মারাত্মক সংক্রমণের ওষুধের ৯৩ শতাংশও পায় না গরিব দেশগুলো

মেডিভয়েস রিপোর্ট: দরিদ্র দেশগুলোর মারাত্মক ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী (এএমআর) সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীদের মাত্র ৭ শতাংশেরও কম প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক পাচ্ছেন এর ফলে শুধু ভোগান্তি ও মৃত্যুই বাড়ছে না, বরং এটি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি ল্যানসেট ইনফেকশাস ডিজিসেস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এই তথ্য জানিয়েছে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল অ্যান্টিবায়োটিক রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট পার্টনারশিপের (জিএআরডিপি) নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে চিকিৎসার ঘাটতির প্রথম পরিমাপ। বাংলাদেশ, ব্রাজিল, মিশর, ভারত, কেনিয়া, মেক্সিকো, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় কারবাপেনেম রেজিস্ট্যান্স গ্রাম-নেগেটিভ (সিআরজিএন) সংক্রমণের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই ফলাফল পেয়েছেন।
গবষেণার বরাত দিয়ে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছর অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ১৯ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে—এমন পূর্বাভাস দিয়েছেন গবেষকরা। তাই তারা এই সংকট মোকাবেলায় এইচআইভি প্রতিরোধে আফ্রিকায় ওষুধ পৌঁছানোর জন্য যেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, ঠিক সেরকমই জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গবেষণার জ্যেষ্ঠ লেখক ড. জেনিফার কোহন বলেন, অতি ওষুধ-প্রতিরোধী সংক্রমণে আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক পাচ্ছেন না, এটি নির্মম বাস্তবতা।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য রোগ-জীবাণু ধীরে ধীরে সাধারণ ওষুধের প্রতিক্রিয়া এড়ানোর ক্ষমতা অর্জন করে। এর প্রধান একটি কারণ হলো অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার, যা ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ কৌশল শেখার সুযোগ দেয়। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, অতিরিক্ত ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিতে গিয়ে অনেক জায়গায় অ্যান্টিবায়োটিকের প্রাপ্যতার সংকট উপেক্ষিত থেকে গেছে।
গবেষকরা বাংলাদেশ, ব্রাজিল, মিশর, ভারত, কেনিয়া, মেক্সিকো, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় সিআরজিএন সংক্রমণের তথ্য বিশ্লেষণ করেন। ২০১৯ সালে এই আটটি দেশে আনুমানিক ১৫ লাখ সিআরজিএন সংক্রমণ ও চার লাখ ৮০ হাজার মৃত্যু হয়েছিল। অথচ, কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক মাত্র এক লাখ চার হাজার কোর্স সরবরাহ করা হয়েছিল। গড় হিসেব অনুযায়ী, মাত্র ৬.৯% ক্ষেত্রে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গিয়েছিল—কেনিয়ায় মাত্র ০.২%, আর মেক্সিকো ও মিশরে সর্বোচ্চ ১৪.৯%।
ড. জেনিফার কোহন বলেন, অনেক সময় রোগীরা হাসপাতালে যেতে পারেন না, আর গেলেও চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারেন না। আমরা এখনো প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক সরবরাহে মনোযোগী হচ্ছি। অথচ এইসব দেশে রোগের চাপ কম। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে—অধিক রোগ-প্রবণ অঞ্চলগুলোতেই প্রয়োজনীয় ওষুধ পৌঁছে দিতে হবে।
এই সমস্যার সমাধানে এইচআইভি মোকাবেলার মতো লক্ষ্য নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছেন কোহন। যেমন—৯৫% রোগীর সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়, ৯৫% রোগীর চিকিৎসা গ্রহণ নিশ্চিতকরণ, ৯৫% রোগীর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ।
লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যালিসন হোমস বলেন, এই গবেষণাটি অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়। যদি এই ঘাটতিগুলো দ্রুত সমাধান না করা হয়, তবে প্রতিরোধক্ষমতা বাড়তেই থাকবে, মৃত্যু বাড়বে এবং বৈষম্যমূলক বৈশ্বিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
এনএআর/