১৪ মে, ২০২১ ০৫:০৪ পিএম
বিশেষজ্ঞ ভাবনা

করোনা থেকে সুরক্ষায় ঈদে কারোরই বাসার বাইরে যাওয়া উচিত না

করোনা থেকে সুরক্ষায় ঈদে কারোরই বাসার বাইরে যাওয়া উচিত না
প্রতীকী ছবি

মো. মনির উদ্দিন: করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগে নিয়ন্ত্রিত ঈদ উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

ভয়াবহ পরিণতির কথা মাথায় রেখে ঈদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে তারা বলেছেন, কোথাও জড়ো হয়ে ঈদ উদযাপনের চেষ্টা করলে এতে বরং ক্ষতির পাল্লাই ভারি হবে।

সতর্ক জীবন-যাপনের মাধ্যমে দ্বিতীয় ধাক্কা উৎরানো গেলে দেশের মানুষ বিপদ থেকে মুক্ত হতে পারে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ মেডিভয়েসকে বলেছেন, করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার কারণে বড় ধরনের সমাগম না করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদ উদযাপন করা যেতে পারে। করোনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে, তাই আত্মীয়-স্বজন এখন আসার দরকার নাই। টেলিফোনে সবার সঙ্গে যোগাযোগ ও শুভেচ্ছা বিনিময় হতে পারে। যদি কারও বাসায় কিছু পাঠাতে হয়, তাহলে প্যাকেট করে পাঠিয়ে দেওয়ায় অধিকতর নিরাপদ। মূল কথা হলো, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে হবে। আনুষ্ঠানিকতাগুলো টেলিভিশন বা কোনো সামাজিক মাধ্যমে হতে পারে। কোথাও জড়ো হয়ে ঈদ উদযাপনের চেষ্টা করলে হিতে বিপরীত হতে পারে, এতে ক্ষতির পাল্লাই বরং ভারি হবে।

যে কোনো স্বাস্থ্য দুর্যোগে একজন সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে কঠিন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গত ঈদ থেকে করোনায় যখন মৃত্যু হার বেড়ে গেলো, তখন এসব সামাল দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়েছে। নিঃসন্দেহে সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্য বিধি না মানার কারণে এটা হয়েছে। তাই ভবিষ্যতে আমরা যেন এসব বিষয়ে সতর্ক থাকি। করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ যদি আমরা কোনোভাবে টপকে যেতে পারি, তাহলে হয় তো বাংলাদেশের মানুষ বিপদ থেকে মুক্ত হতে পারে।’

ঈদে প্রতিবারই দেশে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এবার পরিস্থিতি ভিন্ন হওয়ায় এ পরিকল্পনা বাদ দিয়েছি। কারণ এখন ঢাকা থেকে যারা বাড়ি যাবে তাদের দ্বারা করোনার ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া যাত্রা পথেও তারা আক্রান্ত হতে পারেন। সুতরাং করোরই বাসা ছেড়ে বাইরে যাওয়া উচিত না। আমিও এটা করতে চাই না। বাড়িতে থেকেই নিজেরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়, আনন্দভাগ, স্মৃতিচারণ অথবা টিভি ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সময় কাটাবো।’

ঈদের স্মৃতি তুলে ধরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম মেডিভয়েসকে বলেন, ‘আমি এই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন কাজ করছি। যেহেতু আমি পরিবারসহ ঢাকায় অবস্থান করি, তাই মহামারীর আগে আমি ঈদে হাসপাতালে এসেছি এবং স্বাভাবিকভাবেই কাজ করেছি। একবার ঈদের দিন সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত একজন রোগী এসেছিল, তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। আমাদের এখানে ব্যবস্থাপনায় কিছু অপ্রতুলতা ছিল। আমি যেহেতু অ্যানেস্থেসিয়ার একজন অধ্যাপক তাই আমি তাকে ইন্টুগেট করেছি এবং একটি স্যালাইন দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে রেফার করে দিয়েছিলাম। সেই ছেলেটি বেঁচে গিয়েছিল। পরে জানতে পেরেছি, তিনিও একজন অ্যানেস্থিসিয়ার চিকিৎসক ছিলেন। আমার মনে হয় এটি একটি প্রাপ্তি এবং আনন্দের বিষয়।'

ঈদে হতদরিদ্র মানুষে চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তখন আমার পোস্টিং ছিল গাইবন্ধার মোল্লারচরে, একটি প্রত্যন্ত এলাকা। আমি দেখেছি, আমাদের কাছে যেটা ঈদ মনে হয়, তাদের কাছে সেটা আর দশ দিনের মতোই স্বাভাবিক একটি দিন। তাদের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল। আমার মনে হতো আমাকে যে বেতন দেওয়া হচ্ছে সে অর্থ যদি তদের দিয়ে দেওয়া হতো—তাহলে তারা আরও খুশি হতো ও ভালো থাকতে পারতো।’ 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক