ডা. ছাবিকুন নাহার

ডা. ছাবিকুন নাহার

অবসটেট্রিশিয়ান অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্ট 
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।


১০ জানুয়ারী, ২০২২ ০৯:৪৩ এএম

চিকিৎসকদের পোস্ট গ্রাজুয়েশনের কষ্ট ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবে না

চিকিৎসকদের পোস্ট গ্রাজুয়েশনের কষ্ট ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবে না
চিকিৎসকদের পোস্ট গ্রাজুয়েশন এমনি এমনি হয় না। নারী চিকিৎসকদের এ পথচলাটা তো আরো কঠিন। প্রতীকী ছবি

খুব ভোরে উঠে দৈনন্দিন কাজকর্ম কিছুটা গুছিয়ে একটু আগে আগে অফিসের উদ্দেশে রওনা দিতাম। প্ল্যান অফিসওয়ার্ক শুরুর আগে একটু লাইব্রেরিতে ঢুঁ দেওয়া, সারাদিনের পড়াশোনার একটা আউটলাইন করা। আমার সাথে সব সময় এক্সট্রা একটা ব্যাগ থাকতো, ব্যাগের ভেতর বই। হাসপাতালে তো বটেই, বেড়াতে, ইভেন দাওয়াতে গেলেও। শেষের দিকে এই ব্যাগটা টানতে খুব কষ্ট হতো। মনে হতো আমি আর পারছি না। অফিস শেষে লাইব্রেরি। টেবিলে মাথা রেখে মিনিট পনেরো ঘুমানো। আমার দিনে ঘুমানোর অভ্যেস নেই, তবুও চোখ বন্ধ করে থাকতাম। বন্ধ চোখের পাতায় ভর করতো একদিন আমিও... 

পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে নামাজ, খাওয়া-দাওয়া ও আড্ডাবাজি চলতো সমান তালে। কখনো কখনো দলবেঁধে খেতে চলে যেতাম। কখনো কখনো অনলাইন অর্ডার। আর মান্নান ভাইয়ের সিগন্যাচার ডিস ডাল, ভাত সাথে ডিমের বাহারি আইটেম তো ছিলই। ডিম সিদ্ধ, ডিম পোঁচ, ডিম ভুনা, ডিমভাজা ও ডিমবন! কারো একটু শুঁটকি ভর্তা, কারো বাসার পায়েস, কারো একটু মাংস খিচুড়ি ও কারো ফ্রুট বক্সে পেয়ারা মাখানো সব মিলেমিশে খাওয়া। এ এক অন্য জীবন, অন্য আলোর খেলা। সব গল্পই শেষ হতো একটা লাইনে যেয়ে। এই জার্নি কবে শেষ হবে? কবে শেষ আগুনের দিন?

পড়াশোনা চলতো রাত দশ-এগারোটা, কখনো কখনো তারও বেশি। ডা. আবুল কালাম আজাদ (স্বামী) আনতে যেতেন। প্রথম প্রথম রিকশায়। শেষ কয়টা বছর রোজ রোজ সে গাড়ি ড্রাইভ করে নিয়ে আসতো। 

আমার বাচ্চারা অপেক্ষা করতো, কখন মা ফিরবে? অহন নিজেই বাচ্চা, তবুও সে ছোটোকে গোসল করিয়ে, খাইয়ে দিতো। ছোট্ট মিহন ছবি এঁকে এঁকে জমা করে রাখতো, কখন মাকে দেখাবে? তাদের কষ্টটা, স্যাকরিফাইজটা ছিলো অবর্ণনীয়। দিনের পর দিন মাসের পর মাস! সোলমেটস ধন্যবাদ দেবো না। শুধু এইটুকু জেনো, তোমাদের সাপোর্ট ছাড়া আমি আমার স্বপ্নের দিকে এতো সহজে উড়তে পারতাম না।

আমার এফসিপিএস পথ পরিক্রমায় সৃষ্টকর্তার ফুল পাখি আলো বাতাস ছাড়াও অসাধারণ কিছু মানুষও ছিলেন। তারা আমার আত্মার-আত্মীয়। আমি তোমাদের পরম আনন্দ নিয়ে স্মরণ করি। করবো আজীবন। 

পার্টনার ডা. সোহানা সুলতানা, আমি জানি আপনিও এমন একটা লেখা লিখবেন। সেই গল্পে আমি থাকবো। 

চিকিৎসকদের পোস্ট গ্রাজুয়েশন এমনি এমনি হয় না। নারী চিকিৎসকদের এ পথচলাটা তো আরো কঠিন। ঠিক কতোটা  কঠিন, যে এর মধ্য দিয়ে গেছে সে আর তার পরিবারের সদস্যরা ছাড়া কেউ বুঝবে না। বোঝা সম্ভব নয়।

আনন্দের কথা আগুনের দিন শেষ হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। ছবিটা সেই সময়ের তোলা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাইব্রেরিতে। খুব প্রিয় একটা ছবি।
 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত