০৬ অগাস্ট, ২০২১ ০৭:০৮ পিএম

এফসিপিএস-রেসিডেন্সি কোর্সের বিরোধ নিরসনে যা বললেন বিএসএমএমইউ ভিসি

এফসিপিএস-রেসিডেন্সি কোর্সের বিরোধ নিরসনে যা বললেন বিএসএমএমইউ ভিসি
অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

মেডিভয়েস রিপোর্ট: মেডিকেল শিক্ষায় আন্তঃডিপার্টমেন্টাল ও আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা ও সমন্বয় জরুরি বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। এফসিপিএস ও রেসিডেন্সি কোর্সের ব্যবধান ঘোচানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, পোস্ট গ্রাজুয়েশন করা চিকিৎসকদের সযত্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সুতরাং ডিগ্রি নিয়ে বিরোধ না করে চিকিৎসকদের দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

সম্প্রতি বিডি ফিজিশিয়ান্সের আয়োজনে ‘রিফর্মস ইন পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল এডুকেশন’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তিনি।

এ সময় এফসিপিএস ও রেসিডেন্সি ডিগ্রির দ্বন্দ্ব ঘোচানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বিএসএমএমইউ ভিসি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে আন্তঃডিপার্টমেন্টাল ও আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা ও সমন্বয় বাড়ানো দরকার। বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন্স (বিসিপিএস) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মধ্যে কোনো শত্রুতা থাকবে না। এ সম্পর্কের পথে এত দিন যদি ফেরি থেকে থাকে, তাহলে এখন পদ্মা সেতুর বড় মতো সংযোগ স্থাপিত হবে। নিজেদের মধ্যে, ফ্যাকাল্টিদের মধ্যে কেন আমরা বিরোধ রাখবো? বাংলাদেশে যিনি পোস্ট গ্রাজুয়েশন করবেন, তাকে আমরা কনফিডেন্ট বানাচ্ছি, সুপারভাইজড প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। সুতরাং সবক্ষেত্রেই যদি আমরা সহযোগিতার হাত বাড়াই দুই ডিগ্রির মধ্যে ব্যবধান ঘুচবে। ডিগ্রি নিয়ে বিরোধ না করে চিকিৎসকদের দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমরা যেন সবাই একত্রে কাজ করতে পারি। সে বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে।’

অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পোস্ট গ্রাজুয়েশন শিক্ষা ব্যবস্থা আন্ডার গ্রাজুয়েশনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভিত্তি খারাপ হলে উপরের দিক যতই বাড়ানো হোক না কেন, এ ভবন ভেঙে যেতে বাধ্য। তাই আন্ডারগ্রাজুয়েশন শিক্ষা ব্যবস্থা কিভাবে আমরা উন্নত করতে পারি, সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। পোস্ট গ্রাজুয়েশনে যারা আসছেন, তাদেরকে মাঝে মাঝে বানান শিখাতে হয়। এ বিষয়গুলো আমাদের মনে রাখা দরকার। সেজন্য আন্ডারগ্রাজুয়েটকেই আমাদের আগে শক্তিশালী করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, পোস্টগ্রাজুয়েশনে আগাগোড়া লেকচার ওরিয়েন্টেড, বেডসাইট টিচিং অথবা সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে শেখানোর বিষয়। রেসিডেন্সি প্রোগ্রামে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকেই এসব করতে হয়। তবে অধিভুক্ত সকল ইনস্টিটিউটে একই রকম হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধুতে বেডসাইট টিচিং, সেমিনার, এন্ড ব্লক হচ্ছে। কিন্তু পেরিফেরির ইনস্টিটিউটগুলোতে যে কোর্সগুলো আছে, সেখানে বেশ সমস্যা আছে। লার্নিং বাই ডু ইট, এখন যিনি ডুটা করাবেন, সেই লোকেরই তো অভাব। ময়মনসিংহে অফথালমোলজির এমএস কোর্সে এখানে একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর আছেন। সেখানে প্রফেসর পাঠাতে হবে। সেটার দায়িত্ব আমাদেরই। আমরা মন্ত্রণালয়ে বলেছি, কিন্তু কোনো লোক ঢাকা থেকে যাচ্ছেন না। এমন হলে তো আমাদের কোর্স বন্ধ করে দিতে হবে। বরিশালে বন্ধ করে দিয়েছি। অর্থাৎ কোর্স চালাতে যেসব ফ্যাকাল্টির প্রয়োজন, যারা প্রশিক্ষণ দেবেন—তাদেরকে আমরা জায়গা মতো পাঠাতে পারছি না। বঙ্গবন্ধুতে সব ডিপার্টমেন্টে একই রকম পড়াশোনা হয় না। কোনো কোনো ডিপার্টমেন্ট খুব ভালো করছে। লাইব্রেরি ফ্যাসিলিটিসহ সামগ্রিক প্রশিক্ষণ খুব চমৎকার। কিন্তু কোনো কোনো ডিপার্টমেন্টে দেখা যায়—বেডসাইট টিচিংয়ের জন্য যত ছাত্র আছে, ততো রোগীও নাই। বেড কম, ছাত্রের সংখ্যা বেশি। এই বিষয়গুলো আমাদের বাড়ানো দরকার। কেস বাড়ানো, বেড বাড়ানো, অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) সুবিধা বাড়ানো দরকার। পোস্ট গ্রাজুয়েট করা একজন এমএস ছাত্র যদি ওটি করতে না পারে, তাহলে হবে না। এই ওটির সুযোগ সব ইনস্টিটিউটে সমানভাবে হচ্ছে না।’ 

এসব ক্ষেত্রে কারিকুলামে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে ক্যাজুয়ালটি ডিউটি নাই। যদি একটি বছর ফেজ বি’র কোনো ছাত্রকে বিভিন্ন ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারি, …তাকে তত্ত্বাবধান করার অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর তো নাই। এর অভাবে শিক্ষা পূর্ণতা পায় না। কারিকুলামে এ সংক্রান্ত পরিবর্তন আনা দরকার। ২০১০ সালের পরে কোর্স কারিকুলামে কোনো পরিবর্তন আসেনি। কোর্স কারিকুলাম পাঁচ বছরের মধ্যে পরিবর্তন করতে হয়। এ বিষয়ে আমি ডিনদের নিয়ে বৈঠক করেছি, চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে কোর্স কারিকুলাম সংগ্রহ করে আমাদের কাছে উপস্থাপন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ডিন কমিটি, অ্যাকামেডিক কাউন্সিল হয়ে এটা সিন্ডিকেটে তোলা হবে। সেখানে পাস করিয়ে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাই। দায়িত্ব গ্রহণের তিন মাসের মধ্যেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

রেসিডেন্ট শিক্ষার্থীদের পুরো সময় শিক্ষার পরিবেশে রাখতে নিজের ভাবনার কথা জানিয়ে বিএসএমএমইউ ভিসি বলেন, ‘হাসপাতালে রাতের বেলা গ্রান্ড রাউন্ড হতো। আমরা এই রাউন্ড পেয়েছিলাম। আমরা ইভিনিং ক্লাস নিয়েছি। এটা এখন হচ্ছে না। রেসিডেন্সি মানে হলো পুরো সময় শিক্ষার পরিবেশে অবস্থান। কিন্তু এখন তা পাওয়া যাচ্ছে না। দুপুর দুইটায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করে শিক্ষার্থীরা যদি বাসে উঠে, তাহলে রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম হলো না। পড়াশোনা করে দুইটায় চলে যাবে, এটা হতে পারে না। এই ক্ষেত্রে শিক্ষককেও সময় দিতে হবে। আমার ভাবনা হলো, আমরা একটি রোস্টার করবো, সে রোস্টারে সবাইকে আটটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত থাকতে হবে না। আড়াইটার পর সপ্তাহে প্রতিদিন একজন শিক্ষককে রাত আটটা পর্যন্ত সময় দিতে হবে। তিনি এই সময়ে সংশ্লিষ্টদের ফ্যাকাল্টির রেসিডেন্টদেরকে নিয়ে ক্লাস করবেন অথবা হাসপাতালে থাকবেন। দুপুর দুইটার পর হাসপাতাল যেন বিরান ভূমি না হয়।’

কোর্সআউট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কোর্সআউটের নিয়ম-কানুন পরিবর্তন হবে প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায়। অ্যাকামেডিক কাউন্সিল যেভাবে বলে, সেটাই হবে। আমার মেয়াদে যেসব ছাত্র ফেল করবে, সেই শিক্ষককেও আমি দায়িত্ব দিতে চাই। তাঁকে দায়িত্ব নিতে হবে। কেন উনার ছাত্র বেশি ফেল করে? এটি সমাধান করতে পারলে হয় তো ভবিষ্যতে ফেলের সংখ্যা কমবে। অন্য দিকে সাত-আটটা ব্লক করে আসার পরও ফেজ ‘এ’তে ফেল করার পেছনে কি কারণ থাকতে পারে তা খুঁজে বের করতে চাই। তাকে যদি শেখার পূর্ণ পরিবেশে রেখে মানসিকভাবে সহযোগিতা করা যায়, তাহলে আমার মনে হয়, ভবিষ্যতে তারা ভালো করবে।’

এ সময় ভবিষ্যতে করোনার মতো যে কোনো স্বাস্থ্য সংকট সামাল দেওয়ার লক্ষ্যে সকল রেসিডেন্ট চিকিৎসককে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) পরিচালনায় দক্ষ করে তোলার কথা জানান বিএসএমএমইউ ভিসি। তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে কোনো আর্মি নাই। ইন্টারমিডিয়েটের পর সবাইকে আর্মির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সুতরাং আমি আইসিইউর প্রশিক্ষণটা সকল রেসিডেন্টদের দিতে চাই, যাতে করোনার মতো ভবিষ্যতে কোনো সমস্যায় আমরা না পড়ি। কারণ এখন দক্ষ লোকের অভাব দেখা দিয়েছে।’

অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘২০১০ পরে পোস্ট গ্রাজুয়েট শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। তবে আন্ডার গ্রাজুয়েটকে শক্তিশালী করা গেলে পোস্ট গ্রাজুয়েট আরও উন্নত হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের ফ্যাকাল্টিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ফিডব্যাকের ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে।’

এ সময় সুন্দর আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. রিদওয়ানুর রহমান।

অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল জলিল চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় স্বাধীনতা পুরস্কারজয়ী অধ্যাপক ডা. টিএ চৌধুরী, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি অধ্যাপক মো. ডা. সহিদুল্লাহ, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) সভাপতি অধ্যাপক ডা. কাজী দ্বীন মুহাম্মদ, অধ্যাপক ডা. ইসমাইল পাটোয়ারি, ডা. এহসান খান ও ডা. মারগুব হোসেন প্রমুখ। 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক