ডা. আহমাদ হাবিবুর রহিম

ডা. আহমাদ হাবিবুর রহিম

নবজাতক শিশু বিশেষজ্ঞ
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল


২৫ মার্চ, ২০২৫ ১০:৪৪ এএম

শিশুর শারীরিক বিকাশে কলার ভূমিকা

শিশুর শারীরিক বিকাশে কলার ভূমিকা
ছবি: সংগৃহীত

অনেক অভিভাবক মনে করেন কলা খাওয়ার ফলে শিশু ঠান্ডা বা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়, কিন্তু এটির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি খুবই কম। তবে কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে এটি কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে। আসুন বিস্তারিত দেখি–

কলার প্রকৃতি ও শিশুর শরীরের প্রভাব

  • কলা একটি ঠান্ডা প্রকৃতির ফল (According to Ayurveda and traditional beliefs)।
  • কলা খেলে শরীর কিছুটা শীতল অনুভব করতে পারে, বিশেষ করে রাতে খেলে বা ঠান্ডা আবহাওয়ায়।
  • এটি শ্লেষ্মা উৎপাদন বাড়াতে পারে, তাই যদি শিশুর আগে থেকেই সর্দি থাকে, তবে শ্লেষ্মা কিছুটা বাড়তে পারে।

তবে কলা সরাসরি ঠান্ডা বা সর্দি-কাশি সৃষ্টি করে না। কারণ–

  • কলায় প্রচুর পটাশিয়াম, ফাইবার ও ভিটামিন সি থাকে, যা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • কলার কোনো প্রমাণিত রাসায়নিক উপাদান নেই, যা ঠান্ডা বা ইনফ্লুয়েঞ্জা সৃষ্টি করতে পারে।
  • বিশ্বের অনেক দেশে কলা বাচ্চাদের আদর্শ খাবার হিসেবে গণ্য করা হয়।

কখন শিশুকে কলা খাওয়ানো এড়িয়ে চলা ভালো?

  •  যদি শিশুর আগে থেকেই ঠান্ডা, কাশি বা শ্বাসকষ্ট থাকে, তবে কলা খেলে শ্লেষ্মা সামান্য বাড়তে পারে।
  •  রাতে বেশি পরিমাণে কলা না খাওয়ানো ভালো, কারণ এটি হালকা শীতল অনুভূতি দিতে পারে।
  •  ঠান্ডা পরিবেশে খুব ঠান্ডা কলা বা ফ্রিজের কলা খাওয়ানো এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি গলায় অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।

শিশুকে কখন কলা খাওয়ানো যাবে?

 •  দিনের বেলায় বা সকালের নাস্তায় খাওয়ানো ভালো।
 •  গরম দুধ বা গরম খাবারের সাথে দিলে ঠান্ডা অনুভূতি কম হবে।
 •  কলা গরমকালে শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।

কোন বয়সের শিশুকে কিভাবে কলা খাওয়ানো উচিত?

 •  ৬ মাসের পর থেকে কলা খাওয়ানো যায় (ম্যাশ করে বা পেস্ট বানিয়ে)।
 •  ১ বছরের পর ছোট ছোট টুকরো করে খাওয়ানো নিরাপদ।
 •  স্কুলগামী শিশুর জন্য পারফেক্ট স্ন্যাকস।

পুষ্টি উপাদান-পরিমাণ-উপকারিতা

কলায় বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ফলে কলা বেশ উপকারী একটি ফল। কলার পুষ্টিগুণ ও উপাদানের তালিকা (প্রতি ১০০ গ্রাম কলায়) দেওয়া হলো

♦ শক্তি (ক্যালরি): ৮৯ ক্যালরি—দ্রুত শক্তি সরবরাহ কর।
♦ প্রোটিন: ১.১ গ্রাম—পেশি গঠনে সাহায্য করে।
♦ চর্বি (Fat): ০.৩ গ্রাম—খুবই কম, তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে উপকারী।
♦ কার্বোহাইড্রেট: ২২.৮ গ্রাম—তাৎক্ষণিক শক্তির ভালো উৎস।
♦ ফাইবার: ২.৬ গ্রাম—হজমে সহায়ক, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
♦ চিনি (Natural Sugar): ১২.২ গ্রাম—প্রাকৃতিক মিষ্টতা, রিফাইন্ড সুগারের বিকল্প।
♦ ভিটামিন সি: ৮.৭ মি.গ্রা—রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
♦ ভিটামিন বি৬: ০.৪ মি.গ্রা—মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে।
♦ ফোলেট (Vitamin B9): ২০ মাইক্রোগ্রাম—কোষ বিভাজনে সহায়ক, গর্ভবতী নারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
♦ পটাশিয়াম (K): ৩৫৮ মি.গ্রা—রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী।
♦ ক্যালসিয়াম (Ca): ৫ মি.গ্রা—হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়ক।
♦ ম্যাগনেসিয়াম (Mg): ২৭ মি.গ্রা—পেশি ও স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রম সঠিক রাখতে সাহায্য করে।
♦ ফসফরাস (P): ২২ মি.গ্রা—হাড় ও দাঁতের জন্য প্রয়োজনীয়।
♦ আয়রন (Fe): ০.৩ মি.গ্রা—রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়ক।
♦ জিংক (Zn): ০.১৫ মি.গ্রা—রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
♦ সোডিয়াম (Na): ১ মি.গ্রা—শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখে।

এসএইচবি/এনএআর/

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : শিশু স্বাস্থ্য
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত