। আর প্রতিদিন সকাল দশটায় পরীক্ষা দিতে বসতাম, আর ১১টায় শেষ করতাম। আর ভাবতাম, এখন আমি পরীক্ষা হলে আছি। এর ফলে যখন কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছি, তখন মনেই হয়নি আমি পরীক্ষার হলে পরীক্ষা দিয়েছি।

মেডিভয়েস: পরীক্ষার আগের রাত এবং সকালে কেন্দ্রে পৌঁছা পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীর করণীয় সম্পর্কে বলুন।

আসাদুজ্জামান নূর: বেশির ভাগ শিক্ষার্থী পরীক্ষার আগের রাত পড়াশোনা বেশি করে। আর চিন্তা করে যত পড়া আছে, সব রিভিশন দিতে হবে। চাইলেও রিভিশন দেওয়া সম্ভব না। কারণ এখানে প্রচুর পরিমাণে পড়া। রসায়ন, পদার্থ, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান। একরাতে কি কাভার করা সম্ভব। কখনই সম্ভব না। আমি বলবো, শুধু মাথার মধ্যে প্রেসার সৃষ্টি করে কোনো লাভ নেই। এতোদিন যা পড়াশোনা করা হয়েছে, তাই যথেষ্ট। আর পরীক্ষার আগের রাতে নতুন করে কিছু পড়ার দরকার নেই, আর একেবারে না পড়লে খুবই ভালো হয়। ব্রেইনকে চিন্তামুক্ত রাখতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হবে। আর পরীক্ষার শুরুর এক ঘণ্টা আগে কেন্দ্রে পৌঁছে যেতে হবে।

মেডিভয়েস: পরীক্ষার কেন্দ্রে টাইম ম্যানেজমেন্টটা কেমন হওয়া জরুরি।

আসাদুজ্জামান নূর: বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা আর এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস একই। এখানে শিক্ষার্থীরা ভুলটা করে, এক নম্বর থেকে সিরিয়াল ধরে দাগায়। কিন্তু প্রশ্নগুলো একটা সহজ, একটা কঠিন—এভাবে সংমিশ্রণে থাকে। এজন্য প্রথমে সহজ প্রশ্নগুলো দাগাতে হবে, পরে কঠিনগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কঠিন প্রশ্নগুলো কয়েক ধাপে উত্তর করার চেষ্টা করতে হবে। আর যেগুলো একদমই চিন্তা ভাবনার বাইরে চলে এসেছে, সেগুলোর উত্তর না করাই ভালো।

মেডিভয়েস: যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় একটু স্নায়ু চাপ থাকে, পরীক্ষার আগে মানসিক চাপ সামলানোর কৌশল কি?

আসাদুজ্জামান নূর: ভর্তি পরীক্ষাই সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। আর এতো বড় গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষা দিচ্ছি, তাতে চিন্তা থাকবে না, স্নায়ু চাপ থাকবে না—এমনটি হতে পারে না। আমাদের উচিত, যতটুকু সম্ভব মানসিক চাপ এড়িয়ে চলা। আর আগে যেটা বলেছি, পরীক্ষার হলে পরীক্ষা দিবো, যেনো মনে হয়, আমি বাসায় পরীক্ষা দিচ্ছি। আর শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস যেন থাকে। আমি পরীক্ষার আগে বাসার টেবিলের সামনে লিখে রেখেছিলাম, আসাদুজ্জামান নূর ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় ফার্স্ট। যাই হোক, আমি ফার্স্ট হতে পারিনি, কিন্তু ষষ্ঠ হয়েছি।

মেডিভয়েস: প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার আগের রাতে বা কিছুদিন আগে সামাজিক বিভিন্ন মাধ্যমে ভুয়া প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে একজন মনোযোগী শিক্ষার্থীর করণীয় কি?

আসাদুজ্জামান নূর: বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, শোনা কথায় দুনা। আর বাতাসের আগে গুজব বেশি ছড়ায়। সুতরাং এ রকম গুরুত্বপূর্ণ একটা ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে, আর প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়াবে না—এটাও হতে পারে না। আসলে গুজব ছড়াবেই। আর শিক্ষার্থীরা যদি গুজবে কান দেয়, আর মনে করে আমি প্রশ্ন পাচ্ছি। পরীক্ষার হলে যাবো, সব একটানা লিখে ফেলবো। আমার চান্স নিশ্চিত। তাহলে তার মেডিকেলে পড়া হবে না, ভর্তি হওয়াও হবে না। এমনটি করলে মেডিকেলে ভর্তি হওয়া যাবে, শিক্ষার্থী হিসেবে নয়, রোগী হিসেবে। সুতরাং এসব গুজবে কান দেওয়া যাবে না। একজন ভালো শিক্ষার্থী কখনই গুজবে কান দেয় না। ভালো শিক্ষার্থী প্রশ্নের আশায় বসে থাকে না, গুজবে কান দেয় না।

মেডিভয়েস: যারা ঢাকা ডেন্টালে চান্স পেতেই চায় তাদের জন্য কারণীয় কি হবে?

আসাদুজ্জামান নূর: মেডিকেলে সব মিলিয়ে সাড়ে চার হাজার সিট। আর ডেন্টালে এতো সিট নেই। বিডিএসে মাত্র পাঁচ শত ৪৫টি আসন রয়েছে। ডেন্টালে যেহেতু সিট সংখ্যা কম, প্রতিযোগিতায় খুবই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস। প্রথমে ভাবতে হবে প্রতিযোগী যতই হোক, আমি চান্স পাবো। আর ঢাকা ডেন্টালে সিট মাত্র ১১০টি। ভালোভাবে প্রস্তুতি নিলে ঢাকা ডেন্টালে চান্স পাওয়া সম্ভব।

মেডিভয়েস: প্রস্তুতির বাইরে প্রশ্ন আসলে করণীয় কি হবে?

আসাদুজ্জামান নূর: এটি একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। এখানে সব প্রশ্ন কমন আসবে, এমন নয়। আমরা কখনোই দেখি না, ১০০ এর মধ্যে ১০০ পাচ্ছে। জাতীয় মেধায় যে প্রথম হচ্ছে, সেও কিন্তু ১০০ পাচ্ছে না। তার মানে তারও কিছু প্রশ্ন কমন পড়েনি। কঠিন প্রশ্ন কেউ না পারলে সমস্যা নেই, কিন্তু সহজ প্রশ্নের উত্তর না দিতে পারলে চান্স পাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।

মেডিভয়েস: ভবিষ্যতে নিজেকে স্বাস্থ্য খাতের কোন অবস্থানে দেখতে চান?

আসাদুজ্জামান নূর: ডেন্টালে অনেক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমি নিজেকে ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জন হিসেবে দেখতে চাই। আসলে অনেকে ধারণা ডেন্টিস্ট্ররা কি করেন, শুধু দাঁত তুলেন। ডেন্টাল মানে শুধু দাঁত তোলা নয়, এর বাইরেও অনেক কিছু আছে, সেটা বুঝানোর জন্য আমি ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জন হতে চাই। তা ছাড়াও আরেকটি কারণ রয়েছে, ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনরা কি করেন? অনেকের ফেস বিকৃত থাকে, চোয়াল আঁকা-বাঁকা থাকে। আমরা সবাই একটা ভালো ফেস চাই। এই বিকৃত ফেসটাকে চমৎকার রূপ দেওয়াই হলো ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনদের কাজ। এতে রোগীর মুখে প্রচুর হাসি ফুটবে। এটা সত্যিই, অসাধারণ অনুভূতি।

 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত