৩১ অগাস্ট, ২০২১ ০৫:৫২ পিএম

ডিপ্লোমা-এমফিলে ভাতা প্রদান কাল, পাচ্ছেন না ১৯ সেশনের শিক্ষার্থীরা

ডিপ্লোমা-এমফিলে ভাতা প্রদান কাল, পাচ্ছেন না ১৯ সেশনের শিক্ষার্থীরা
ছবি: মেডিভয়েস

মো. মনির উদ্দিন: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও এর অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডিপ্লোমা-এমফিল (নন-রেসিডেন্সি) কোর্সে অধ্যয়নরত চিকিৎসকদের ভাতার চেক হস্তান্তর করা হবে আগামীকাল বুধবার (৩১ আগস্ট)। সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলন হলে আনুষ্ঠানিকভাবে এ চেক হস্তান্তর করা হবে। ভাতা সংক্রান্ত বিল পাস হওয়ার সময় অধ্যয়নরত সকল শিক্ষার্থী এর আওতাভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও ১৯ সেশনের শিক্ষার্থীরা এ ভাতা পাচ্ছেন না। এতে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এসব নবীন চিকিৎসক। এদিকে করোনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাওয়া এ চিকিৎসকদের ভাতার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

হতাশ ১৯ সেশনের শিক্ষার্থীরা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৯ সেশনের একজন নন-রেসিডেন্সি চিকিৎসক মেডিভয়েসকে বলেন, ‘২০১৯ সালে ভর্তি হয়েছিলাম, চলতি বছরের জুলাইয়ে পরীক্ষা দেওয়ার কথা, কিন্তু এখনো হয়নি। ভাতা সংক্রান্ত বিলটি যখন পাস হয়, তখন আমরা অধ্যয়নরত ছিলাম। ২০২০ এর চিকিৎসক যে সময় থেকে ভাতা পাচ্ছে, ওই সময়ে আমরাও অধ্যয়নরত ছিলাম, দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু আমরা কোনো ভাতা পাচ্ছি না। আমরা করোনার দুঃসময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছি। একই সময়ে কাজ করে এক ব্যাচ ভাতা পাচ্ছে, আরেক ব্যাচ পাচ্ছে না, এটা দুঃখজনক।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০ সেশনের একজন নন-রেসিডেন্সি চিকিৎসক মেডিভয়েসকে বলেন, ‘চিঠিতে উল্লেখ ছিল, অধ্যয়নরত সবাই পাবেন। ওই সময় তো তারাও ছিলেন। পাস হওয়ার পরও দীর্ঘ দিন পার হয়ে গেলেও এ ভাতা চালু হয়নি। ভাতা চালু হতে সবার সযোগিতা দরকার ছিল, কিন্তু পাওয়া যায়নি। যাক, অনেক চেষ্টার পর চালু হলো। ধরেই নিয়েছিলাম, হয় তো আমরাও পাবো না। ভেবেছিলাম, পরের ব্যাচ থেকে চালু হবে। কিন্তু পাওয়া গেলো, আলহামদুলিল্লাহ।’ 

যা বললেন বিএসএমএমইউ ভিসি 

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ মেডিভয়েসকে বলেন, ‘১৯ সেশনের শিক্ষার্থীরা পাবে না। এটা আমার আমল থেকে হবে। সরকার আমাকে যাদের জন্য দিয়েছে, তার বাইরে তো যেতে পারবো না। ১৯ সেশনের বিষয়টি ছিল আগের। ২০ সেশন থেকে কার্যকর হবে, ২২ পর্যন্ত অধ্যয়নরতরা এটা পাবে।’ 

তাহলে ২২ এর পরে যারা এ কোর্সে ভতি হবেন, তারা এ ভাতা পাবেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তা না, এর পর সরকার বরাদ্দ দিলে দেওয়া হবে।’

মন্ত্রণালয়ে ১৯ সেশন থেকে তালিকা পাঠানো হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার আমাকে কিছু শিক্ষার্থীর জন্য দিয়েছে কিছুর জন্য দেয়নি। যাদের কিছুই দেয়নি সেটা পরে দেবো, আর যা দিয়েছে, সেটা এখন দেওয়া হবে। আগের অর্থাৎ ১৯ সেশনের জন্য সরকার দেয়নি। ২০ সালের তালিকা ধরে দিয়েছে। বাকিটার অনুমোদন দেয়নি। এ কারণে তাদেরকে (১৯ সেশন) দেওয়া সম্ভব না।’

গত বছর এ সংক্রান্ত প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার সময় বলা হয়েছিল, কোর্সে অধ্যয়নরত সকল শিক্ষার্থী এর অন্তর্ভুক্ত এবং তারা সেশনের শুরু থেকেই এ ভাতা পাবেন। সে অনুযায়ী ১৯ সেশনের চিকিৎসকদেরও এ ভাতা পাওয়ার কথা। প্রসঙ্গটি তুললে বিএসএমএমইউ ভিসি বলেন, ‘না না হয়নি, সরকার আমাকে ওটা দেয়নি। নতুন করে দিয়েছে এবং ২০ সাল থেকে দিয়েছে। আমি আলোচনা করার পরে এটা দিয়েছে। সুতরাং ১৯ সেশনেরটা হচ্ছে না।’

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া মেডিভয়েসকে বলেন, ‘গত বছর পাস হওয়ার পর ১৯ সালের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়েই তালিকা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। পরে ওই তালিকা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এতে শুধু তাদের অনুমোদন করার বাকি ছিল। এখন এটা যদি হয়, তাহলে তাদের থেকেই হওয়ার কথা। তাদের জন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। আমি চলে এলাম তো ছয় মাস হয়ে গেলো। তাই বিষয়টি আমি ভালো জানি না।’

করোনায় স্বাস্থ্য সেবায় সক্রিয় ভূমিকা

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ডক্টরস’ ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) প্রধান সমন্বয়ক ডা. নিরুপম দাশ মেডিভয়েসকে বলেন, ‘ভাতা যদি চালু হয়, তাহলে ১৯ সালের তারা কেন পাবেন না? প্রক্রিয়া তো ১৯ থেকেই শুরু হয়েছিল। এ সেশনের শিক্ষার্থীও এ ভাতা পাবেন—এমন বক্তব্য তখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একাধিকবার দিয়েছেন। তাহলে এখন কেন পাবেন না? এটা যদি চালু হয় তাহলে ১৯ ও ২০ এক সঙ্গেই পাওয়া উচিত। ১৯ সেশনের শিক্ষার্থীরা যখন কাজ শুরু করেন, তখন দেশে একটি মহামারী শুরু হয়। এই সময় তারা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে গেছেন। সব কিছুতেই তারা সম্পৃক্ত ছিলেন। সতরাং তারা কেন ভাতা বঞ্চিত হবেন? মানবিক দিক বিবেচনা করলেও তারা ভাতা পান। করোনা সংকট কাটিয়ে উঠতে তারা বিশাল ভূমিকা রেখেছেন। তাই আমাদের দাবি হলো, ১৯ সেশনের শিক্ষার্থীদেরকেও যেন ভাতার আওতায় আনা হয়। করোনার সময় তাদের যে অবদান, এর যথাযথ সম্মান যেন তাদেরকে দেওয়া হয়।’

প্রসঙ্গত, রেসিডেন্সি ও এফসিপিএস কোর্সে অধ্যয়নরত চিকিৎসকদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা থাকলেও ডিপ্লোমা কোর্সে ভাতার ব্যবস্থা ছিল না। এতে নন-রেসিডেন্সি এসব কোর্সে অধ্যয়নরতদের মানবেতর জীবন-যাপন করতে হতো, শিক্ষাকাল ছিল চরম ভোগান্তি ও উদ্বেগের।

এ অবস্থায় স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্টদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মিটিংয়ে নন-রেসিডেন্সি কোর্সে অধ্যয়নরত চিকিৎসকদের ভাতা প্রদান সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। ঐতিহাসিক এ সিদ্ধান্তের ফলে ৯ শতাধিক চিকিৎসক ভাতার আওতায় আসেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি মাসে তারা ২০ হাজার টাকা করে পাবেন। 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : ডিপ্লোমা-এমফিল
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক