কুমিল্লা মেডিকেলে ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন দ্বার উন্মোচন

মেডিভয়েস রিপোর্ট: ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে। হাসপাতালটিতে প্রথমবারের মতো কণ্ঠনালীর ক্যান্সারের টোটাল ল্যারিঞ্জেক্টমি অস্ত্রোপচার হয়েছে।
সোমবার (৩ জুন) হাসপাতালের ৫মতলায় অপারেশন থিয়েটারের পাঁচ নম্বর কক্ষে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সাত ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধশ্বাস এই অস্ত্রোপচার সফলতার সাথে সম্পন্ন হয়। অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন করেন কুমেক হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
রোগীর পরিবার ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামের মৃত আবদুল মালেকের ছেলে মো. জয়নাল আবেদীন (৫৫)। দীর্ঘদিন ধরে তিনি শ্বাসকষ্ট ও গলা ব্যথাজনিত রোগে ভুগছিলেন। পেশায় একজন অটোরিকশাচালক এই রোগী চিকিৎসার জন্য তার জীবিকার একমাত্র অবলম্বন অটোরিকশাটিও বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পড়েন।
২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি কণ্ঠনালীর তীব্র ব্যথা নিয়ে কুমেক হাসপাতালে ভর্তি হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার ডান কণ্ঠনালীতে ক্যান্সার ধরা পড়ে। তবে তার রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল। সেখান থেকে তাকে জাতীয় ক্যান্সার ইন্সটিটিউট হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু ওই হাসপাতালে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা করার মতো অর্থ ছিল না জয়নালের। তাই তিনি চিকিৎসা না নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করেন। এতে তার ক্যান্সারটি বৃদ্ধি পেয়ে আরও জটিল আকার ধারণ করে।
দুই বছরেরও বেশি সময় পর সংকটাপন্ন অবস্থায় গত মার্চ মাসে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি আবারও কুমেক হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে তার জীবন বাঁচানোর জন্য তাকে ট্রাকিওস্টোমি টিউবও পড়ানো হয়। এরপর সোমবার সাত ঘণ্টাব্যাপী এই রোগীর কণ্ঠনালীর ক্যান্সারের সফল অস্ত্রোপচার করা হয়। নাক, কান ও গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সম্পন্ন করা অস্ত্রোপচারটির তত্ত্বাবধানে ছিলেন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. এএইচএম দেলোয়ার মামুন। এ ছাড়া ওই টিমে ছিলেন ডা. রিফাত, ডা. বেলাল ও ডা. তসলিম।
এ বিষয়ে ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান মেডিভয়েসকে বলেন, এটি একটি বড় এবং জটিল অস্ত্রোপচার। এমন অপারেশন এর আগে কুমেক হাসপাতালে হয়নি। প্রথমবার হওয়ায় কাজটি বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমরা সফলতার সঙ্গে এটি সম্পন্ন করতে পেরেছি এবং রোগীও ভালো আছেন।
ক্যান্সারের মতো জটিল চিকিৎসায় আগামীর পরিকল্পনার বিষয়ে কুমেক হাসপাতালের পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, আগে আমরা এ ধরনের রোগীকে ঢাকায় পাঠাতাম। কিন্তু এই অপারেশনের পর পরিকল্পনা থাকবে ক্যান্সার রোগীদের অপারেশনের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
ক্যান্সারে আক্রান্ত জটিল রোগীদের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক। বলেন, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের মান অনেক উন্নত হয়েছে, সেবার মানও উন্নত হয়েছে। তাই বিশেষ করে বড় অপারেশনের জন্য রোগীদের অবশ্যই সরকারি মেডিকেলে আসা উচিত। আমাদের জনবল সংকট থাকায় চিকিৎসায় একটু সময় লাগে, তবে রোগীরা ভালো চিকিৎসায় পায়।
এনএএন/এএনএম