ডা. কামারুজ্জামান নাবিল

ডা. কামারুজ্জামান নাবিল

শিক্ষানবিশ চিকিৎসক, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা;
এমবিবিএস, ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইরান


০৪ জুলাই, ২০২২ ১০:০৬ পিএম

বন্যাদুর্গত অঞ্চলে গিয়ে যা দেখলাম 

বন্যাদুর্গত অঞ্চলে গিয়ে যা দেখলাম 
আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এই মুহূর্তে অসংখ্য মানুষ পানিবাহিত ও চর্মরোগে আক্রান্ত।

সিলেটের বন্যার্তদের নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংবাদ দেখে মনে হলো বানভাসি মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে পাশে দাঁড়ানোর দরকার। কিন্তু সিলেটে কখনো যাওয়া হয়নি, তাই এই ইচ্ছা বাস্তবে রূপ নিবে কিনা তা নিয়ে ভাবনা ছিল বেশি।

গত ২২ জুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মেডিকেল ক্যাম্পে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে একটি পোস্ট দেই। ওই পোস্টের কমেন্টে সিলেটের মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের আইসিইউ’র (এসএমও) ডা. মিলাদ মাহমুদুল হাসান জানান, তারা বন্যাকবলিত এলকায় মেডিকেল ক্যাম্পে যাচ্ছেন এবং সেখানে আমাকে যুক্ত হওয়ার আমন্ত্রণ জানালেন। আমিও প্রস্তুত হয়ে ২৬ জুন সকালের ট্রেনে রাজশাহী থেকে রওনা হলাম সিলেটের পথে। সেদিন রাতেই পৌঁছালাম সিলেটে।

গত ২৭ জুন সকালে সিলেটের বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোর মাঝে সবচেয়ে প্রত্যন্ত এবং ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা ও হবিগঞ্জের আজমেরীগঞ্জের দিকে রওনা হলো আমাদের মেডিকেল টিম। সুনামগঞ্জ যেতে যেতে রাস্তার দুইপাশে থৈ থৈ করছে বন্যার পানি। অনেক স্থানেই ডুবে গেছে যাতায়াতের রাস্তাও।

গাড়ি নিয়ে দুপুরের কিছু আগে পৌঁছালাম হবিগঞ্জে। তারপর ট্রলার নিয়ে মেডিকেল টিম রওনা হয়েছিল মূল গন্তব্য আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে। ট্রলার যখন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর পাশে ভিড়ছিল, তখন সেখানে থাকা মানুষগুলোর চাহনি দেখে নিজের মাঝে কষ্টের উদ্রেক হয়েছিল। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর ভেতরে প্রবেশ করে দেখি, একটি ছোট রুমে ত্রিশ-চল্লিশ জনের অবস্থান। নিজেকে প্রশ্ন করলাম, এভাবে কি বাস করা সম্ভব? পরিস্থিতির শিকার হয়ে তারা কত কঠিন সময়গুলো অতিবাহিত করছেন। না দেখলে বোঝানো যাবে না।

বন্যা আসার সাথে সাথে বন্যাদুর্গত এলাকায় পানিবাহিত এবং চর্মরোগ প্রকট আকার ধারণ করে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এই মুহূর্তে অসংখ্য মানুষ পানিবাহিত ও চর্মরোগে আক্রান্ত। আমাদের মেডিকেল টিম সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জের ৬টি আশ্রয়কেন্দ্রের ২ হাজারের বেশি অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসা, ফ্রি ওষুধ এবং উপহার উপকরণ যেমন: চিড়া, মুড়ি, গুড়, বিস্কুট, স্যালাইন, শিশুদের ব্রাশ, মোমবাতি, দিয়াশলাই ও ২ লিটার করে পানি প্রদান করেছে, যা প্রদান করেছি তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

এই কঠিন অবস্থায় ইচ্ছা থাকলেও বানভাসি অনেকেরই নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে গুরুত্ব দেওয়ার মতো পরিবেশ নেই। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত বানভাসির স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে একাধিক মেডিকেল টিমের প্রয়োজন। অন্যথায় চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়বে এসব অঞ্চলের মানুষ।

এএইচ 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত