ডা. মো. তরিকুল হাসান

ডা. মো. তরিকুল হাসান

রেসিডেন্ট, নিউরোলজি বিভাগ,

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।


১৫ অক্টোবর, ২০২৩ ১২:৫৯ পিএম

নিশিগল্প

নিশিগল্প
প্রতীকী ছবি।

রাত দশটায় সার্জন এসে পৌছলেন। আমি এখানকার ডিউটি ডক্টর। অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) ঢুকতেই স্যার ওয়াশ নিতে বললেন, এসিস্ট করতে হবে। এমনিতেই বেশ ঘুম পেয়েছে। তার উপর নিউরোসার্জারির অপারেশন, কম করে হলেও দুই ঘণ্টা লাগবেই, খাইছে রে!

সার্জন বললেন, কোত্থেকে পাস করেছো?

আমি বললাম-রংপুর।

-সার্জারি কার আন্ডারে করেছো?

-বিমল স্যার।

-বিমল দা তো অনেক চমৎকার সার্জন। নিউরোসার্জারি ওটি এসিস্ট করেছো কখনো?

-জি, স্যার।

-বাড়ি কই তোমার?

-গাজীপুরের শ্রীপুর।

-মাওনা চেনো?

-চিনি স্যার।

-আমার আপন চাচার এক ক্লোজ বন্ধু অধ্যাপক মুজিব স্যার চেম্বার করেন ওখানে। বরমী চেনো?

-জি।

-ওখানে এক ক্লিনিকে অনেকদিন অপারেশন করেছি।

আমার সার্জারির ক্যারিয়ার শুরুর দিকের কথা। ঢাকায় তখন তেমন রোগী নেই। খুব কম অপারেশন হচ্ছে। বসে বসে সময় কাটছে না। এমন সময় একজন ঢাকার বাইরের একটা ক্লিনিক থেকে এসে বললো, স্যার ঢাকা থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে আমাদের ক্লিনিক, আমাদের নিজস্ব গাড়ি আছে, জ্যাম না থাকলে একটানে যামু আর আসমু। মাত্র এক ঘণ্টার মামলা, ৪টা অপারেশন কইরা সন্ধ্যার মধ্যেই ঢাকায় আইসা নান্নার গরম বিরানী খাইয়া বাসায় চইলা যাবেন।

আমি বললাম, তোমাদের ডায়াথার্মি আছে তো? ওরা বলল, ব্যবস্থা হবে স্যার।

আমার ভাবা-ভাবির কিছু ছিল না। সঙ্গে সঙ্গে রাজী হয়ে গেলাম। কথা হল দুপুর ১২টায় আমি ও একজন অ্যানেস্থেটিস্ট একসাথে অপেক্ষা করবো। তাঁদের গাড়ি আমাদের তুলে নিয়ে যাবে। বেলা ১টা বেজে গেল। তাঁদেরকে ফোন দিলাম। দেরির জন্য ‘সরি’ বললো। এখনই আসবে বললো। দেখতে দেখতে বিকেল গড়াতে লাগলো। তাঁদের দেখা নেই। অবশেষে সন্ধ্যা ৬টায় ওরা আসল একটা ভাড়া করা হলুদ ট্যাক্সি ক্যাব নিয়ে।

আমি বললাম, কি ব্যাপার? ভাড়া করা ট্যাক্সি কেন? তাঁরা আমতা আমতা করে বলল, তাঁদের গাড়িতে একটু সমস্যা হয়েছে। আমার মন একটু খুতখুত করতে লাগল। সব ঝেড়ে ফেলে গাড়িতে চড়লাম। পথে উত্তরায় এক ক্লিনিক থেকে ডায়াথার্মি নিল।

গাজীপুর চৌরাস্তা যেতেই রাত ৯টা বাজল। আর কতদূর যেতে হবে? মাওনা চৌরাস্তায় গিয়ে মেইন রোড ছেড়ে আচমকা গাড়ি চলতে লাগল ডান দিকের ছোট এক রাস্তা দিয়ে।

গ্রামের পথে নেমেছে গভীর নিশুতি। চারদিকে ঝিঝির ডাক আর দূরে জনশূন্য প্রান্তরের পর প্রান্তর। কোন অজানায় চলছে আমাদের গাড়ি? রাস্তায় অন্য কোন গাড়ি নেই বললেই চলে।

আমি নিঃসন্দেহ হয়ে গেলাম, আমাদের অপহরণ করা হয়েছে। অতি লোভে তাতী নষ্ট, ওটির জন্য সার্জন ভ্রষ্ট। ফিসফিস করে অ্যানেস্থেটিস্ট বন্ধুকে আমার আশঙ্কার কথা জানালাম। সে চোখ বড় বড় করে বলল, এখন কি হবে?

মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। আমরা যে তাঁদের পরিকল্পনা বুঝে ফেলেছি, এটা ওদের কোনভাবেই জানতে দেয়া যাবে না। পথে কোন অজুহাতে নেমেই দুজন দুদিকে দৌড় দিতে হবে। তারপর অন্ধকারে হাওয়া। এরপর? এই অন্ধকারে যাবটা কোথায়? চোর ভেবে গ্রামের মানুষ যদি উত্তম-মধ্যম দিয়ে বসে? ওরে বাবা! না, পথে কোন বাজারে নেমে পড়তে হবে। তারপর বাজারের লোকদের বিষয়টা খুলে বললে একটা ব্যবস্থা হবে বোধহয়।

আমি কাশি দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, সামনে কি কোন বাজার আছে?

-কেন, স্যার।

-একটু মাইনাস করে হালকা হওয়া লাগত। তাছাড়া রাত তো প্রায় এগারটা বাজে কিছু খাওয়া প্রয়োজন।

-স্যার, সামনেই শ্রীপুর বাজার। তবে স্যার আপনাদের জন্য মোরগ-পোলাও রান্না করতে বলেছি। রান্না শেষ হল কিনা এখনই খোঁজ নিচ্ছি, স্যার। আমি মনে মনে বললাম, মোরগ-পোলাও লাগবো না, জান বাঁচলেই খুশি।

শ্রীপুর বাজারের কথা শুনে মনটা একটু আশার আলো দেখতে পেয়েছিল, কিন্তু গিয়ে হতাশই হলাম, একটা উপজেলা অথচ এই রাতেই প্রায় সব দোকান ঝাপি দিয়ে বন্ধ। তাঁদেরকে একটু পাশ কাটিয়ে পাশের উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ঢুকে পড়লাম। সেখানে একজন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের দেখা পেয়ে সবকিছু খুলে বললাম। সে বলল, স্যার, আপনারা বাসার ঠিকানা দিয়ে যান, যদি আপনারা ফেরত না আসেন আমি খবর পাঠাবো, তবে তাঁদেরকে আমি চিনি মনে হচ্ছে। মনে মনে বললাম, আমরাই যদি ফেরত না আসি, তাহলে খবর দিয়ে কি হবে?

যাক, আল্লাহর উপর ভরসা করে আবার গাড়িতে উঠে বসলাম। রাত আরো গভীর হচ্ছে। রাস্তার চারপাশে একদমই অজপাড়াগাঁ। অবশেষে বরমী এসে গেল। এসেই স্তম্ভিত হয়ে পড়লাম। হাজার হাজার লোক জমে গেছে। প্যান্ডেলের মত করা হয়েছে। মাইকে ঘোষণা হচ্ছে, আমরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে এইমাত্র ঢাকা থেকে বিশিষ্ট সার্জন ডা. . .আমাদের মাঝে এসে উপস্থিত হয়েছেন। ওই ক্লিনিকেই অনেকদিন অপারেশন করেছিলাম।

গল্পের ফাঁকে ফাঁকে মাঝরাতে কখন অপারেশন শেষ হয়ে গেল টেরই পেলাম না। অপারেশনটাও বেশ চমৎকার হলো। 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : গল্প
প্রস্তাবিত স্বাস্থ্য নীতিমালা সংশোধনের দাবি

টেস্ট রিপোর্টে স্বাক্ষর প্রদান অন্তর্ভুক্তি চান বায়োকেমিস্টরা

বিভিন্ন ব্লকের সামনে নতুন ব্যানার

বিএসএমএমইউর নাম ‘বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’

প্রস্তাবিত স্বাস্থ্য নীতিমালা সংশোধনের দাবি

টেস্ট রিপোর্টে স্বাক্ষর প্রদান অন্তর্ভুক্তি চান বায়োকেমিস্টরা

বিভিন্ন ব্লকের সামনে নতুন ব্যানার

বিএসএমএমইউর নাম ‘বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’

বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালনে নানা কর্মসূচি

দেশে প্রতি লাখে ক্যান্সার আক্রান্ত ১০৬, বিএসএমএমইউর গবেষণা

  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত