০৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ০৯:৫৩ এএম

নতুন মেডিকেল কলেজ হচ্ছে ঝালকাঠিতে

নতুন মেডিকেল কলেজ হচ্ছে ঝালকাঠিতে
স্থানীয় এলাকাবাসী বলছেন, ২৫০ শয্যা হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ চালু হলে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মুক্ত হবে। এছাড়াও বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ল্যাব ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন আশা নিয়ে। ঝালকাঠিতে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারিত হলে বেকারত্বের অভিশাপ দূর হয়ে কর্মক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হতে পারবে অসংখ্য মানুষ।

মেডিভয়েস রিপোর্ট: ঝালকাঠি জেলায় নতুন মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। ঝালকাঠি গণপূর্ত বিভাগ ইতোমধ্যে স্থান নির্বাচন ও ভবনের পরিকল্পনাপত্রে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী অনুস্বাক্ষর করেছেন। সোমবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) ঝালকাঠি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল আলম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্রকৌশলী ফয়সাল আলম বলেন, ঝালকাঠি-২ (সদর-নলছিটি) আসনের এমপি ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমুও পরিকল্পনাপত্রে ডিও লেটার হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন। পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য পরিকল্পনাপত্রটি কেন্দ্রীয় পূর্ত অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৮৩ সালে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হলেও ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হয় ১৯৮৪ সালে। ২০০৩ সালে ১০০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমতিতে ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই চলে সার্বিক কার্যক্রম। ২০০৩ সালে ১০০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমতি পেলেও ২০২২ সালে সমসংখ্যক জনবল নিয়োগের অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

২০১৮ সালের ১১ আগস্ট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের বহুতল ভবনের উদ্বোধন করা হয়েছে। ভবনটি নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

গণপূর্ত কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১০০ শয্যা বিশিষ্ট ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের পেছনের ডোবাসহ যে জমি রয়েছে সেখানে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য ১২তলা ফাউন্ডেশন নিয়ে ভবন তৈরিতে জমির প্রয়োজন এক একর ৪০ শতাংশ জমি। বাকি জমি ভবনের মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারবে। জেলা ভবন নির্মাণ কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন শেষে স্থান নির্বাচন করা হয়েছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী বলছেন, ২৫০ শয্যা হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ চালু হলে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মুক্ত হবে। এছাড়াও বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ল্যাব ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন আশা নিয়ে। ঝালকাঠিতে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারিত হলে বেকারত্বের অভিশাপ দূর হয়ে কর্মক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হতে পারবে অসংখ্য মানুষ।

 

দেশের মেডিকেল শিক্ষা

বর্তমানে দেশে ৩৮টি সরকারি ও ৭২টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি অনেক মেডিকেলের পড়ার মান নিয়েও রয়েছে ব্যাপক প্রশ্ন। এ পরিস্থিতিতে নতুন মেডিকেল প্রতিষ্ঠা না করে দেশের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে মেডিকেল শিক্ষার মানোন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ মেডিভয়েসকে বলেন, ‘মেডিকেল কলেজে ভালো মানের শিক্ষক, পর্যাপ্ত অবকাঠামো এবং যন্ত্রপাতি থাকা জরুরি। যদি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার পর্যাপ্ত পরিবেশ না থাকে, তবে ব্যাঙের ছাতার মতো কলেজ করে লাভ নেই। প্রতিষ্ঠান যদি মানসম্মত হয়, তবে ভালো চিকিৎসক তৈরি হয়। এলাকার মানুষ ভালো সেবা পায়, সর্বোপরি দেশ উপকৃত হয়। মেডিকেল কলেজে ভালো চিকিৎসক তৈরির যথাযথ সুযোগ থাকতে হবে। তা না হলে এই চিকিৎসক দিয়ে লাভ নেই। এ বিষয়ে সকলের নজর দেওয়া উচিত।’

‘মেডিকেল কলেজ বিশেষত সরকারি মেডিকেলগুলোতে ভালো চিকিৎসক তৈরি করতে হবে। তা না হলে চিকিৎসক সমাজ গালি খাবে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। শুধুমাত্র বানানোর জন্য মেডিকেল না বানিয়ে মানের দিকে নজর রাখতে হবে’, যোগ করেন অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ।

স্বাধীনতা পুরস্কারজয়ী অধ্যাপক ডা. টি এ চৌধুরী বলেন, ‘সময় একটু বেশি লাগলেও আমরা চাই দেশে কেবলমাত্র এমন চিকিৎসক তৈরি হোক যারা যে কোনো মাপকাঠিতেই অন্যান্য দেশের চিকিৎসকের চেয়ে নিম্নমানের হবেন না। দেশে গত কয়েক দশকে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে অনেক মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেগুলোর অধিকাংশই মুনাফাভিত্তিক, যাদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো এই মেডিক্যাল কলেজগুলো আপন করে এর মাধ্যমে টাকা রোজগার করা, সমাজের উন্নতি করা নয়। অনেক মেডিকেল কলেজে সত্যিকারের চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নাই, শিক্ষক নাই, রোগী নাই। অথচ পাসের হার ৮০-৯০%। বেশ কিছু মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীকে মেডিকেল শিক্ষা দেওয়ার নাম করে যদি আমরা নিম্নমানের চিকিৎসক তৈরি করি এটা কি ঠিক হবে? প্রশ্ন উঠতে পারে, এই সমস্ত মেডিকেল কলেজ থেকেও শেষ পর্যন্ত ভাল বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বের হয়েছে। সেটা হয়েছে ব্যক্তি বিশেষের নিজস্ব প্রচেষ্টায়। বেশ কিছু মেডিকেল কলেজ এ শিক্ষার মান এতটাই নিচু যে সেখান থেকে পাস করা ডাক্তারদের যোগ্যতা নিয়ে আমাদের নিজেদের মনেই সন্দেহের উদ্রেক হচ্ছে।’

তাই নতুন করে প্রতিষ্ঠা না করে বিদ্যমান কলেজগুলোর মানোন্নয়নের বিষয়ে পরামর্শ দেন বাংলাদেশের গাইনোকোলজি এন্ড অবস্টেটিক্স বিষয়ের কিংবদন্তী অধ্যাপক ডা. টি এ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আপাতত নতুন মেডিকেল কলেজ না করে যেগুলো আছে সেগুলো মানসম্মত করার চেষ্টা করা উচিত। আমার মতে, দেশে এখন যে শতাধিক মেডিকেল কলেজ আছে তা আমাদের চিকিৎসকের প্রয়োজন আপাতত মিটাতে সক্ষম।’

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
প্রতিটি হাসপাতালের লিফট সেফটি পরীক্ষার নির্দেশ
নিশ্চিত করতে হবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ

প্রতিটি হাসপাতালের লিফট সেফটি পরীক্ষার নির্দেশ

নিশ্চিত করতে হবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ

প্রতিটি হাসপাতালের লিফট সেফটি পরীক্ষার নির্দেশ

  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক