চিকিৎসকের নিজ কর্মস্থলে হয়রানির শিকার হৃদরোগে আক্রান্ত মা
মেডিভয়েস রিপোর্ট: হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ছেলের কর্মস্থল রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন একজন মা। কর্মরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মা পরিচয় দেওয়ার পরও তাঁর কাছ থেকে দুই দফায় টাকা নেওয়া হয়।
রোগীর সন্তান রমেক হাসপাতালের অর্থোসার্জারি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. এ.বি.এম রাশেদুল আমীর আজ সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে মেডিভয়েসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিজ কর্মস্থলে গুরুতর অসুস্থ মায়ের দুর্ভোগের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি হাসপাতালের পরিচালক বরাবর চিঠি দিয়েছে। তবে এখনো কোনো আশ্বাস পাইনি। বিষয়টি নিয়ে রমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. বিমল চন্দ্র রায়কে জানিয়েছি। সেই সঙ্গে তাঁকে চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি যথেষ্ট ইতিবাচক। তিনি বলেছেন, এটি মেনে নেওয়া যায় না।’
হাসপাতালে এ রকম ঘটনা অহরহ ঘটছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সাধারণ রোগীদের জন্য ভর্তি ফি ২৫ টাকা এবং হাসপাতালে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি। কিন্তু রাতের বেলায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে জরুরি বিভাগের একটি চক্র মানুষের কাছ থেকে দেড়-দুই-আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত ফি নেয়।
এ অনিয়ম নিয়ে গত সপ্তাহ দুয়েক আগে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ডা. এ.বি.এম রাশেদুল আমীর বলেন, হাসপাতালের একজন কর্মকর্তার মা হওয়ার পরও এ রকম হয়রানি শিকার হলে সাধারণ রোগীদের অবস্থা কী, তা তো বোঝাই যাচ্ছে।
জানতে চাইলে রমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. বিমল চন্দ্র রায় রাতে মেডিভয়েসকে বলেন, ‘আজ দুপুরে আমাদের একটি বৈঠক ছিল। সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো সুযোগ আমার নেই। এটি পরিচালকের অধীনে। আমি তাঁর সঙ্গে আলোচনা করবো, যাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
এ সংক্রান্ত একটি চিঠি আজ দুপুরে পেয়েছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ডা. রাশেদুল আমীরের মায়ের সঙ্গে যা হয়েছে, এ রকম ঘটনা আমরা প্রায়ই শুনি, এটা নিয়ে আলোচনা করি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গেও আলাপ হয়, এর পরিপ্রেক্ষিতে মাঝে মাঝে কিছু ধরপাকড়ও হয়। কিছু দিন থেমে থাকে, আবার বেড়ে যায়।’
তাহলে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা আগে নিজেরাই স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে দেখি, সমাধানে কোনো উপায় বের করা যায় কিনা।সমাধান না হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো। সমস্যা আমাদের, সুতরাং সমাধানে আমাদেরই সচেষ্ট হতে হবে।’
এদিকে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে এক চিঠিতে ঘটনার যথাযথ অনুসন্ধান করে রোগী ও স্বজনদের হয়রানি বন্ধের অনুরোধ জানান তিনি।
এতে ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘গতকাল ১৭/০৯/২০২২ ইং তারিখে রাত আনুমানিক ১১.৩০ ঘটিকায় আমার মা হৃদরোগে আক্রান্ত হলে ডা. রবীন্দ্রনাথ বর্মন, (সহযোগী অধ্যাপক কার্ডিওলজি বিভাগ, রংপুর মেডিকেল কলেজ) এর পরামর্শে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে আমার মাকে আমার পরিবারের লোকজন নিলে ইমার্জেন্সি ভর্তি বাবদ ২৫০ টাকা চায়। একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মা পরিচয় পাওয়ার পর ৫০ টাকার বিনিময়ে ভর্তি করায়। যেখানে নির্ধারিত ভর্তি ফি ২৫ টাকা এবং সরকারি কর্মকর্তার মা এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী হিসাবে ভর্তি ফি ফ্রি হওয়ার কথা। পরবর্তীতে সিসিইউতে পাঠালে ওই সময় আমার ব্যক্তিগত সহকারীর কাছ থেকে ইমার্জেন্সি বিভাগের কর্মরত দুই ব্যক্তি জোরপূর্বক ২০০ টাকা নেন। আমার ব্যক্তিগত সহকারী আমার নাম পরিচয় ও রোগীর সাথে আমার সম্পর্কের বিষয় জানালে তারা বলে, যে স্যারের মা হোক টাকা দিতে হবে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘পরবর্তীতে রাতে আমি আসার পর মায়ের শয্যা পাশে অবস্থানকালে সিসিইউতে কর্মরত ওয়ার্ডবয় পরিচয়ধারী মাসুদ আমার কাছে সরাসরি টাকা দাবি করে। তার সাথে কথোপকথনের কিছু মুহূর্তের ভিডিওচিত্র আমি ধারণ করি।’
‘স্যার, উপরোক্ত ঘটনাবলী আমার কাছে অত্যন্ত মানসিক পীড়াদায়ক এবং অপমানকর। যে প্রতিষ্ঠানে আমি সেবা দিয়ে যাচ্ছি, সেই প্রতিষ্ঠানে যখন আমি নিজেই সেবা গ্রহীতা হিসেবে আসছি, তখন যে হয়রানির স্বীকার হচ্ছি তা সত্যিই দুঃখজনক এবং অপমানকর। আমি নিজে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা হিসেবে এ রকম হয়রানির শিকার হলে সাধারণ জনগণের অবস্থা সহজেই অনুমেয়’, উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
চিঠিতে এ ঘটনায় যথাযথ অনুসন্ধানপূর্বক হাসপাতালে রোগী এবং স্বজনদের হয়রানি বন্ধ এবং সেবার মান বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান ডা. রাশেদুল আমীর।