
ডা. মোজাহেরুল হক
লেখক: সাবেক উপদেষ্টা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চল; জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা, ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন
১৪ জানুয়ারী, ২০২৫ ০৬:০৬ পিএম
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স শক্তিশালী করা প্রয়োজন

দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশের মধ্যে থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সবচেয়ে উন্নত মানের। আমাদের প্রচুর লোক থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য যান। পরবর্তী দেশটি শ্রীলঙ্কা; দেশটি তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মান অনেক উন্নত করেছে। এখন কথা হচ্ছে, আমাদের অবস্থাটা কোথায়? শুনতে খারাপ শোনালেও সেটি প্রকাশ করা উচিত, তা হচ্ছে আমাদের স্বাস্থ্য সেবার মান অত্যন্ত খারাপ এবং চিকিৎসা শিক্ষাও খুবই মানহীন। এ দু’টো জায়গায় আমাদের নজর দিতে হবে।
জনগনের স্বাস্থ্যের ব্যাপারটিকে যদি আমরা ‘জনস্বাস্থ্য’ নামে আখ্যায়িত করি, তাহলে আমাদের নজর দিতে হবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী যেখানে বাস করে, তাদের স্বাস্থের দিকে। আমরা প্রথমে চাইব, তারা যেন অসুস্থ না হয়। আর অসুস্থ হলে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং সম্ভব হলে পরবর্তী স্তরের চিকিৎসা যেন কাছাকাছি পায়। সেটি তাদের কাছে কি আছে? নেই।
আমাদের যে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো আছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি ক্লিনিক! এই ধরনের একটি নিউক্লিয়াস পৃথিবীর কোন দেশেই নেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের প্রাথমিক সেবা যদিও এখান থেকে শুরু হয়, তবুও সত্যিকারভাবে প্রাথমিক সেবাটা মানুষ পায় উপজেলা হাসপাতাল থেকে। তার নিচে আরও দুটো টায়ার আছে, এর একটি মুখ্য, তা হচ্ছে ইউনিয়ন হেলথ সেন্টার। এর বাইরে অনেক জায়গায় সাবসেন্টার রয়েছে। ইউনিয়ন হেলথ কমপ্লেক্স থেকে কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত এই জায়গার মান বৃদ্ধি করতে পারলে আমরা মিরাকেল করতে পারি। তাহলে আমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অন্যরা পেরে উঠবে না। যেমন একটি উপজেলা হাসপাতালে দশ জনের মত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন, সেখানে যাতায়াতের সুবিধাও খুবই উন্নত। তাহলে আমাদের রোগীরা উপজেলা হাসপাতালেই বেশিরভাগ চিকিৎসা সেবা পেয়ে যাচ্ছেন।
এ ক্ষেত্রে আমাদের কী করতে হবে? উপজেলাগুলোর স্বাস্থ্যসেবার মান যদি উন্নত করি, আগামী দিনের সংস্কারে যদি এটি প্রাধান্য পায় এবং এগুলোকে যদি শক্তিশালী ও মানসম্মত করা যায়; পাশাপাশি এখানে প্রয়োজনগুলোর ঘাটতি যদি না রাখি, তাহলে আমাদের দেশের সর্বাঙ্গীনভাবে একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা আমরা খুব সুন্দরভাবে নিশ্চিত করতে পারি।
তবে উপজেলায় অনেকগুলো পোস্ট আছে, কিন্তু তাদের সময়মতো পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের উপজেলাগুলোতে প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য কী করা যেতে পারে? সরকারিভাবে পদ সৃষ্টি করে দেওয়া আছে এবং পদায়নও করা আছে। কিন্তু শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিলেই হবে না, এর সাথে আনুষঙ্গিক সমস্ত সার্ভিস নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু সার্ভিস নিশ্চিত না, তাহলে তাকে সেখানে পদায়নের লক্ষ্যটা কী? স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কেন আমি এমন কাউকে পদায়ন করবো যাকে জনগন পাবে না বা যে ব্যবহৃত হবে না? সুতরাং প্রথম যে কাজটি করতে হবে তা হচ্ছে সরকারকে সার্বিক সংস্কারের আগে ধাপে ধাপে চিকিৎসকদের বিষয়টিকে সংস্কার করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারকে একটি কৌশলগত পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।
উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সকে শক্তিশালী করতে করণীয়
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে এমনভাবে সাজাতে হবে যেন স্থানীয় মানুষজনের সার্বিক চিকিৎসা সেখানেই সম্ভব হয়। এতে সেখানকার জনোগোষ্ঠীর বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্য সেবা যা দরকার, তার বিরাট অংশই তারা পাবেন সেখানে। শুধুমাত্র এর চেয়ে উন্নত সেবার জন্যই তারা জেলা হাসপাতালগুলোতে যাবেন। আর জেলা হাসপাতালগুলোর চেয়ে উন্নত সেবার প্রয়োজনে তারা যাবেন বিশেষায়িত হাসপাতালে। আমি বিশ্বাস করি, অগ্রাধিকারভিত্তিতে সংস্কার প্রথম দরকার উপজেলা হাসপাতালগুলোতে। এখানে সংস্কার করলে দেশব্যাপী সংস্কারের প্রভাব পড়বে।
প্রশ্ন হচ্ছে এটি কিভাবে নিশ্চিত করা যাবে? আমরা উপজেলা হাসপাতালগুলোতে যদি জনবল নিশ্চিত করতে পারি, একই সাথে প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে আমরা উপজেলাতেই পূর্ণাঙ্গ একটা ইউনিট পেতে পারি যেখানে জনগন সার্বিক স্বাস্থ্যসেবাটা পাবে।
-
২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
-
২৫ জানুয়ারী, ২০২৫
-
১৪ জানুয়ারী, ২০২৫
-
১৪ জানুয়ারী, ২০২৫
-
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪
-
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
-
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪