১১ এপ্রিল, ২০২৩ ০১:২৭ পিএম
নানা আয়োজনে দিবস উদযাপন

পারকিনসন্সের অধিক ঝুঁকিতে পুরুষ

পারকিনসন্সের অধিক ঝুঁকিতে পুরুষ
সাধারণত হাতের কাঁপুনির মাধ্যমে এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ পায়। ক্রমান্বয়ে তা বাড়তে থাকে।

মেডিভয়েস রিপোর্ট: পারকিনসন্স একটি নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজিজ বা মস্তিষ্কের ক্ষয় রোগ। সাধারণত বার্ধক্যজনিত রোগ ধরা হলেও পারকিনসন্স নামের এই মস্তিষ্কের কার্যকারিতা–সম্পর্কিত রোগটি বিভিন্ন বয়সের মানুষের হতে পারে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ষাটোর্ধ্ব মানুষেরই এ রোগ হয়, পুরুষের ক্ষেত্রে পারকিনসন্সে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অন্তত ৫০ শতাংশ বেশি। পৃথিবীর অন্তত ১০ মিলিয়ন মানুষ এই পারকিনসন্স রোগে ভুগছে। আমাদের দেশেও বহু বয়োবৃদ্ধ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত, কিন্তু সচেতনতার অভাবে ও পারকিনসন্স রোগ সম্পর্কে না জানার কারণে বহু রোগী শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।

বিরল এ রোগের বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সুমন রানা মেডিভয়েসকে জানান, পারকিনসন্স আসলে একটি মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত রোগ। সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের এই রোগ হয়ে থাকে এবং এর লক্ষণ খুব ধীরে ধীরে কয়েক মাস বা কয়েক বছর ধরে প্রকাশিত হয়। মস্তিষ্কের এই ক্ষয়ের কারণে ডোপামিন ধরনের নিউরোট্রান্সমিটারের অভাব হলেই এই রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হয়। এ রোগের লক্ষণ শুরু হয় ট্রেমর বা কম্পন দিয়ে। দেহের একদিকে, যেমন হাত–পা কাঁপে এমনটা হয়ে থাকে। মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়, যাকে রিজিডিটি বলা হয়। এরপরই দেখা দেয় ব্রেডিকাইনেশিয়া বা হাঁটার গতি অত্যন্ত কমে যাওয়া। কথা জড়িয়ে যাওয়া বা ভারসাম্যহীনতাও হতে পারে। ভাবলেশহীন মুখভঙ্গি, নাম সই করতে বা লিখতে সমস্যা, রুচিহীনতা, অনিদ্রা, বিষণ্নতা এই ব্যাপারগুলো অবশ্য প্রকৃত লক্ষণগুলো প্রকাশ পাওয়ার আগেই দেখা দেয়।

মস্তিষ্কের কোষগুলো নষ্ট হতে থাকলেই সাধারণত ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে এ রোগ দেখা দেয়। খুব নির্দিষ্ট করে এখনো কেউ বলতে পারে না এই রোগ কেন হয়। তবে বংশগত ধারাবাহিকতা, দীর্ঘকাল ধরে রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ (সার, কীটনাশক), মস্তিষ্কে জড় পদার্থের কণা জমা হওয়া ইত্যাদি কারণে পারকিনসন্স হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

সাধারণত পশ্চিমা দেশগুলোতে পারকিনসন্স রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হলেও গড় আয়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশেও এখন পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে।

আজ সোমবার (১১ এপ্রিল) বিশ্ব পারকিনসন্স দিবস। পারকিনসন্স রোগের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রতি বছর এই দিনে বিশ্ব পারকিনসন্স দিবস পালন করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় বিশ্বজুড়ে নানা আয়োজনে আজ দিবসটি পালিত হচ্ছে।

১৮১৭ সালে জেমস পারকিনসন ছয় ব্যক্তিকে পরীক্ষা করে এ রোগ সম্পর্কে বর্ণনা দেন। তাই তাঁর নামানুসারে এ রোগের নামকরণ করা হয়েছে।

বিশ্ব জুড়েই বাড়ছে এই রোগের প্রকোপ। ব্রিটেনের প্রতি ৫০০ জনে একজন পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হন। কিন্তু আমাদের দেশে এই ধরনের পরিসংখ্যান না থাকলেও এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কম নয়।

পারকিনসন্স ভালো হয় না বা এ রোগের চিকিৎসা নেই বলে অনেকে মনে করে থাকেন, যা সম্পূর্ণ সত্য নয়। এই রোগের চিকিৎসা রয়েছে। তবে ওষুধের মাধ্যমে তা পুরোপুরি নির্মূল করা যায় না, এটাও সত্য। ওষুধ সেবনের মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব।

কারণ

এ রোগের কারণ সম্পর্কে আজও জানা যায়নি। মস্তিষ্কের সাবসটেনশিয়া নিগ্রা নামক স্থানে ডোপামিনযুক্ত স্নায়ু ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে এ রোগ দেখা দেয়। তবে ধারণা করা হয়, জেনিটিক মিউটেশন বা রূপান্তরের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের টক্সিন ও ভাইরাসের সংক্রমণে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।

সাধারণত বেশি বয়সীরা এ রোগে আক্রান্ত হন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্তের হার বাড়ে। বংশে কারো পারকিনসন্স থাকলে আক্রান্তের হার চার থেকে ছয় গুণ বাড়ে। এ ছাড়া যাঁরা আগাছা ও পোকামাকড় দমনের ওষুধ ছিটানোর কাজে জড়িত থাকেন, তাঁদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেশি বলে একটি গবেষণায় জানা গেছে।

লক্ষণ

অনেক দেরিতে পারকিনসন্স রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়, শুরুতে এতটা বোঝা যায় না। সাধারণত হাতের কাঁপুনির মাধ্যমে এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ পায়। ক্রমান্বয়ে তা বাড়তে থাকে। হাঁটাচলা করার সামনের দিকে ঝুঁকে ছোট ছোট পদক্ষেপে হাঁটতে থাকে এই ধরনের রোগীরা। হাঁটতে গেলে অনেক সময় শরীরের সঙ্গে হাত লেগে থাকে। হঠাৎ করে ঘুরতে গেলে ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়, যেমন: বাহু বাঁকাতে গেলে অনেক বেগ পেতে হয়। গলার স্বর ভারী হয়ে যায় এবং কথা বলতে গেলে তা জড়িয়ে যায়।

চিকিৎসা

পারকিনসন্স রোগের কোনো প্রতিষেধক নেই। তবে এই রোগের লক্ষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু ওষুধ সেবন করতে হয়। লেভোডোপা ও কার্বিডোপা ওষুধ সেবনে লক্ষণগুলো অনেকাংশে কমে যায়। এখন পর্যন্ত পারকিনসন্স রোগের এটাই সেরা ওষুধ। এ ছাড়া এই রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্রোমোক্রিপটিন, সেলেজিলিন, এমানটিডিন, অ্যান্টিকলিনার্জিক ওষুধ ব্যবহার করা হয় এবং সার্জারি করা যায়। তবে আমাদের দেশে তা হয় না বললেই চলে।

এ রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয় না। তাই এই রোগে আক্রান্তদের ওষুধ সেবনের পাশাপাশি জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন করা জরুরি। পারকিনসন্স রোগে আক্রান্তদের পুষ্টিকর সুষম খাবার খেতে হবে। প্রতিদিনের খাবারে শাকসবজি, ফলমূল থাকতে হবে। রোগটি কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, তা নিয়ে অনেক গবেষণা হলেও ভালো ফল পাওয়া যায়নি। তবে গবেষকরা বলেছেন, কফিজাতীয় তরল পান করলে এ রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

এএইচ

 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : বিশ্ব পারকিনসন্স দিবস
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
করোনা ছড়ায় উপসর্গহীন ব্যক্তিও
একদিনেই অবস্থান বদল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার

করোনা ছড়ায় উপসর্গহীন ব্যক্তিও