১৪ নভেম্বর, ২০২১ ১২:০৭ পিএম

চমেকে সংঘর্ষ: হাঁটছেন সেই আকিব

চমেকে সংঘর্ষ: হাঁটছেন সেই আকিব
হাঁটছেন চমেকে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত আকিব।

মেডিভয়েস রিপোর্ট: চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন চমেকের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাহাদি জে আকিবের শারীরিক অবস্থা এখন আগের চেয়ে ভালো। প্রায় দুই সপ্তাহ পর তিনি একা একাই দাঁড়াতে পারছেন বিছানা ছেড়ে, পারছেন হাঁটতে। তা ছাড়া খেতেও পারছেন নিত্য খাবারদাবার। অবস্থার উন্নতি ঘটায় তার অস্ত্রোপচার করা মাথার সেলাই খুলে ফেলা হয়েছে। নিয়মিত ড্রেসিং করা হচ্ছে, বদলানো হচ্ছে ব্যান্ডেজ।

আকিবের মাথা থেঁতলে সেখানকার হাড় ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। অবস্থা এত গুরুতর ছিল যে, অপারেশন করে হাড় সরিয়ে পেটের নিচে রেখে পুরো মাথায় ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয়। তার মাথার সাদা ব্যান্ডেজের ওপর চিকিৎসকরা তখন লিখে রেখেছিলেন, ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না।’ ঘটনাটি ব্যাপক আলোড়ন তোলে সারাদেশে। এখন তার উঠে দাঁড়ানোর ও হাঁটাহাঁটি করার বিষয়টি আশাবাদী করে তুলেছে চিকিৎসকদের।

আকিবের মেডিকেল টিমের দায়িত্বে থাকা চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এসএম নোমান খালেদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আকিবের দ্রুত উন্নতি আমাদের আশাবাদী করে তুলছে। ওর ব্রেনে গুরুতর আঘাত লেগেছে। পর্দার ওপরে ও নিচে ইনজুরি হয়েছে। এ ধরনের রোগীদের প্রায় ৮০ শতাংশই মারা যায়। কিন্তু চিকিৎসকদের তাৎক্ষণিক দূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে আকিব এখন ভালো ও শঙ্কামুক্ত আছে। এখনও আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকলেও তাকে শিগগির কেবিনে স্থানান্তর করা হবে।’

আইসিইউ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রঞ্জন কুমার নাথ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আকিব এখন অনেকটাই সুস্থ আছেন। আশা করছি তিনি খুব দ্রুত পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে উঠবেন। আকিবকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য এবং সংক্রমণ ও বাড়তি ভিড় থেকে নিরাপদে রাখতেই আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আহত আকিবকে হাসপাতালে ভর্তি করার সময় তার পুরো মাথা থেঁতলানো ছিল। হামলায় ভেঙে যায় তার মাথার হাড়; মস্তিস্কেও হয় প্রচুর রক্তক্ষরণ। মারাত্মক ক্ষতি হয় ব্রেনের। অপারেশন করে মাথার কিছু অংশ তার শরীরের পেটের নিচে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।’

ছেলের শারীরিক উন্নতির ঘটনায় খানিকটা আশ্বস্ত আকিবের বাবা স্কুলশিক্ষক গোলাম ফারুক মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, ছেলের অবস্থা এখন আগের চেয়ে অনেকটা ভালো হওয়ায় স্বস্তি পাচ্ছি। তার সেন্সও আগের চেয়ে ভালো রেসপন্স করছে। এ জন্য চিকিৎসকসহ সবার কাছে আমরা ঋণী। ডাক্তার বানাতে পাঠিয়ে আমার ছেলের যে করুণ পরিণতি ঘটেছে, তা যেন আর কারও না হয়। আকিবের এমন করুণ অবস্থার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি করেন তিনি।

হামলার পর থেকে আকিবকে নিয়মিত দেখাশোনা করে আসছেন চমেকের ৬০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অভিজিৎ দাশ। আকিবের শারীরিক অবস্থার উন্নতিতে আশ্বস্ত অভিজিৎ বলেন, ‘আকিবকে অনেকদিন পর হাঁটতে দেখে মনে অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করছি।’

কলেজের ৫৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘হামলা চালিয়ে আকিবকে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়েছে। কলেজেরই সহপাঠীদের কাছ থেকে এমন গুরুতর আঘাত কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না। হামলাকারীদের কঠোর শাস্তিমূলক বিচার চাই।’

আকিবের কয়েকজন সহপাঠী বলেন, ‘আমাদের সবার একটিই চাওয়া আকিব সুস্থ হয়ে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক। ওর পরিবারসহ সবার মাঝে ফিরে আসুক স্বস্তি।’

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ৩০ অক্টোবর ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনার সময় মাথায় গুরুতর আঘাত পান কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহাদি জে আকিব। ওইদিনই তার মাথায় অপারেশন করা হয়।

প্রসঙ্গত, সংঘর্ষে জড়ানো ছাত্রলীগের দু'পক্ষের একটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর এবং অন্যটি সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত তিনটি পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। আটক করা হয়েছে দু'জনকে। আকিবের বাড়ি কুমিল্লা জেলার কোতোয়ালি থানার বাদুড়তলায়।

সূত্র: দৈনিক সমকাল

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক