০৯ মে, ২০২৫ ০৫:২১ পিএম

মেডিকেলে শিক্ষাকেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনা ও স্বায়ত্তশাসনে জোর সংস্কার কমিশনের

মেডিকেলে শিক্ষাকেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনা ও স্বায়ত্তশাসনে জোর সংস্কার কমিশনের
৫ মে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সংবাদ সম্মেলন করে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন। ছবি: সংগৃহীত

মেডিভয়েস রিপোর্ট: দেশের মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পৃথক ও স্বায়ত্তশাসিত শাসন কাঠামো গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন। কমিশনের মতে, এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে দেশের চিকিৎসা শিক্ষা এবং সেবা প্রদানে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। বর্তমানে বিভিন্ন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলো প্রশাসনিকভাবে সরকারের অধীনে পরিচালিত হলেও, এই নতুন কাঠামোতে সেগুলোকে আরও স্বতন্ত্রভাবে পরিচালনা করার সুপারিশ করা হয়েছে।

সোমবার (৫ মে) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি ৩২টি প্রধান সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন তুলে ধরেন স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন। এতে চিকিৎসা, জনস্বাস্থ্য এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কার (স্বল্প ও মধ্য-মেয়াদী) প্রস্তাবনায় এ সুপারিশ করা হয়।

স্বায়ত্তশাসিত কাঠামো প্রসঙ্গে প্রস্তাবনায় বলা হয়, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ), অন্যান্য মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস কলেজ (বিসিপিএস), প্রাথমিকভাবে পুরাতন আটটি সরকারি মেডিকেল কলেজ এবং পরবর্তীতে সকল মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালসমূহের জন্য "বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশনের" মেডিকেল শিক্ষা শাখার অধীনে পৃথক ও স্বায়ত্তশাসিত শাসন কাঠামো গঠন করা হবে। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংস্কার করে একটি কার্যকর পরিচালন কাঠামো নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ মেডিকেল  বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সংস্কারও প্রস্তাব বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়-সংযুক্ত হাসপাতালসমূহ (বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল) সরাসরি প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে নিজস্ব শাসন পর্ষদের (বোর্ড অব গভর্ন্যান্স) মাধ্যমে পরিচালিত হবে, যাতে নীতিনির্ধারণ ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করা যায়।’

এছাড়া আরও বলাহয়, ভবিষ্যতে একক ও সমন্বিত কাঠামোর ভিত্তিতে একটি স্বায়ত্তশাসিত মেডিকেল ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক, যা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার সামগ্রিক ও সমন্বিত উন্নয়ন ও গবেষণাকে সুসংহতভাবে এগিয়ে নিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

স্বাস্থ্য কমিশনের প্রস্তাবে বিসিপিএস ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ও একাডেমিক পুনর্গঠন প্রসঙ্গে বলা হয়, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস)-কে পরিগণ্য (স্বীকৃত) বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে। বিসিপিএস-এ কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে প্রতিটি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ শাখার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে, যাতে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় পেশাগত অন্তর্ভুক্তি ও বহুমাত্রিকতা বজায় থাকে। এই কাঠামোর অধীনে বিসিপিএস-এর প্রতিটি অনুষদকে (ফ্যাকাল্টি) উপ-কলেজে (সাব-কলেজ) রূপান্তর করে একাডেমিক স্বায়ত্তশাসনের ভিত্তিতে প্রশ্ন ব্যাংক, পাঠ্যক্রম উন্নয়ন ইউনিট এবং গবেষণা সমন্বয় সেল পরিচালনা করা হবে।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, অর্থোপেডিক ইনস্টিটিউট, কিডনি ইনস্টিটিউট , মা ও শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, প্রজনন স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি ইনস্টিটিউট, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান , জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, এবং স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা ইনস্টিটিউটসহ অন্যান্য জাতীয় বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্বায়ত্তশাসনের ভিত্তিতে পরিচালনা করতে হবে এবং এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদায় নিয়োগ দিতে হবে।

স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে তহবিল গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ প্রসঙ্গে বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলি এনজিও ব্যুরোর পরিবর্তে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশনের মাধ্যমে সরাসরি স্থানীয় ও বিদেশি তহবিল গ্রহণ করতে পারবে এবং তা গবেষণা ও সেবা প্রদানে সঠিকভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের নিয়মিত অডিট কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

সকল টারশিয়ারি ও কোয়ার্টনারি হাসপাতালসমূহে ইলেকট্রনিক মেডিকেল রেকর্ড চালু করে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় গতি, নির্ভুলতা ও ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার প্রস্তাব করে স্বাস্থ্য কমিশন।

সেবা প্রদানকারী হাসপাতাল ও শিক্ষা-প্রশিক্ষণ প্রদানকারী হাসপাতালসমূহের পৃথক ব্যবস্থাপনার প্রস্তাবে বলা হয়, সেবা প্রদানকারী হাসপাতাল ও শিক্ষা-প্রশিক্ষণ প্রদানকারী হাসপাতালসমূহকে তাদের ধারণা ও কার্যক্রমের ভিত্তিতে পৃথকভাবে পরিচালনা করতে হবে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং অন্যান্য শিক্ষা-প্রশিক্ষণ হাসপাতালগুলোর কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে, যাতে তাদের প্রধান কার্যক্রম শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবনের উপর কেন্দ্রীভূত হয়। এর ফলে চিকিৎসা শিক্ষা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে উৎকর্ষতা অর্জনের পথ প্রশস্ত হবে এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থায় জ্ঞানভিত্তিক অগ্রগতি নিশ্চিত করা যাবে।

সরকারি মেডিকেল কলেজসমূহে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন প্রসঙ্গে বলা হয়, সরকারি মেডিকেল কলেজসমূহে অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার অধ্যক্ষের নেতৃত্বে একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হবে, যা কলেজ ব্যবস্থাপনা, কোর্স কারিকুলাম, তার বাস্তবায়ন ও শিক্ষার মান নিশ্চিত করবে।

প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ আইনে সংস্কার আনতে প্রিস্তাবে বলা হয়, প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ আইন সংস্কার করে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সরকারি তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করতে হবে। এই আইনটির আওতায় বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস থেকে কো-চেয়ারপারসন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

স্বাস্থ্য কমিশনের মতে এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দেশের চিকিৎসা শিক্ষা এবং সেবা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এটি দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন, গবেষণা এবং ইনোভেশনে এক নতুন যুগের সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও, স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা এবং আধুনিকতার লক্ষ্যে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবে।

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক