২৩ জানুয়ারী, ২০২২ ১০:২৯ এএম

বিএমডিসিকে সমন্বিতভাবে এগিয়ে নিতে চাই: অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান

বিএমডিসিকে সমন্বিতভাবে এগিয়ে নিতে চাই: অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান
বিএমডিসির নতুন সভাপতি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান মেডিভয়েসকে বলেন, কাজ করলে কাজের সমালোচনা হয়। প্রশংসা নিতে চাই না—এ কথা বলবো না, কিন্তু সমালোচনা নিতে চাই না। সমালোচনা এড়াতে তাই কথা কম বলে কাজ করতে চাই। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান। শনিবার (২২ জানুয়ারি) বিএমডিসি কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির ৪৯তম সাধারণ সভায় কাউন্সিলরদের সর্বসম্মতিক্রমে এ দায়িত্ব পান তিনি। নির্বাচিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর নতুন দায়িত্ব ঘিরে পরিকল্পনা জানতে একুশে পদকপ্রাপ্ত এ জাতীয় অধ্যাপকের সঙ্গে যোগাযোগ হয় মেডিভয়েসের। প্রচারবিমুখ এই চিকিৎসক জানান, বিএমডিসি নিয়ে তাঁর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কথা। কথোপকথনের চুম্বক অংশ পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো। কথা বলেছেন, মো. মনির উদ্দিন। 

মেডিভয়েস: নতুন দায়িত্ব ঘিরে আপনার পরিকল্পনা যদি বলতেন? 

অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান: কেবলই দায়িত্ব নিলাম। এর পরিধি বুঝতে হবে। বিএমডিসির কোনো কমিটিতে বহু দিন ছিলাম না। বছর দশেক আগে স্ট্যান্ডিং কমিটিতে ছিলাম, কিন্তু ইসিতে কোনো দিন ছিলাম না। সুতরাং আমার কাছে পুরো জিনিসটাই নতুন। তাই কি কাজ হচ্ছে, কোথায় কি হচ্ছে বা না হচ্ছে, কিংবা কোথায় কোথায় সমস্যা আছে, সেগুলো বুঝতে একটু সময় লাগবে। এর পর এ বিষয়ে ভাববো। আমার মতো বয়স্ক লোক এই প্রফেশনে কম আছে, হাতেগুনা কয়েকজন। বাসা থেকে পারতপক্ষে বের হই না। জুমেই কাজ-কর্ম চালাচ্ছি। এখানে বসেই এগুলো বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করছি। 

মেডিভয়েস: অনুভূতি জানতে চাই। 

অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান: এটা গুরুদায়িত্ব। এ কাজের জন্য কর্তৃপক্ষ আমাকে উপযুক্ত মনে করেছেন। এজন্য তাঁরা আমাকে এ দায়িত্ব দিয়েছেন। তারা আমার প্রতি অত্যন্ত সদয়। আমার কর্মক্ষমতা সম্পর্কে আমি জানি না, কিন্তু তাঁদের কাছে যোগ্য প্রতিপন্ন হয়েছি, সেটা আমার জন্য পরম সৌভাগ্যের।’ 

মেডিভয়েস: বিএমডিসির অনুমোদন ছাড়াই অনেক সময় সিএমইর নামে বিদেশি চিকিৎসকরা চিকিৎসা জড়িয়ে যায়, মাঝে মাঝে ভুয়া চিকিৎসকের স্বাস্থ্যসেবায় জড়িয়ে যাওয়ার খবর পাওয়ায় যায়। এ ব্যাপারে আপনার ভূমিকা কেমন হবে?

অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান: বিএমডিসি অত্যন্ত দক্ষ হাতেই পরিচালিত হয়ে আসছিল। পূর্বের নিয়মনীতি পর্যালোচনা করে কাজ এগিয়ে নেবো। তবে যাই করি না কেন, সিদ্ধান্ত আমার একার হবে না। এসব বিষয়ে কতদূর কি হয়েছে, তা নিয়ে অন্যদের সঙ্গে আলাপ করে পথচলা শুরু করবো। নির্বাহী কমিটিতে যারা আছেন—তাঁরা অনেক অভিজ্ঞ মানুষ, তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এগুবো। 

মেডিভয়েস: মেডিকেল শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে এ ধারার গুরুত্বপূর্ণ রেগুলেটারি অথরিটি হিসেবে আপনার নেতৃত্বে বিএমডিসি কি কি পদক্ষেপ নেবে?

অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান: এ বিষয়ে অনেকেরই চিন্তা-ভাবনা থাকে, থাকাটাই স্বাভাবিক। আমারও ব্যক্তিগত কিছু কিছু চিন্তা-ভাবনা আছে। তবে এটা এই মুহূর্তে অবশ্যই বিএমডিসির চিন্তা নয়। যেহেতু সাম্প্রতিক সময়ের অনেক তথ্য আমি জানি না, তাই সে বিষয়ে কিছু কিছু শূন্যতাও থাকতে পারে। সাম্প্রতিক তথ্যগুলো জেনে নিয়ে আমার চিন্তাগুলো সমন্বয় করার চেষ্টা করবো। এ ক্ষেত্রে আমার সহকর্মীদের মতামত অগ্রাধিকার পাবে।

মূল কথা হলো: সহকর্মীদের সঙ্গে মিলে-মিশে কাজ করতে চাই। এটাই আমার জন্য বড় কথা। আমি সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। বিএমডিসি যা করবে, এটা আমার একার কাজ না। আমার কাজ, পাশাপাশি আমার সঙ্গীদেরও। আমাদেরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এটাই আমার লক্ষ্য। আমি জানি, কাজ করলে কাজের সমালোচনা হয়। প্রশংসা নিতে চাই না—এ কথা বলবো না, কিন্তু সমালোচনা নিতে চাই না। সমালোচনা এড়াতে তাই কথা কম বলে কাজ করতে চাই। কাজ করি, তাই কথা বলি কম। আল্লাহ তা’লাই এ রকম করে দিয়েছেন। এখানে আমার কোনো কৃতিত্ব নাই।

একনজরে অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান

চিকিৎসক হিসাবে সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৭ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান। ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে পাঁচ বছরের জন্য জাতীয় অধ্যাপক নিযুক্ত করে।

মাহমুদ হাসান শিক্ষক ও চিকিৎসক হিসাবে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০১১-২০১৩ সালে দুই বছর মেয়াদে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স এন্ড সার্জন্সের (বিসিপিএস) সভাপতি ছিলেন।

শিক্ষা জীবন

মাহমুদ হাসান ১৯৬১ সালে মেট্রিকুলেশন ও ১৯৬৪ সালে ইন্টারমেডিয়েট অব সায়েন্স (আইএসসি) পাস করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৭০ সালে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন।

বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স এন্ড সার্জন্স (বিসিপিএস) থেকে ১৯৭৫ সালে মেডিসিনে এফসিপিএস সম্পন্ন করেন। এমবিবিএস ও এফসিপিএস উভয় পরীক্ষাতেই প্রথম স্থান অধিকার করেন ডা. মাহমুদ হাসান। 

এর পর ১৯৮২ সালে যুক্তরাজ্যের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিপাকতন্ত্রের রোগ (গ্যাস্ট্রোএন্টারলজি) বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি নেন। যুক্তরাজ্যে এ বিষয়ে সাত বছরব্যাপী প্রশিক্ষণের সময় বিভিন্ন গবেষণাকার্য সম্পাদন করেন তিনি।

বর্ণাঢ্য কর্মজীবন

দেশে ফেরার পর ১৯৮২ সালে তিনি তৎকালীন ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিসিন এন্ড রিসার্চে (আইপিজিএমআর) বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ২০০৬ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। 

দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন গবেষণাপত্রে তাঁর দেড় শতাধিক প্রকাশনা রয়েছে।

পেশাজীবী নেতা হিসেবেও সমুজ্জ্বল 

পেশাগত জীবনের পাশাপাশি পেশাজীবী নেতা হিসেবে সমান উজ্জ্বল ডা. মাহমুদ হাসান। তিনি ২০১১-২০১৩ সালে দুই বছর মেয়াদে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ান্স ও সার্জন্সের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দুইবার বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। এ ছাড়াও বাংলাদেশ গ্যাস্ট্রোএন্টারলজি সোসাইটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত