ডা. মুহাম্মাদ আনিসুর রহমান

ডা. মুহাম্মাদ আনিসুর রহমান

চিকিৎসক, প্রাবন্ধিক


২৯ অগাস্ট, ২০২৩ ১২:২৩ পিএম

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে পরিবর্তন করতে হবে জীবনাচরণ

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে পরিবর্তন করতে হবে জীবনাচরণ
উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সারসহ অনেক জটিল রোগের জন্য ধূমপান দায়ী ৷

দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা৷ বর্তমানে প্রায় প্রতিটি ঘরেই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে৷ নগরায়ন এবং জীবন মানের উন্নয়নের সাথে লাইফস্টাইল পরিবর্তনের ফলে এ সমস্যার প্রকটতা বেড়েছে৷ তাই স্বাস্থ্যসম্মত জীবনাচরণ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে৷ আজ এ বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করবো৷

সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ বলতে আমরা বুঝি, সিস্টোলিক বা উপরের রক্তচাপ যদি ১৪০ এমএমএইচজি বা তার বেশি এবং ডায়াস্টোলিক বা নিচের রক্তচাপ ৯০ এমএমএইচজি বা তার বেশি হবে৷  অর্থাৎ কারো রক্তচাপ যদি ১৪০/৯০ এমএমএইচজি অথবা তার বেশি হয়, তবে আমরা বলি তিনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। যাদের ডায়াবেটিস এবং দীর্ঘদিনের কিডনি জটিলতা (CKD) রয়েছে, তাদের জন্য এই সীমা ১৩০/৮০ এমএমএইচজি।

তাই যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, আমাদের টার্গেট থাকবে চিকিৎসা পদ্ধতির অনুসরণ ও ওষুধ সেবনের মাধ্যমে তাদের এই রক্তচাপ ১৪০/৯০ এমএমএইচজি এর নিচে রাখা। বিশেষ ক্ষেত্রে ১৩০/৮০ এমএমএইচজি  এর নিচে রাখা৷ তবে উচ্চ রক্তচাপের রোগীর রক্তচাপ যেন খুব বেশি কমে না যায়, সেজন্য নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে৷ রক্তচাপ অনেক কমিয়ে ফেলাও ঠিক নয়।

উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা বা ওষুধ সেবন করতে হয়৷ সেই সাথে মানতে হয় বেশ কিছু নিয়ম কানুন৷ তবে সবাইকে আমৃত্যু ওষুধ সেবন করতে হবে, এমনটি নয়৷ স্বাস্থ্য সম্মত জীবনাচার বা লাইফস্টাইল কখনো কখনো ওষুধ সেবনের পরিমাণ কমাতে পারে বা একটি পর্যায়ে ওষুধ সেবনের প্রয়োজন নাও হতে পারে৷

ওজন কমানো

আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজির গবেষণা মতে, স্থুল স্বাস্থ্যের অধিকারী ব্যক্তি যিনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তিনি প্রতি এক কেজি ওজন হ্রাস করলে রক্তচাপ এক এমএমএইচজি কমাতে পারেন৷ অর্থাৎ তিনি যদি ১০ কেজি ওজন কমাতে পারেন, তবে তার রক্তচাপ ১০ এমএমএইচজি কমে আসবে।

খাবারে লবণ পরিহার করা

কাঁচা লবণ বা খাবারে লবণ খাওয়ার অভ্যাস রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। তাই যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাদের কাঁচা লবণ গ্রহণ পরিহার করতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁচা লবণ খাওয়া পরিহার করলে এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (যেমন-কলা, ডাবের পানি ইত্যাদি) গ্রহণ করলে রক্তচাপ ৪-৬ এমএমএইচজি কমে যায়৷ তবে কিডনি রোগে আক্রান্তদের জন্য পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে৷

স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ

স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। বেশি বেশি তাজা শাক-সবজি, ফল, ফাইবার যুক্ত লাল চাল ও লাল আটা ইত্যাদি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী৷ যেসব খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট (গরু-খাসি-ভেড়ার মাংস, চামড়াসহ পোল্ট্রি মুরগি, মাখন, পনির, আইসক্রিম, নারিকেল ও পাম তেল ইত্যাদি) বেশি থাকে তা পরিহার করা বা অল্প পরিমাণ গ্রহণ করতে হবে৷ সর ছাড়া দুধ, কুসুম ছাড়া ডিম গ্রহণ করা যেতে পারে৷ গবেষণার ফল অনুযায়ী স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণের ফলে রক্তচাপ ১০-১১ এমএমএইচজি কমানো সম্ভব৷

শারীরিক শ্রম

কায়িক শ্রম বা শারীরিক পরিশ্রম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেক বেশি সহায়ক৷ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের মধ্যে যারা বেশি সময় বসে কাজ করেন বা শারীরিক শ্রম খুব কম করেন, তাদেরকে দৈনিক হাঁটতে, সাঁতার কাটতে এবং ব্যায়াম করতে পরামর্শ দেওয়া হয়৷ প্রতিদিন সম্ভব না হলেও সপ্তাহে অন্তত তিন দিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট করে মধ্যম গতিতে হাঁটা উচিত৷ গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে কমপক্ষে ৯০ মিনিট থেকে ১৫০ মিনিট ঘাম ঝরিয়ে হাঁটেন, তাদের রক্তচাপ ৫-৮ এমএমএইচজি পর্যন্ত হ্রাস পায়৷ তাই শারীরিক পরিশ্রমের বিকল্প নেই৷

ধূমপান ত্যাগ

ধূমপান পরিহার করলে রক্তচাপ ৫-১০ এমএমএইচজি হ্রাস পায়৷ এছাড়া হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সারসহ অনেক জটিল রোগের জন্য ধূমপান দায়ী৷ তাই এটি পরিহার করা উচিত৷

মদ্যপান পরিহার

মদ্যপান পরিহার করলে রক্তচাপ ৪-৬ এমএমএইচজি পর্যন্ত হ্রাস পায়৷ তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে মদপান কমানো বা পরিহারের পরামর্শ দেওয়া হয়৷ এছাড়া ক্যাফেইন জাতীয় খাবার যেমন-চা, কফি ইত্যাদি, হারবাল ওষুধ, জন্ম বিরতি পিল, এন্টি ডিপ্রেসেন্ট ও এন্টি সাইকোটিক কিছু ওষুধ ওজন বৃদ্ধির মাধ্যমে পরোক্ষভাবে উচ্চ রক্তচাপকে তরান্বিত করে৷ তাই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের এগুলো যথাসম্ভব ব্যবহার না করা শ্রেয়৷

উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করে দেখা গেছে, অনেক উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তি, যারা চিকিৎসাধীন ছিলেন তাদের দীর্ঘ মেয়াদি ওষুধ সেবনের পরিমাণ কমে এসেছে৷ কারো কারো ওষুধ ছাড়াই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে৷

তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত হুট করে নিজে থেকে ওষুধ সেবন ছেড়ে দিলে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে৷ তাই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে এসব বিষয় অনুসরণ করুন৷ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন, সুস্থ থাকুন৷

এএইচ/এসএএইচ

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত