ডা. সন্দীপন দাশ ছিলেন একজন ট্রেজার আবিষ্কারক
চট্টগ্রাম মেডিকেলে আমার সুখের স্মৃতি খুব কম। শিক্ষকদের সঙ্গে তো আরও কম। যে দু-একজন শিক্ষককে আসলেই আপন মনে হতো তাদের মধ্যে একজন ডা. সন্দীপন দাস স্যার। একজন কার্ডিওলোজিস্ট। পরিচয়ের অনেকদিন পরে এ কথাটি জেনেছিলাম। কারণ স্যারকে পেয়েছিলাম কমিউনিটি মেডিসিন নামক মেডিকেলের সামাজিক বিজ্ঞানের করিডোরে।
চতুর্থ বর্ষে আরএফএসটি নামক যে ভ্রমণ পর্ব থাকে সেখানেই স্যারের খুব কাছাকাছি হয়েছিলাম। স্যারের একটি কথা কানে আজও বাজে, ‘কমিউনিটি মেডিসিনে এসে আমি বুঝেছি মেডিকেল সাইন্সটা নীরস নয়। চিকিৎসা পদ্ধতি শুধু মেডিসিনের উপর নির্ভর করে না পরিবেশের উপরও নির্ভর করে।’
স্যারের সাথে বসে বসে ডাটা কালেক্ট করেছি, সেগুলোর অ্যানালাইসিস করেছি, আবার আমাদের নিজস্ব পাবলিকেশনও বেড়িয়েছে। স্যার বলতেন, ‘এই যে তোমরা সাধারণ কাজ দেখছো এগুলোই কিন্তু গবেষণা। তোমরা আজ বুঝতে পারছো না ভবিষ্যতে বুঝবে।’
স্যারের কিছু অসাধারণ কোয়ালিটি ছিল, তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে অন্যের ভিতর থেকে সুপ্ত গুণাবলি বের করে আনা। ইংরেজি প্যারাগ্রাফে আমরা যে হিডেন ট্রেজার নামক টার্ম পড়েছিলাম স্যার ছিলেন সেই ট্রেজার আবিষ্কারক। আমার মতো একজন চুপচাপ মানুষকেও গান গাওয়ালেন। স্যার নিজেও গান গাইলেন। গানের শেষে একটি কথা বলেছিলেন, ‘তোমাদের ব্যাচে একজন ক্লাসিকাল সিঙ্গার আছেন তোমরা কি জানো? ইমরান হচ্ছে ক্লাসিকাল সিঙ্গার।’ গায়ে হাত দিয়ে বলেছিলেন, ‘গানের চর্চা করো বাবা!’ মেডিকেল সাইন্স অবশ্য আমাকে সেই অবসর দেয়নি।
স্যার কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সুস্থও হয়েছিলেন। কিন্তু আজকে চলে গেলেন। কতো বয়স হয়েছে স্যারের, সর্বোচ্চ ৪৫+। অথচ আজ না ফেরার দেশে। আমি জানি না স্যার কিভাবে দোয়া করতে হয়, শুধু জানি আপনি ভালো থাকবেন। এমন মানুষেরা কোনোদিন কোনো কালেই খারাপ থাকে না।
প্রণাম নিবেন স্যার।