ডা. আশরাফ জুয়েল

ডা. আশরাফ জুয়েল

চিকিৎসক ও কথাসাহিত্যিক,
কনসালটেন্ট, আইসিইউ ও ইমার্জেন্সি, বিআরবি হাসপাতাল।


২৩ জুন, ২০২৩ ০৮:৫১ পিএম

শ'খানেক মানুষের কেউ তেড়ে আসেনি

শ'খানেক মানুষের কেউ তেড়ে আসেনি
গুলশানের আজাদ মসজিদ। (ছবি সংগৃহীত)

আজ দারুণ একটা ঘটনা ঘটলো। সম্ভবত চিকিৎসক জীবনে এমন ঘটনা আমার জীবনে আর কোনোদিন ঘটেনি বা ঘটবে না।

ছেলেকে নিয়ে গুলশান-২ এর আজাদ জামে মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছি। নামাজ শেষে বের হবো, এমন সময় দেখি মসজিদের করিডোরে বেশ বড়সড় একটা জটলা। চেয়ারে একজন বয়স্ক মানুষ বসে আছেন। তাঁর মাথা নীচের দিকে ঝুলে বুকের সাথে লেগে যাচ্ছে। তিনি নিজেকে ধরে রাখতে পারছেন না।

আশপাশে অনেকেই তাকে জিজ্ঞেস করছেন, কী হয়েছে?

আমিও দাঁড়ালাম। কথা বলার চেষ্টা করলাম। তিনি একটা-দুইটা কথা বলছেন। আবার মাথা নিচের দিকে ঝুলে যাচ্ছে তাঁর। পুরোপুরি জ্ঞান নেই। গায়ে হাত দিয়ে দেখি তিনি ঘেঁমে একাকার। 

আশপাশের মানুষজনকে নিজের চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে পালসে হাত দিয়ে দেখি পালস একদম ফিবল, ইনফ্যাক্ট আমি রেডিয়াল পালস ঠিক মতো ফিল করতে পারছিলাম না। তিনি ড্রাইভারের সাথে মসজিদে গিয়েছিলেন। ড্রাইভারকে পাওয়া গেলে তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাবার পরামর্শ দিলাম।

কথা বলতে বলতেই তিনি প্রায় পুরো অজ্ঞান হয়ে গেলে তাঁকে ধরাধরি করে মসজিদের ফ্লোরে শুইয়ে দেই, ক্যারোটিডে হাত দিয়ে দেখি এবসেন্ট। সিপিআর দেবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি, ঠিক এমন সময় একজন ইয়াং ছেলে এসে বললো, স্যার আমি আইসিইউ-তে কাজ করি, আমি চেস্ট কম্প্রেশন দিচ্ছি। মাথার কাছে গিয়ে মাউথ টু মাউথ ব্রেথ দিতে আরম্ভ করলাম। ছেলেটি গুড কোয়ালিটি চেস্ট কম্প্রেশন দিচ্ছে। বিএলএস গাইডলাইন অনুযায়ী, সিপিআর দেয়ার প্রায় ২.৩০ মিনিটের মধ্যে ক্যারোটিড ফিরে এলো।

আশপাশে তখন অনেক মানুষ। তীব্র উত্তেজনা নিয়ে আমাদের দেখছে। বারবার ক্যারোটিড চেক করে দেখলাম, রিদম নরমাল। তাঁকে তার গাড়িতে তুলে দিয়ে কাছাকাছি ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যেতে বললাম।

আমি আর ছেলে বাসায় ফিরে এলাম। বাসায় এসে ইউনাইটেড হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, এমন একজন রোগী গিয়েছে কি না। তারা জানালো, এমন একজন রোগী তাদের কাছে গিয়েছে, রোগী স্ট্যাবল এবং তিনিও প্যাথ্যালমোলোজিস্ট। আমার খুব ভালো লাগলো। নিজের প্রফেশনের একজনের পাশে এভাবে দাঁড়াতে পেরে।

শ'খানেক মানুষের কেউ আমাদের দিকে তেড়ে আসেনি, ভিডিও টিডিও করেছে কি-না জানি না। সবাই খুব সাপোর্টিভ ছিল।

বাসায় এসেই ছেলে তার মাকে পুরো ঘটনা জানালো। বাবাকে এভাবে একজনের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করতে দেখে সে আপ্লুত। এতো দিন পর সে ইচ্ছা প্রকাশ করলো, সেও বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায়!

এসএস 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত