থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত চিকিৎসক নাজিফার গল্প

মেডিভয়েস রিপোর্ট: নাজিফা নিজেকে জানতেন ক্যান্সারের রোগী হিসেবে। পরবর্তীতে জানা যায় ক্যান্সার নয়, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। চার বছর বয়স থেকে এ রোগে ভুগছেন তিনি। ফলে সমাজে তাকে নানা বিড়ম্বানার শিকার হতে হয়েছে, তবে সর্বদা পাশে ছিলো পরিবারের লোকজন। তাই সমাজের মানুষের বাঁকা চোখ উপেক্ষা করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আজকে তিনি চিকিৎসক হয়েছেন।
হতাশ না হয়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়েছেন আপন শক্তিতে। পরিবারের সমর্থন, নিজের প্রচেষ্টা ও সঠিক চিকিৎসার কারণে সফল হয়েছেন ডা. নাজিফা। বর্তমানে তিনি চিফ মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে। তার জন্ম চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায়।
চট্টগ্রামের ইউএসটিসি মেডিকেল কলেজ থেকে ২০১১ সালে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন নাজিফা। তিনি বলেন, ‘রোগী হয়েও পড়াশোনা করতে আমার খুব একটা সমস্যা হয়নি। অন্যদের চেয়ে শরীর একটু বেশি দূর্বল থাকলেও সবকিছুতে সুস্থ মানুষের মত অংশ নিয়েছি। কিন্তু আমি খেয়াল করেছি, আমাদের মতো থ্যালাসেমিয়া রোগীদের মেনে নিতে সমাজের হয়তো একটু কষ্ট হয়। ছোটবেলায় শুনতাম এটা নাকি ক্যান্সার, পরে একটু বড় হয়ে লেখাপড়া করে জানলাম এমন কিছু নয়। এখনো আমাকে তিন মাস পর পর রক্ত নিতে হয়, পাশাপাশি আয়রন কমানোর ওষুধ খেতে হয়।’
চলার পথে পরিবারকে সবসময় পাশে পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিবার থেকে সবসময় অনেক সাপোর্টে করেছেন। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পরও আমাকে চিকিৎসক হতে উৎসাহ দিয়েছেন। তবে আমার পরিবার যত সামনে এগিয়েছেন, সমাজ ততই পিছনে টেনে ধরেছেন। আমার মনে হয় এসব বিষয়ে সমাজের মানুষের মন মানসিকতা আরো উদার হওয়া দরকার।’
ডা. নাজিফা বলেন, ‘মানুষের কটু কথা উপেক্ষা করে সবসময়ই লক্ষ্যে অটুট ছিলাম। ২০০৫-০৬ সেশনে চট্টগ্রামের ইউএসটিসি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হই। তখনও মানুষ আমার পরিবারকে বুঝাতো, আমার পেছনে টাকা নষ্ট করে কিছু হবে না। ২০১১ সালে সফলতার সাথে এমবিবিএস পাস করি। এখন চান্দগাঁও ডায়াবেটিক সেন্টারের চিফ মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করছি।’
থ্যালাসেমিয়া আকান্তদের সু-চিকিৎসার জন্য দেশের প্রতি বিভাগে অন্তত একটি করে হাসপাতাল নির্মাণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘থ্যালাসেমিয়া রোগীরা যেন আলাদাভাবে চিকিৎসাসেবা নিতে পারেন, সেজন্য থ্যালাসেমিয়া হাসপাতাল খুবই জরুরি। এজন্য প্রতি বিভাগে অন্তত একটি করে থ্যালাসেমিয়া হাসপাতাল নির্মাণ করা হোক। কারণ, অন্যান্য হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া রোগীরা বেশ অবহেলার শিকার হন।’
এ রোগের ওষুধের দাম অনেক বেশি উল্লেখ করে ডা. নাজিফা বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসা খরচ কমানোর জন্য সরকারে প্রতি বিশেষ অনুরোধ করবো। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের ওষুধের দাম অনেক বেশি, রক্ত নিতে গিয়েও বেশ ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এসব বিষয়ে সরকার গুরুত্বারোপ করলে, বাংলাদেশের লাখ লাখ থ্যালাসেমিয়া রোগী উপকৃত হবে বলে আমি মনে করি।’
থ্যালাসেমিয়া রোগীরাও যেন অন্য স্বাভাবিক মানুষের মতো শিক্ষা গ্রহণ করে সমাজে ভূমিকা রাখতে পারে, সেজন্য সকলকে এগিয়ে আসার আহ্ববান জানান জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়া ডা. নাজিফা ইয়াসমিন।
এসএস/এএইচ