২০ অক্টোবর, ২০২৪ ০৬:১০ পিএম
স্বাস্থ্য উপদেষ্টাসহ ঊর্ধ্বতনদের অপসারণের হুমকি

একক আধিপত্য চায় ড্যাব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অচলাবস্থা

একক আধিপত্য চায় ড্যাব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অচলাবস্থা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ড্যাবের বিক্ষোভ। ছবি: আবু সাহিদ

মেডিভয়েস রিপোর্ট: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় রয়েছে বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। তাই আপাদমস্তক নিজেদের সমর্থক ছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসকের নিয়োগ মানতে পারছে না সংগঠনটি। বিপ্লবোত্তর অন্তর্বর্তী সরকার মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিলেও তারা বাধ সাধছেন। স্বৈরাচারের দোসরসহ বিভিন্ন অভিধায় অভিহিত করে কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করছেন তারা।

গত ২০ আগস্ট স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সামনে নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করার পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কের শান্ত থাকার আহ্বানও উপেক্ষা করেন তারা। তখন তাদের সামনে একজন চিকিৎসককে টেবিলের ওপর উঠতে দেখা যায়।

এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিয়োগ পাওয়া ভিন্ন মতের চিকিৎসকদের অপসারণে আন্দোলনে নেমেছে ড্যাব। আজ রোববার (২০ অক্টোবর) অধিদপ্তরের সামনে সকাল থেকে দিনব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ করে সংগঠনটি। আন্দোলন পরিস্থিতির মধ্যে অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মস্থলে আসতে পারেননি। ফলে অধিদপ্তরে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা।

নিজেদের স্বার্থ আদায়ে অব্যাহতভাবে এ রকম কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে ড্যাব। ফলে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ড্যাবের আজকের বিক্ষোভ সমাবেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এবিএম আবু হানিফসহ লাইন ডিরেক্টরদের অপসারণ ও শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।

অধিদপ্তরে কর্মরত অধিকাংশ স্বাস্থ্য প্রশাসককে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর আখ্যা দিয়ে তাঁদের পদ থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানায় ড্যাব নেতারা। অন্যথায় তাঁদের ব্যাপারে ড্যাব আপোষ করবে না বলে সমাবেশে জানানো হয়।

স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে অপসারণের হুমকি

আন্দোলনে আগ্রহী নয় জানিয়ে দ্রুত তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড্যাবের চিকিৎসকরা বলেন, ‘তারা চান সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। অন্যথায় আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাসহ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অপসারণ করা হবে।’

তারা বলেন, আওয়ামী সরকারের সময় মদদপুষ্ট কোনো চিকিৎসককে সুবিধা নিতে সুযোগ তৈরি করতে দেওয়া হবে না।

ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা নিরসনে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দেওয়ারও আহ্বান জানান কোনো নেতা। বলেন, নির্বাচিত সরকারের হাতে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সাধিত হবে৷

শপথ ভঙ্গ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যরা!

নেতৃবৃন্দ বলেন, আজকের এই স্বাধীনতার জন্য ড্যাবের সকল সদস্যের ভূমিকা রয়েছে। এর পাশাপাশি তারা দীর্ঘ দিন ধরে বৈষম্যের শিকার। সুতরাং তাদেরকে পদোন্নতি ও পদায়ন না করে অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যরা শপথ ভঙ্গ করেছেন।

তারা আরও বলেন, স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হলেন চিকিৎসক। আর চিকিৎসকদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ড্যাব। তাদের বাদ দিয়ে আপনারা কার্যক্রম চালাতে পারবেন না।

বিতর্কিত নিয়োগের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতকে অস্থির করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

সমাবেশে ড্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটি ও ডিজি শাখাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসকদের পাশাপাশি স্থানীয় যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদেরও দেখা গেছে।

জনসংযোগ কর্মকর্তার কক্ষ দখল করে ড্যাবের কাজ

এ ছাড়াও আন্দোলনের পাশাপাশি প্রভাব বিস্তার ও বিভিন্ন বিষয়ে অনিয়মে জড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ড্যাব নেতাদের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা মেডিভয়েসকে বলেন, অধিদপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তার রুম দখল করে ড্যাবের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক ডা. মো. মেহেদী হাসান বদলি-পদায়নের কাজ করছেন। এই প্রক্রিয়ায় তিনি মহাপরিচালকের মেডিকেল অফিসার হিসাবে নিজের পদায়ন নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়াও ড্যাব সমর্থিত চিকিৎসকদের পদোন্নতিসহ বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় আদায়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করছেন। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বদলি বাণিজ্যের অভিযোগও উঠেছে। 

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে ডা. মো. মেহেদী হাসান মেডিভয়েসকে বলেন, ‘আমার কক্ষের পাশেই গণসংযোগ কর্মকর্তার কক্ষ। মাঝে মাঝে সেখানে যাই। এটাকে দখল বলা যাবে না। কক্ষ দখল করার তথ্য সঠিক নয়। দীর্ঘ দিন পদবঞ্চিত ছিলাম, আমার মতো অনেক চিকিৎসক বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। তাদের কষ্টের কথাগুলো তো শুনতেই হবে।’

আন্দোলন পরিস্থিতিতে ফিরে যান স্বাস্থ্য পরিচালক

এদিকে বিক্ষোভের মধ্যে দুপুর দুইটার দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আসেন ডা. এবিএম আবু হানিফ। তবে আন্দোলন পরিস্থিতির কারণে কার্যালয়ে না ঢুকে আবার ফিরে যান এ স্বাস্থ্য প্রশাসক।

এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সঠিক নয়। আমরা যেসব কর্মস্থলে কাজ করে এসেছি, সেগুলোতে খোঁজ নিলে আপনারা তা বুঝতে পারবেন। প্রশাসনের চেয়ারগুলোতে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক কিছুর সঙ্গে সমন্বয় করে আমাদের কাজ করতে হয়। এগুলো এখন রেফার হিসেবে বিবেচনা করা মনে হয়, সঠিক কাজ না। আমরা যে চেতনায় বিশ্বাস করি, এর সঙ্গে এসব অভিযোগ যায় না।’

তাহলে এ পরিস্থিতি স্বাস্থ্য খাতকে অস্থির করার পাঁয়তারা কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই কথাগুলো আমি এভাবে বলবো না। যে পদে আমাকে পদায়ন করা হয়েছে, সে পদে এক মাস ধরে দায়িত্ব পালন করছি। আমি সবার কাছ থেকে সহযোগিতাই পেয়েছি। কোনো অসহযোগিতা পাইনি। সুতরাং এখানে কাউকে আমি আলাদা করতে রাজি না। উনারা (ড্যাব) উনাদের অবস্থান থেকে কথা বলেছেন। আশা করি, উনাদের অবস্থানও পরিষ্কার হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।’

এ সময় জটিলতা লাঘবে সবার সহনশীলতা প্রত্যাশা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, ‘আশা করি, ভুল বোঝাবুঝি কেটে যাবে, সবাইকে নিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করবো। এ লক্ষ্যে সবার সঙ্গে বসবেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই কানেকটেড আছি। আশা করি, এগুলো কেটে যাবে।’

লাইন ডিরেক্টরের বক্তব্য

অভিযোগ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট বিভাগের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. জয়নাল আবেদীন টিটো মেডিভয়েসকে বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে যোগদান করার পির থেকে আমি কখনও কোনো রাজনৈতিক দলের মিটিং মিছিলে যাইনি। দল, মত নির্বিশেষে সকল চিকিৎসকের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিলাম। সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। এর পরও বিগত ১৫ বছরে যোগ্যতা অনুযায়ী, উঁচু কোনো পদে পদোন্নতি হয়নি? এমনকি বিগত সরকারের আমলে আমাকে কুষ্টিয়ায় বদলি করা হয়েছে। সেটাকে 'সরকারের সিদ্ধান্ত' মনে করে আমি কুষ্টিয়াতে যোগদান করেছি।’

‘আমি নিজে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদার পক্ষে এবং সর্বদা ফ্যাসিজমের বিপক্ষে। ভুল ধারণা থেকে অনেকেই ভুল বক্তব্য দিচ্ছেন। তারা যদি সত্যটা সন্ধান করতেন, তাহলে ভুল ধারণা করতেন না’—যোগ করেন এই লাইন ডিরেক্টর।

এমইউ/

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক