ডা. ফয়সাল হক

ডা. ফয়সাল হক

ক্লিনিক্যাল এডুকেশন ফেলো অ্যান্ড স্পেশালিস্ট রেজিস্ট্রার, ইউরোলজি;
ওয়াই ভ্যালি এনএইচএস ট্রাস্ট,
যুক্তরাজ্য


১৩ নভেম্বর, ২০২১ ০৭:১৩ পিএম

চিকিৎসকদের বিদেশে চাকরি করতে যাওয়ার সুবিধা-অসুবিধা

চিকিৎসকদের বিদেশে চাকরি করতে যাওয়ার সুবিধা-অসুবিধা
যুক্তরাজ্যে চাকরি করতে কিংবদন্তি হতে পারবেন না, এই ধারণাটিই সে দেশে নেই। প্রতীকী ছবি

আপনি হয়তো যুক্তরাজ্য বা এনএইচএসে জব করতে চান। আমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ফ্রেন্ডলিস্টের একটা বড় অংশ চিকিৎসক বা মেডিকেল শিক্ষার্থী। অনেকেই এ দেশের পদ্ধতি নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করেন এবং বিভিন্ন বিষয় জানতে আগ্রহী। এই পর্যন্ত আমার অভিজ্ঞতার আলোকে যদি একটা লিস্ট করি-

যুক্তরাজ্যের মতো দেশে চিকিৎসক বা সার্জন হিসেবে কাজ করার কিছু ভালো দিক:

১. অধিকাংশ রোগী ভদ্র এবং আচার ব্যবহারে মোটামুটি মার্জিত। রোগীর হাতে অপদস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে।

২. চিকিৎসক ছাড়াও অন্যান্য সহকারী কর্মী পর্যাপ্ত রয়েছেন, সব কাজ চিকিৎসককে করতে হয় না। সবাই সবার দায়িত্বের বিষয়ে জানেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করেন।

৩. সহজলভ্য রক্ত, রেডিওলজিকাল ইনভেস্টিগেশন- একটা জেলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল পর্যন্ত। 

৪. যে কোন কেইস নিয়ে সিনিয়রের সাথে (কনসালটেন্ট বা রেজিস্ট্রার) আলাপ করা যায় সাত-পাঁচ না ভেবেই; ঝাড়ি খাওয়ার, বাজে কথা বলার আশঙ্কা বেশ কম। কেউ বাজে আচরণ করলে তাঁর নামে অভিযোগ করতে পারবেন। এসব বিষয়কে মোটামুটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়।

৫. বেতন মানসম্মত, থেকে-পড়ে খাওয়ার জন্য চলনসই। কিছুদিন যাওয়ার পর গাড়ি আর কয়েক বছর পর বাড়িও কেনার পরিকল্পনা করতে পারবেন। নিজের আয়ে সব কিছু করে জমাও করতে পারবেন।

৬. জীবনযাত্রার মান সব জায়গাতেই ১৯-২০ (কিছু ব্যতিক্রম বাদে)।

৭. চিকিৎসকদের জন্য হেলথ চার্জ দেওয়া লাগে না অর্থাৎ বিনামূল্যে চিকিৎসা।

৮. ছেলে-মেয়ের স্কুল কলেজের খরচ নিয়ে বেশি চিন্তার করার প্রয়োজন পড়বে না।

৯. চাকরি পাওয়া তুলনামূলক সহজ। বর্তমানে আপনি যে কোন স্পেশালিটি নির্বাচন করতে পারবেন (সার্জারি এবং অন্যান্য বেশকিছু স্পেশালিটি বেশ প্রতিযোগিতামূলক। এর অবশ্য অনেক কারণও রয়েছে।

১০. আপনার সাপ্তাহিক কর্ম ঘণ্টা ৪০-৪৮ ঘণ্টা, সাপ্তাহিক দুইদিন ছুটি। বেশি ডিউটি করার প্রয়োজন হলে বা সাপ্তাহিক ছুটিতে ডিউটি থাকলে আপনি তার জন্য অতিরিক্ত সম্মানি পাবেন। এছাড়াও বছরে ২৭ থেকে ৩২ দিন ছুটি পাবেন।

১১. অধিকাংশ স্থানে মুসলিমদের জন্য হালাল খাবার-দাবার পাওয়া যায়।

১২. আমার মতে কাজের পরিবেশ এবং জীবন যাত্রার মান ভালো।

১৩. টানা পাঁচ বছর চাকরি করার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি (আইএলআর) আর তার ১ থেকে ২ বছর পর নাগরিকত্ব পাবেন।

১৪. চাইলে ভালো পার্ট-টাইম চাকরি করার সুযোগও আছে।

সবচেয়ে বড় কথা আমাদের দেশের চিকিৎসকদের জন্য যুক্তরাজ্যে চাকরি করতে আসা এখনও তুলনামূলকভাবে সহজ। খরচ এবং সময় দুটিই বহনযোগ্য। কিন্তু সকলের মনে রাখতে হবে ঘাস সবসময় অন্য দিকে সবুজ হয় না।

কিছু বিষয় মাথায় রাখবেন

১. বাবা-মা, আত্মীয়-পরিজন থেকে দূরে থাকবেন।

২. বাবা-মার জন্য স্থায়ী ভিসা পাওয়া বেশ দুরূহ (প্রায় অসম্ভব বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী), বাবা-মায়ের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ভিসিট ভিসা পাবেন সহজেই, যেখানে তারা বছরে সর্বোচ্চ ছয় মাস থাকতে পারবেন।

৩. শুধুমাত্র চিকিৎসকের আয় দিয়ে অনেক বড়লোক হতে পারবেন না। প্রাইভেট প্রাকটিসের সুযোগ খুব সীমিত। একজন কনসালটেন্টের বেতন তার জুনিয়র এসএইচও’র বেতনের আড়াই থেকে তিনগুণ।

৪. কিংবদন্তি হতে পারবেন না, এই ধারণাটিই এই দেশে নেই।

৫. জুনিয়র থেকে সিনিয়র সবার ক্ষেত্রেই কন্টিনিয়াস স্ক্রুটিনি হবে আপনার কাজের উপর।

৬. ভ্যাটের উচ্চহারে ধীরে ধীরে এদেশে খরচ বাড়ছে। যদিও বেতন চলনসই, তাতে কিছু পশ্চিমা দেশের তুলনায় কম বলা চলে।

৭. আপনাকে সব বিষয়ে ডেডিকেটেড হতে হবে, ফাকিবাজির  জায়গা নেই এদেশে।

৮. এখানে প্রতিটি কাজ নিজেকে করতে হবে। নিজের কাজের ভেতরেই করতে হবে, সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা এ দেশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৯. স্বজন-প্রীতির সুযোগ তেমন নেই, যা করবেন সব নিজের যোগ্যতায়। 

১০. কিছু স্পেশালিটিতে ক্যারিয়ার প্রগ্রেশন নট স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড। 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
‘ছেলেরা কেন পিছিয়ে, কারণ অনুসন্ধান করুন’

অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের গালমন্দ নয়: প্রধানমন্ত্রী

‘ছেলেরা কেন পিছিয়ে, কারণ অনুসন্ধান করুন’

অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের গালমন্দ নয়: প্রধানমন্ত্রী

  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত