ডা. ইসমাইল আযহারী

ডা. ইসমাইল আযহারী

ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ 
সেশন: ২০১৩-১৪


২০ এপ্রিল, ২০২১ ০২:৪৮ পিএম

ইফতার ও সেহরিতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার: পরামর্শ ও করণীয়

ইফতার ও সেহরিতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার: পরামর্শ ও করণীয়
ছবি: সংগৃহীত

রোজার সময় আমাদের সুস্থ থাকার জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন। একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য যেই পরিমান খাবার প্রয়োজন হয় তাকে ব্যালেন্স ডায়েট বলে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক প্রায় ২০০০-২৫০০ ক্যালরি সমপরিমাণ খাবার গ্রহণ করতে হয়। তবে রোজার সময় ১০০০ থেকে ১৫০০ ক্যালরি খাবার গ্রহণ যথেষ্ট। কারণ রোজায় অল্প খাবার গ্রহণ করলেই অটোফ্যাজি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের ক্ষতিকর কোষসমূহ পরিষ্কার হয়। তাই অন্যান্য সময় যেই পরিমান খাবার খাওয়া যায় রোজায় তার চেয়ে এক তৃতীয়াংশ কম খেতে হবে।

আমাদের ক্যালরিজেনিক খাবারগুলো মূলত তিনভাগে বিভক্ত:

১. কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার যথা- চাউল, আটা, ময়দা, আলু, ছোলা বুট, খেজুর ও ফলমূল ইত্যাদি এক গ্রাম শর্করা থেকে চার ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়।

২.প্রোটিন তথা আমিষজাত খাবার যথা মাছ, মাংস, ডিম ও ডাল ইত্যাদি। এক গ্রাম প্রোটিন থেকে চার ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়।

৩.ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার বা তৈলাক্ত খাবার। এক গ্রাম ফ্যাট থেকে নয় ক্যালরি পাওয়া যায়।

নরমাল ব্যালেন্স ডায়েটের মধ্যে খাবারবে অনুপাত হচ্ছে-

কার্বোহাইড্রেট: প্রোটিন: ফ্যাট= ৪: ১: ১

আরো সহজে দৈনিক খাবারের ৬৫% হবে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা (ভাত, মুরি,  রুটি, আলু, খেজুর, কলা, ছোলা ভুট ও অন্যান্য ফলমুল)

২৫% হবে প্রোটিন বা আমিষ (মাছ, মাংস ও ডিম)

১০% ফ্যাট (তৈল) রোজার সময় ১৫০০  ক্যালরি পেতে হলে

৬৫% শর্করা তথা ৯৭৫ ক্যালরি গ্রহণ করা উচিত।

২৫০  গ্রাম শর্করা জাতীয় খাবার। ৬০ গ্রাম প্রোটিন জাতীয় খাবার। ৩০ গ্রাম স্নেহদ্রাব্য  খাবার।

ইফতারি আর ডিনার মিলিয়ে ৬০০-৭০০ ক্যালরি খেতে হবে আর সেহরিতে ৬০০-৭০০ ক্যালরি। আর যারা ওজন কমাতে চান তারা ইফতারিতে ৩০০ ক্যালরি খাবেন, সেহরিতে ৩০০ ক্যালরি পরিমান, সাথে ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার ও পর্যাপ্ত ফাইবার জাতীয় খাবার যেনো খাওয়া যায়৷

এবার আসুন জেনে নেই ইফতারি ও সেহরিতে কি কি খেতে হবে আর কি কি পরিহার কর‍তে হবে।

ইফতারিতে ৬০০ ক্যালরি পেতে হলে যা খেতে হবে:

১। খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নাত। খেজুর শর্করা জাতীয় খাবারের মধ্যে অন্যতম। খেজুরের মধ্যে শর্করা ছাড়াও প্রায় সব ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে চারটা মাঝারি (৩৫ গ্রাম) খেজুরের মধ্যে প্রায় ১০০ ক্যালরি রয়েছে। তাই ইফতারিতে চার থেকে পাঁচটা খেজুর খাওয়া যেতে পারে।

২। ফলমূলের মধ্যে ইফতারিতে কলা অন্যতম একটা কলায় প্রায় ১০৫ ক্যালরি রয়েছে তাই ইফতারির তালিকায় একটা করে কলা খাওয়া যেতে পারে।

৩। ছোলা বুট খাওয়া যেতে পারে। ৫০ গ্রাম ছোলা বুটের মধ্যে প্রায় ১৮০ ক্যালরি রয়েছে। ছোলাবুট অল্প পরিমান খাবে ২০-২৫ গ্রামের চেয়ে বেশি না খাওয়াই ভালো। কারণ এটা পরিপাক হতে দীর্ঘ সময় লাগে।

৪। একটা ডিম খাওয়া যেতে পারে। একটা ডিমের মধ্যে ৮০ ক্যালরি রয়েছে।

৫। অন্যান্য ফলমূল খাওয়া যেতে পারে যথা তরমুজ, আপেল ও কমলা এইসব পানিশূন্যতা রোধে অনেক উপকারী।

৬। ডাবের পানি, ইসুপগুলের ভুসি ও লেবুর শরবত ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। এইগুলি পানিশূন্যতা রোধে অনেক উপকারী।

ইফতারিতে যা পরিহার করা উচিত:

১। ইফতারিতে অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার কিংবা তেলে ডুবিয়ে যায়, যেসব খাবার তৈরি করা হয় যেমন: পেয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি,  চিকেন ফ্রাই ও জিলাপি ইত্যাদি যতটুকু সম্ভব পরিহার করতে হবে। কারণ এই খাবারগুলি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি করে।

২। একসাথে অনেক বেশি খাবার খেয়ে ফেলা যাবে না। অনেকে ইফতারিতে বসে খেতে খেতে ইসোফেগাস তথা গলবিল পর্যন্ত খেয়ে ফেলে তা কখনোই করা যাবে না।

৩। টক জাতীয় ফলে যদিও প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি থাকে তথাপি টক জাতীয় ফলে সাইট্রিক এসিডও থাকে। তাই রোজার সময় টক ফল সাবধানতার সাথে খেতে হবে। ভাল হয় রাতের খাবার শেষ করে খেলে। কারণ সাইট্রিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার গুলি এসিডিটির পরিমান বৃদ্ধি করে। তাই সতর্কতা অবলম্বন দরকার।

৪। টমেটো ইফতারির সময় অনেকের প্রিয় খাবার তবে টমেটোতে প্রচুর পরিমান সাইট্রিক এসিড ও ম্যালিক এসিড থাকে এবং এটা পাকস্থলীতে ইরিটেশন করে তাই টমেটো বেশী পরিমান না খাওয়াই উত্তম।

৫। ঝাল খাবার পাকস্থলীতে এসিডিটির পরিমান বাড়িয়ে দেয় তাই কাচা মরিচ কিংবা অতিরিক্ত ঝাল খাবার পরিহার করে চলতে হবে।

৬। গরম খাবার যথা-চা ও কফি ইত্যাদি পাকস্থলিতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড ক্ষরণের পরিমান বাড়িয়ে দেয় তাই রোজার সময় চা, কফি ইত্যাদি পরিহার করা উচিত।

ডিনার কিংবা রাতের খাবারে যা খাবেন:

প্রথমত ইফতারিতে যেই খাবারগুলির কথা বলা হয়েছে, সেগুলি খেলে পরে ডিনার করা প্রয়োজন হয়না। তারপরও যদি কারো বেশি ক্ষিধে লাগে, তবে সে এক কাপ পরিমান ভাত সাথে মাছ, ডিম আর ডাল সবজি খেতে পারে। অবশ্যই একটা লাইট মিল হতে হবে। অতিরিক্ত খাবার বর্জনীয়। ইফতার করলে পরবর্তীতে তারাবির নামাজের পরে একটু ক্ষিধে লাগা স্বাভাবিক। তখন অনেক বেশি খেতে মন চায় কিন্তু তখন হালকা দুই থেকে তিনটা খেজুর খেলেই ক্ষিধে চলে যাবে। তাই তখন অনেক ভারি খাবারের কোনো দরকার নাই। কারণ এই ক্ষুধা বেশিক্ষণ থাকবে না। ৩০ মিনিট সহ্য করলে এমনিতেই এই ক্ষুধা চলে যাবে।

সেহরির সময় যা করনীয়:

ফজর নামাজের সময় হওয়ার আগ পর্যন্ত সেহরি করা যায়। রাসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেরিতে সেহরি করার কথা বলেছেন। এটা সুন্নাত, এই সুন্নাত পালনে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে। দেরিতে সেহরি করার জন্য এই কারণে বলা হয়েছে যেন, সেহরি করে ফজর নামাজের প্রস্তুতি নেওয়া যায়। আর ফজর নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে নামাজ শেষ করে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে যে ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগবে, তা খাবার পরিপাকে সহায়তা করে। যদি কেউ ফজরের সময় হওয়ার এক থেকে দুই ঘন্টা আগে সেহরি করে তাহলে সে তো আর সেহরি শেষ করে দুই ঘন্টা বসে থাকবে না বরং শুয়ে পরবে আর খাবার খেয়ে সাথে সাথে শুয়ে যাওয়া এসিডিটির অন্যতম কারণ। তাই দেরিতে সেহরি করা সুন্নাত আর সেহরি করে নামাজ পড়ে তারপর ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য উত্তম।

সেহরির খাবার হবে:

ভাত, মাছ বা মুরগী ডাল ও সবজি ইত্যাদি খুব বেশিও না আবার খুব কম ও না।

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত