ডা. রুমি আহমেদ

ডা. রুমি আহমেদ

সাবেক ছাত্র, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ;
যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত।


২৫ এপ্রিল, ২০২১ ১২:২৮ পিএম

‘প্রত্যেক সিজনে করোনার মিডটেশন বদলায়’

‘প্রত্যেক সিজনে করোনার মিডটেশন বদলায়’
ছবি: সংগৃহীত

মানুষকে ভয় দিয়ে মানুষ কি যে, মজা পায় আমি তা বুঝি না। এখন পত্রিকার হেডলাইন আর কিছু বিশেষজ্ঞ আছে, এরা দলবেঁধে ভয়াবহ মিউটেশন আসছে, সর্বনাশা ভ্যারিয়েন্ট আসছে, মৃত্যু নিশ্চিত ‘ডাবল মিউটেন্ট, ত্রিপল মিউটেন্ট, দশ ডবল মিউটেন্ট’ এসব রক্ত হিম করা হেডলাইন আর সোশ্যাল মিডিয়া বক্তৃতা দিয়ে মানুষের ত্রাসের বিনিময়ে নিজেদের কাটতি বাড়াতে ব্যস্ত।

করোনাভাইরাস সিজন শেষে কিছুটা মিউটেশন হয়, যা প্রত্যেক সিজনে সিজনে হয়। গাছে যেমন পাতা পরে, নতুন পাতা গজায়, সাপ যেমন বছর বছর খোলস বদলায় তেমনি করোনাভাইরাসেরও বছর শেষে মিউটেশন হয়। সে কারণে হিউমেন করোনাভাইরাসগুলো বছর বছর সংক্রমণ করে। এক বছরের করোনাভাইরাস পরবর্তী বছর প্রটেক্ট করে না। এক বছরের এন্টিবডি নতুন বছরের নতুন ভ্যারিয়েন্টকে পুরোপুরি  প্রিভেন্ট করতে পারে না।

এন্টিবডি আমাদের ইম্মিউন সিস্টেমের একটা ফুট সোলজার মাত্র। আমাদের ইম্মিউন সিস্টেমের বড় বড় কামান হচ্ছে সেল একবার ইনফেকশন হলে, একবার ভ্যাকসিন নিলেই মেমোরি টি-সেল-রেডি হয়ে যায়। ওই টি-সেল এসে ফাইট করে নতুন ভ্যারিয়েন্টের ভাইরাসকে সিরিয়াস ইনফেকশন করা থেকে বিরত রাখে।

এন্টিবডির ক্ষমতা খুব কম, একটা এপিটোপকে রিকোগনাইজ করে থাকে। একটু মিউটেশন হলেই আর বুঝে উঠতে পারে না। কিন্তু এই টি-সেল প্রচন্ড ক্ষমতাশালী। ধরুন (B 1.617) ডাবল মিউটেন্টের দুটো জায়গায় মিউটেশন আছে। ‘B. 1. 618 ( বেঙ্গল স্ট্রেইন) এর তিনটা জায়গায় মিউটেশন আছে, তাতে কি হয়েছে! সিডি ৮ টি -সেল করোনাভাউরাস স্পাইক প্রোটিনের ৫২টা সাইটকে রিকোগনাইজ করে আর সিডি চারটি সেল ২৩টা এপিটোপ বা সাইট রিকোগনাইজ করে দু-তিনটা মিউটেশন এইটি সেলের কাছে কিছুই না। ঠিক ই খুঁজে বের করবে আর আর একটা দুইটা ভাইরাস ধরে সকাল বিকাল নাস্তা করার মতো - যত নতুন ভ্যারিয়েন্ট হোক, ধরে ধরে ধ্বংস করবে।

আর একটা কথা এখন পর্যন্ত যে কয়টা ভ্যারিয়েন্ট এসেছে। সিরিয়াস অসুখ প্রিভেনশনে প্রতিটি ভ্যাকসিনই নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কার্যকরী।

ঝরা পাতার মতো পুরোনো মিউটেশন ঝরে পড়বে। বসন্তের নতুন পাতার মত, বছর ওয়ারী নতুন মিউটেশন আসবে। D614G মিউটেশন এসেছিল। গত সামারে ও অল্প সময়ে পুরো পৃথিবী ডমিনেট করেছিল। কি হয়েছে? এখন মূল উহান ভ্যারিয়েন্টও আর নাই, D614G ভ্যারিয়েন্টও নাই।

মিউটেশন আসবে যাবে কিন্তু এ নিয়ে মানুষ যাতে আপনাকে অহেতুক ভয় না দেখায়। ভয় যদি পেতেই হয় - মিউটেশনকে ভয় না করে, মাস্কবিহীন মানুষকে ভয় করুন। সোহাগ বা অন্যান্য কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠানকে ভয় করুন। বসুন্ধরা বা গাউসিয়া মার্কেটকে ভয় করুন। ঈদের গাদাগাদি ভিড়ের বাস ট্রেইনকে ভয় করুন।

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত