২৪ অগাস্ট, ২০২২ ১০:১৩ পিএম

রাত ১২টার পর ফার্মেসি বন্ধ, অসাধু দোকানিদের দৌরাত্ম বাড়ার শঙ্কা

রাত ১২টার পর ফার্মেসি বন্ধ, অসাধু দোকানিদের দৌরাত্ম বাড়ার শঙ্কা
চিকিৎসকদের দাবি, রাত ১২টা আর দুইটায় ওষুধ দোকান বন্ধ হয়ে গেলে দুর্নীতিগ্রস্ত ফার্মেসির দোকানদাররা ৫ টাকার ওষুধ ৫০ টাকায় বিক্রি করবে। এতে রোগীদের সীমাহীন ক্ষতি হবে।

সাখাওয়াত হোসাইন: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে রাত ১২টার পর নগরে ওষুধের দোকান বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত ওষুধের দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে রাত দুইটায়। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে বলে সোমবার (২২ আগস্ট) জারি করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। 

এ আদেশ কার্যকর হলে দুর্ঘটনা ও হৃদরোগসহ ইর্মাজেন্সি রোগী ও তাদের স্বজনরা ভোগান্তির শিকার হবেন বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি, জনস্বার্থে ২৪ ঘণ্টা ফার্মেসি বা ওষুধের দোকান খোলা রাখার অনুমতি দিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধ হলো জরুরি জিনিস। এটা যেকোনো সময় যে কারোরই লাগতে পারে। হাসপাতাল সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে। রাত ১২টার পর বাইরের ওষুধের দোকান আর দুইটার পর হাসপাতাল সংলগ্ন দোকান বন্ধ হয়ে গেলে সড়ক দুর্ঘটনাসহ ইমার্জেন্সি রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। সেইসাথে বেড়ে যাবে অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা।  

কিছু দোকান খোলা রাখার দাবি

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির মেডিভয়েসকে বলেন, রাত দুইটার পর সব ধরনের ওষুধের দোকান বন্ধ থাকবে। একজন রাত দুইটার পর হার্ট অ্যাটাক করলো, কিছু ওষুধের দোকান খোলা রাখার অনুমতি না দেন, তাহলে মানুষ ওষুধ না পেয়ে মরবে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল, ঢাকা মেডিকেল, পঙ্গু হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের কিছু দোকান অবশ্যই খোলা রাখা উচিত। একজন চিকিৎসক অপারেশন করবেন, জরুরি ওষুধ প্রয়োজন বা ব্লাড দরকার, তখন কি হবে? আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এ সিদ্ধান্ত সঠিক নয়।

বিকল্প ব্যবস্থার পরামর্শ 

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া মেডিভয়েসকে  বলেন, ইর্মাজেন্সি রোগীদের ওষুধ আমাদের হাসপাতালের স্টোরে সাধারণত থাকে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ধরেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব  ফার্মেসি আছে, ওষুধ স্টোরও আছে। আইসিইউসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকে ইর্মাজেন্সি রোগীদের ব্যাকআপ দেওয়ার জন্য। এটা শুধু মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য। রাত দুইটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত। এতে খুব একটা ক্ষতি হবে বলে মনে হয় না। এটা হলে আগাম আরও স্টোর করে রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সরকার একটি ঘোষণা দিয়েছে। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইর্মাজেন্সি রোগীদের ওষুধের ব্যবস্থা করে রাখবে, তাহলে কোনো সমস্যা হবে না। হঠাৎ সব কিছু বন্ধ করে দিলে সমস্যা হবে। আর চিকিৎসকরা স্বাভাবিকভাবেই জানেন, কোন সময় রোগীদের কোন ওষুধ লাগবে, কোন অপারেশন হবে, তার জন্য কোন ওষুধপথ্য প্রয়োজন। এজন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে বা হাসপাতালের স্টোর থেকে ওষুধ ব্যবহার করলে, পরে ওষুধ রিপ্লেস করে দিবে। এ ধরনের একটা বিকল্প ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। এতে খুব একটা সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।

খাবারের দোকানও খোলা রাখার পরামর্শ

জানতে চাইলে চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেস্পন্সিবিলিটিজের (এফডিএসআর) উপদেষ্টা ডা. আব্দুন নূর তুষার মেডিভয়েসকে বলেন, এটি হাস্যকর ও নির্বুদ্ধিতা থেকে আসা সিদ্ধান্ত। হাসপাতালের সাথে ওষুধের দোকান বন্ধ করে দিলে রাতের বেলা সড়ক দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস, আত্মহত্যা, আজমা ও হার্ট অ্যাটার্কের রোগীগুলোর চিকিৎসা কিভাবে হবে? এসব রোগীদের অনেক ওষুধ বাহির থেকে কিনতে হয়। রাত ১২টার পর বাহিরের ওষুধের দোকান আর রাত দুইটায় হাসপাতালের ভিতরের দোকান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। হাসপাতালে কোনো একটা দোকান থাকলে এটি একটি ঘর মাত্র। পুরো হাসপাতাল খোলা থাকবে আর শুধু ওষুধের দোকান বন্ধ থাকবে, এটি ভুল সিদ্ধান্ত।

তিনি আরও বলেন, শুধু ওষুধের দোকান খোলা নয়, বরং হাসপাতাল সংলগ্ন খাবারের দোকানগুলোও খোলা রাখা উচিত। কারণ রোগীর সাথে অনেক স্বজন আসেন, রাতে তারা খাবার কোথায় পাবেন? অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার থাকেন। ড্রাইভাররা কোথায় খাবেন? এগুলো নির্বুদ্ধিতার সিদ্ধান্ত। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে ২৪ ঘণ্টা ওষুধের দোকান খোলা থাকে এবং ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার আলাদা দোকানও থাকে।

‘হাসপাতালের আশপাশে বা কাছাকাছি একটা-দুইটা দোকান আলাদাভাবে ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। উন্নত দেশেও এমন। আর ঢাকা শহরে ১০০টা দোকান থাকলে ২৪ ঘণ্টা ১০টা বা ১৫টা দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। সারা দুনিয়ায় এমন। আমাদের দেশেও কয়েকটা ফার্মেসি আছে, যারা ২৪ ঘণ্টা দোকান খোলা রাখে। যেমন- লাজ ফার্মা, তামান্না ফার্মেসি। এখন তারাও বাধ্য হয়ে দোকানও বন্ধ রাখবে। এসব সিদ্ধান্ত সঠিক নয়’, যোগ করেন এ মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।

৫ টাকার ওষুধ হবে ৫০ টাকা?

দুর্নীতিগ্রস্ত ওষুধ দোকানদারদের তৎপরতার বেড়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে চিকিৎসকদের অন্যতম সংগঠন বাংলাদেশ ডক্টরস’ ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) প্রধান সমন্বয়ক ডা. নিরুপম দাশ বলেন, এটি হাস্যকর সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ইর্মাজেন্সি রোগীরা ওষুধ নিবে কোথা থেকে? রাত ১২টা আর দুইটায় ওষুধ দোকান বন্ধ হয়ে গেলে দুর্নীতিগ্রস্ত ফার্মেসির দোকানদাররা ৫ টাকার ওষুধ ৫০ টাকায় বিক্রি করবে। এতে রোগীদের সীমাহীন ক্ষতি হবে। হাসপাতাল ও ওষুধের দোকান কখনও বন্ধ হতে পারে না। ওষুধের দোকান সব সময় খোলা রাখা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, বেশির ভাগ রোগী রেফার হয়ে রাতে ঢাকায় আসে। চিকিৎসকরা রাতে ওষুধ লিখে, তখন রোগীরা তো ওষুধ পাবে না। সবমিলিয়ে এটি একটি হযবরল সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।

প্রসঙ্গত, দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার, যা বাস্তবায়ন জুলাই মাস থেকে শুরু হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার সব দোকানপাট, শপিংমল, মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার, ব্যবসায়িক বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখে যাবে। খাবারের দোকান বা রেস্তোরাঁর রান্নাঘর বন্ধ করতে হবে রাত ১০টার মধ্যে। আর খাবার সরবরাহ চলবে রাত ১১টা পর্যন্ত। এ ছাড়া সিনেমা হলসহ চিত্তবিনোদনমূলক প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা বন্ধ হবে রাত ১১টার মধ্যে।

এমইউ

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : ওষুধের দোকান
‘ছেলেরা কেন পিছিয়ে, কারণ অনুসন্ধান করুন’

অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের গালমন্দ নয়: প্রধানমন্ত্রী

‘ছেলেরা কেন পিছিয়ে, কারণ অনুসন্ধান করুন’

অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের গালমন্দ নয়: প্রধানমন্ত্রী

  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক