২৭ জানুয়ারী, ২০২১ ০৩:১৩ পিএম

টিকাদানের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু, উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী 

টিকাদানের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু, উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী 
ছবি: আল জাজিরা

মেডিভয়েস রিপোর্ট: বহুল প্রতীক্ষিত টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে তিনটায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। 

প্রথম টিকা নেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। এ সময় চিকিৎসক, পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ পর্যায়ক্রমে আরও ২৯ সম্মুখযোদ্ধার দেহে করোনার টিকা প্রয়োগ করা হয়।

এ সময় সাহসিকতার সঙ্গে টিকা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। কারণ অনেক দেশ এখনো টিকা সংগ্রহ করতে পারেনি।’

এর আগে গত ২১ জানুয়ারি ভারতের উপহার হিসেবে পাঠানো ২০ লাখ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন ঢাকা পৌঁছায়। এই টিকা নির্ধারিত ব্যক্তিদের প্রয়োগের মাধ্যমে দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে সরকার।

এদিকে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে সরকারের কেনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভ্যাকসিনের ৫০ লাখ ডোজ গত ২৫ জানুয়ারি সকাল ১১টার দিকে দেশে পৌঁছায়। 

টিকা আসার পর বিমানবন্দর থেকে সরাসরি বেক্সিমকোর টঙ্গী গুদামে নিয়ে যাওয়া হয়। এ লক্ষ্যে সকাল থেকেই বিমানবন্দরে প্রস্তুত রাখা হয় ৯টি ফ্রিজার ভ্যান। পরে সরকারের চাহিদা অনুসারে ভ্যাকসিন ৬৪ জেলায় বিতরণ করা হবে। 

সূত্র মতে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ভারতে উৎপাদন করছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। দেশীয় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও সরকার এবং সেরামের মধ্যে যৌথ চুক্তির মাধ্যমে সেই ভ্যাকসিনেরই তিন কোটি ডোজ কিনেছে বাংলাদেশ। প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন বেক্সিমকোর মাধ্যমে বাংলাদেশে আসবে। এর প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ পেয়েছে বাংলাদেশ।

বেক্সিমকো জানিয়েছে, এই ভ্যাকসিন পরিবহনের জন্য তাঁরা বিশেষ কাভার্ড ভ্যান কিনেছি। যা তাঁদের কাছে আগে ছিলো না।

এ ছাড়াও সরকারের কেনা টিকার বাইরে বিভিন্ন ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানিতে কাজ করা প্রতিনিধিদের জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আরও ১০ লাখ ডোজ টিকা আমদানি করছে বেক্সিমকো। 

টিকায় ত্রুটির দায় বেক্সিমকোর 

এদিকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন ভারত থেকে আনা টিকায় যেকোন ত্রুটির দায় বেক্সিমকোর। তিনি বলেন, ‘আমরা যে টিকা এনেছি, সেগুলোর কোথাও কোনো ত্রুটি, ড্যামেজ বা শর্টেজসহ কোনো রকমের সমস্যা থাকে তবে সেগুলো বেক্সিমকো ফার্মা নিয়ে যাবে।’

নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘সরকারকে দেওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিটি ভ্যাকসিন চেক করে দেখা হবে। সরকারকে আমরা নিখুদ ভ্যাকসিন দেবো। যদি ভ্যাকসিনে  কোথাও কোনো ত্রুটি, ড্যামেজ বা শর্টেজসহ কোনো রকমের সমস্যা থাকে তবে সেগুলো বেক্সিমকো ফার্মা নিয়ে যাবে। এর দায় সম্পূর্ণই বেক্সিমকো ফার্মার।’

ভ্যাকসিন নিয়ে আতঙ্ক মনস্তাত্ত্বিক

করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে অযথা ভয় বা আবেগ তাড়িত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ভয় পাওয়ার সঙ্গে ভ্যাকসিন না নেওয়ার বিষয়টি মনস্তাত্ত্বিক। 

গত ২২ জানুয়ারি রাজধানীর ধানমণ্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ‘করোনা টিকার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, এখন যে ভ্যাকসিন জনগণকে দেওয়া হচ্ছে সেগুলোকে বলা হয় ‘ফার্স্ট জেনারেশন’ ভ্যাকসিন। বৈজ্ঞানিকদের ভাষায় একে ভ্যাকসিনের ফোর্থ ট্রায়ালও বলা হয়। হাজার হাজার মানুষকে এই ভ্যাকসিন দেওয়ার পর আবার বিশ্লেষণ করা হবে। তারপর সেকেন্ড জেনারেশন ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে।

সাধারণত ফার্স্ট জেনারেশন ভ্যাকসিন নেওয়া হয় না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমাদের হাতে সময় কম থাকায় ফার্স্ট জেনারেশন ভ্যাকসিন নিতে হচ্ছে। তাড়াতাড়ি আমাদেরকে নিতে হবে। এজন্যই ফার্স্ট জেনারেশন ভ্যাকসিনই আমরা নিচ্ছি, সারা পৃথিবীর লোকই নিচ্ছে। রূপান্তরিত করোনাভাইরাসেও ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা থাকবে। তবে এই কার্যকারিতা ছয় মাসের বেশি থাকবে না।’

জোর করে কাউকে টিকা প্রয়োগ নয় 

টিকা গ্রহণ নিয়ে অনীহার প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, টিকা নেওয়াটা যার যার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। কাউকে জোর করে টিকা দেওয়া হবে না।

মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগের বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) করোনার টিকা সংরক্ষণাগার ও প্রস্তুতি পরিদর্শনে এসে এ কথা বলেন তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘টিকা নেওয়াটা যার যার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। জোর করে আমরা কাউকে টিকা দেব না। আমরা আহ্বান জানাব টিকা নেয়ার জন্য। কারণ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা কার্যকর ব্যবস্থা। টিকার জন্য তো আমরা উদগ্রীব ছিলাম। কাজেই আমি আহ্বান করবো, আপনারা যারা আগ্রহী তারা টিকা নিতে আসবেন।’

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক